চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ডে নতুন মাত্রা : মৃদু শৈত্যপ্রবাহের পূর্বাভাস
স্টাফ রিপোর্টার: একদিনের হঠাত বিরহের পর শীত ফিরেছে গম্ভীর মুখ নিয়ে। চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরসহ সারাদেশে তীব্র শীতে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। গতকাল চুয়াডাঙ্গাসহ দেশের অধিকাংশ স্থানেই সূর্যের দেখা মেলেনি। তীব্র শীতে শীতজনিত রোগে চুয়াডাঙ্গা জীবননগরে এক শিশুসহ তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হলেও স্থানীয়দের অনেকেই তা মানতে নারাজ। শীতের তীব্রতায় জড়সড় হয়ে অনেকেই বলেছেন, মাপে হেরফের আছে।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলেছেন, তাপমাপা যন্ত্র ব্যারোমিটার ঠিকই আছে। সর্বনিম্ন আর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ব্যবধান হ্রাসের কারণেই তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। চুয়াডাঙ্গায় গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ১৪ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা দেশের সবোর্চ্চ তাপের মধ্যেও সর্বনিম্ন। সর্বোচ্চ আর সর্বনিম্ন তাপের ব্যবধান যখন মাত্র ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তখন শীতে তো কাপনি ধরবেই। শীতের তীব্রতা আজ দিনে কিছুটা কমলেও রাতে বাড়তে পারে আরো। ঢাকা, খুলনাসহ দেশের অধিকাংশ এলাকায় আজও দিনের অধিকাংশ সময় মেঘাচ্ছন্ন থাকতে পারে। মেঘ সরলেও স্বস্তি নেই। আসতে পারে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ।
ঢাকায় গতকাল সর্বোচ্চ ১৬ দশমিক ৬ ও সর্বনিম্ন ১১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। দেশের অধিকাংশ স্থানেই তাপমাত্রার চিত্র প্রায় একই রকম ছিলো। তবে সীতাকুণ্ডে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৫ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। শীতের তীব্রতার মাঝে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া সন্ধ্যার পর থেকে তেমন কেউই ঘর থেকে বের হননি। শীতজনিত কারণে শিশুদের মধ্যে রোগ ছড়াচ্ছে। অপরদিকে শীতের তীব্রতা থেকে স্বস্তি দিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষে শীতবস্ত্র বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। গতকাল ‘শীতার্ত মানুষের পাশে চ্যানেল আই’ এ স্লোগান নিয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলার দৌলাতদিয়াড় গ্রামে দুস্থদের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল রোববার বিকেলে আমার চ্যানেল আই দর্শক ফোরাম কম্বল বিতরণের আয়োজন করে। চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সরদার আল অমিন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে শীতার্ত মানুষের হাতে কম্বল তুলে দেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় আলুকদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আক্তাউর রহমান মুকুল, আমার চ্যানেল আই দর্শক ফোরামের আহ্বায়ক জিল্লুর রহমান, সদস্য সচিব ও জেলা প্রতিনিধি রাজীব হাসান কচি প্রমুখ।
এদিকে তীব্র শীতে অচল চুয়াডাঙ্গার জনজীবন। এ অবস্থায় গতকালও দরিদ্র ছিন্নমূল মানুষের হাতে শীতবস্ত্র তুলে দিয়েছে বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন। পিছিয়ে ছিলো না বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো। গতকাল রোববার বিকেলে রুরাল সোসিও হেল্থ অ্যান্ড ইকোনমি ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের (আরশিডফ)’র উদ্যোগে চুয়াডাঙ্গা সদর, দর্শনা, জীবননগরের বিভিন্ন স্থানের প্রত্যন্ত অঞ্চলে দুস্থ ও শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রুরাল সোসিও হেল্থ অ্যান্ড ইকোনমি ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক এ.কিউ.এম ফিরোজুল হক। উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী সদস্য আলীমুজ্জামান, ফজলুল হক, হাসাদহ ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলামসহ আরও অনেকে।
চুয়াডাঙ্গা আকাঙ্ক্ষা মহিলা উন্নয়ন সংস্থার উদ্যোগে দুস্থ ও প্রতিবন্ধী শীতার্ত শিশুদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পলাশপাড়াস্থ অফিসে সাড়ে ৪শ শিশুর মধ্যে এ শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আকাঙ্খা মহিলা উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক শাহীন সুলতানা মিলি, উপদেষ্টা ফিরোজ খন্দকার, সদস্য সচিব ফাহিদা জ্যোতী, প্রত্যাশা সামাজিক উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক বিল্লাল হোসেন প্রমুখ। এছাড়াও গত ৩ জানুয়ারি আকাঙ্ক্ষা এএমইউএস’র উদ্যোগে দরিদ্র শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়।
জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, গতকাল রোববার ভোর থেকে আকস্মিকভাবে হাঁড় কাঁপানো শীত আবারও জেঁকে বসেছে। শীতের প্রকোপে যবুথবু হয়ে পড়েছে এ উপজেলাবাসী। শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতে অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষ দিনে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। তীব্র ঠাণ্ডায় শিশু ও বৃদ্ধরা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, গতকাল সকাল থেকে শুরু হয়ে দুপুরের মধ্যে ঠাণ্ডাজনিত রোগে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিশু ও বৃদ্ধ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। শনিবার রাতে উপজেলার তেঁতুলিয়া গ্রামের বৃদ্ধা সকিনা বেগম (৯৫) ও ঘুগরী গ্রামের সাবিকুন নাহার (৮০) শীতজনিত রোগে মারা গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। হাঁড় কাঁপানো তীব্র শীতে জীবননগরে আরো একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। রাত আনুমানিক ৯টার দিকে উপজেলার মোক্তারপুর গ্রামের জাহাবক্স মণ্ডল (৭৮) তীব্র শীতের মধ্যে অসুস্থ হয়ে মারা যায় বলে গ্রামবাসী জানিয়েছে।
দামুড়হুদা অফিস জানিয়েছে, সারাদেশের সাথে দামুড়হুদা উপজেলায় কন কনে শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সূর্যের দেখা মেলেনি। এদিকে শীতের কবলে পড়া মানুষজনকে ছুটতে দেখা গেছে গরম কাপড়ের দোকানে। গরম কাপড়ের পশরা সাজিয়ে গতকাল দুপুর থেকেই শুরু করেন দামুড়হুদার হাটে বিক্রি করতে আসা কাপড় ব্যবসায়ীরা।