নতুন পে-স্কেল অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করবে

 

দেশের ২১ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিভিন্ন পর্যায়ে বেতন বাড়ছে। গ্রেডভেদে মূল বেতন ৯১ থেকে ১০১ শতাংশ বাড়ছে। সর্বোচ্চ ৭৮ হাজার এবং সর্বনিম্ন ৮ হাজার ২৫০ টাকা মূল ধরে সরকারি কর্মচারীদের জন্য অষ্টম বেতন কাঠামো অনুমোদন করেছে সরকার। নতুন এ কাঠামোর মূল বেতন ২০১৫ সালের ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে। আর ভাতা কার্যকর হবে ২০১৬ সালের ১ জুলাই থেকে। সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ বেতন কাঠামো অনুমোদন করা হয়। অষ্টম বেতন কাঠামো অনুমোদনের পাশাপাশি নববর্ষের জন্য বাড়তি একটি বোনাসও ঘোষণা করেছে সরকার। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দুটি উৎসব ভাতার পাশাপাশি এখন থেকে প্রতি বছর বাংলা নববর্ষে মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে বাড়তি একটি ভাতা পাবেন। প্রাসঙ্গিকভাবে বলা প্রয়োজন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন গঠিত পে-কমিশন সর্বোচ্চ ৮৮ হাজার ও সর্বনিম্ন ৮ হাজার ২০০ টাকা বেতন স্কেলের সুপারিশ করেছিলো। সেটাই বহাল থাকল। নতুন পে-স্কেলে সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেল থাকছে না। নতুন পে-স্কেল বাস্তবায়ন হলে ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে বেতন বাবদ সরকারের ২৩ হাজার ৮২৮ কোটি ১৭ লাখ টাকা ব্যয় হবে। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্যও নতুন পে-স্কেল কার্যকর হবে। তবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিষয়টি সরকার পরে বিবেচনা করবে।

বর্তমানে জীবনযাত্রার মান যেখানে গিয়ে পৌঁছেছে তাতে এটা একটা ইতিবাচক পদক্ষেপ। নতুন পে-স্কেল অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করবে। সরকারি কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির কারণে তাদের ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে। ফলে ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন স্তরও এর সুবিধা পাবে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জীবনযাপনে স্বাচ্ছন্দ্য আসবে। কিন্তু যারা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন তারা কি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতায় পেরে উঠবেন? তাদের বেতন-ভাতা তো দ্বিগুণ হচ্ছে না। এর ফলে অর্থনীতিতে গতি আসবে এটা যেমন সত্য, পাশাপাশি অর্থনৈতিক বৈষম্যও বাড়বে। কারণ বাজারে অসম প্রতিযোগিতা শুরু হবে। যাদের ক্রয়ক্ষমতা বেশি তারাই উচ্চমূল্যে পণ্য কিনতে পারবেন। সমাজে অসন্তোষ ও ক্ষোভ দেখা দেবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর ফলে একদিকে যেমন বাড়িভাড়া বেড়ে যাবে, অন্যদিকে সরকারের পক্ষে নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে।

উল্লেখ্য, বর্তমানে নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থায় রয়েছে। পে-স্কেল বাস্তবায়নের সাথে সাথে বাজারের অবস্থা আরো ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাড়ার সাথে সাথে বাজার চিত্র আরো বদলে যাবে। ফলে সাধারণ মানুষ ধীরে ধীরে তাদের ক্রয়ক্ষমতা হারাবে। যারা মধ্যবিত্ত বা নিম্নমধ্যবিত্ত অথবা বিত্তহীন তারা এ উচ্চমূল্যের বাজারে কিভাবে চলবে? একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সবকিছুর ভারসাম্য থাকা উচিত। যদি তা না থাকে তবে ওই রাষ্ট্রকে গণতান্ত্রিক বলা যায় কি? আমাদের রাষ্ট্রের বহু খাতই ভারসাম্যহীন অর্থাৎ নিয়মতান্ত্রিক পথে চলছে না। এই না চলার কারণেই বাজারও বহুদিন থেকে নিয়ন্ত্রণহীন থাকছে। জনগণকে বার বার দুর্ভোগ ও অসহায়ত্বে ফেলে দেয়া কোনো গণতান্ত্রিক সরকারের কাজ নয়। এটা সত্য যে, ৬ বছর পর নতুন পে-স্কেল এসেছে। এ সময়ের মধ্যে সরকারি চাকুরেদের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। তাই ক্রয়ক্ষমতার নিরিখে ও দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির আলোকে বেতন বাড়ানোটা দরকার ছিল। অতীতে দেখা গেছে, পে-স্কেল ঘোষণার সাথে সাথে বাড়িভাড়া ও নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। এবারো তার ব্যত্যয় ঘটবে না। এ পরিস্থিতি সামাল দেয়া সরকারের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়বে। তবে বেতন বৃদ্ধির কারণে যারা অনৈতিক সুবিধা নিতে চেষ্টা করবে, তাদের বিরুদ্ধে সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে। সরকারকে নজর দিতে হবে বাড়িভাড়া ও নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে।