হরতাল আর অবরোধ নাশকতা এক মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে দেশবাসীর কাঁধে চেপে বসেছে। আর এ আতঙ্কের মধ্যেই এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় বসতে হবে দেশের ১৪ লাখ ৭৯ হাজার ২৬৬ জন শিক্ষার্থীকে। ফেব্রুয়ারির ২ তারিখ থেকে সারাদেশে একযোগে চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। যা আগামী ১৬ মার্চ ব্যবহারিক পরীক্ষার মধ্যদিয়ে সমাপ্ত হবে বলে জানা যায়। বাস্তবতা যে, নির্দলীয় সরকারের অধীনে দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ৫ জানুয়ারি ঢাকায় সমাবেশ করতে না পেরে লাগাতার অবরোধের ডাক দেয়। আর এ কর্মসূচি ঘিরেই দেশব্যাপি চলছে নাশকতা। এতে দেশের প্রতিটি খাতেই স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। এছাড়া উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও নানামুখি আতঙ্কে রয়েছেন দেশের সাধারণ নাগরিক। এ ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থী-অভিভাবক-শিক্ষক উভয়পক্ষই রয়েছেন চরম আতঙ্কে। এ পরিস্থিতিতে সঠিকভাবে পরীক্ষা গ্রহণ নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ও যে শঙ্কার মধ্যে রয়েছে তা সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের মধ্যদিয়ে স্পষ্ট। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী বিএনপি জোটকে হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন ভবিষ্যত প্রজন্মের কথা চিন্তা করেই। শিক্ষামন্ত্রীর এ আহ্বানে আন্দোলনরত রাজনৈতিক জোটের বোধোদয় ঘটাবে কি না, সেটিই এখন বিবেচ্য।
বিগত দু বছরেরও অধিক সময়কাল ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মসূচির কারণে পরীক্ষা প্রদান ও গ্রহণ দুঃসাধ্য হয়ে উঠছে। বছরের শেষে ও নতুন বছরের প্রায় শুরুর দিকে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরীক্ষা ও ভর্তি কার্যক্রম পরিচালিত হয় কিন্তু এ সময় শুষ্ক মরসুম হওয়ার কারণে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোও তাদের আন্দোলন-সংগ্রামের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ফলে দেশের সব শিক্ষার্থীর চরম দুর্ভোগ পোয়াতে হয়। যার নেতিবাচক প্রতিফলন ঘটে তাদের পরীক্ষা ও শিক্ষাজীবনে। এ অবস্থায় শিক্ষার্থী ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রাজনৈতিক কর্মসূচির বাইরে রাখারও দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। রাজনৈতিক দাবি আদায়ে আন্দোলন হতেই পারে, কিন্তু তা যদি দেশের আগামী প্রজন্ম কিংবা দেশের অর্থনীতি ধ্বংস এবং মানুষ হত্যার মধ্যদিয়ে চলতে থাকে তখন তা শুধু হতাশারই জন্ম দিতে থাকে। এ পরিস্থিতি দেশ ও জনগণ কারো জন্যই শুভ হতে পারে না।
এটা সত্য যে, বর্তমান অবরোধ ও হরতাল আরো কতদিন চলতে থাকবে তা জনগণ জানে না। কোনো ইঙ্গিতও লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। এরই মধ্যে পূর্বনির্ধারিত সময় অনুযায়ী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। অথচ অবরোধ-হরতালের যে ভয়াবহ চিত্র তা কিছুতেই অনুকূলে নয়। সঙ্গত কারণেই এ পরিস্থিতির অবসান জরুরি। উভয় রাজনৈতিক দলের মনে রাখা কর্তব্য, দেশ থাকলে, গণতন্ত্র থাকলে, বিভিন্ন দল থাকবে, বিভিন্ন মতও থাকবে। আন্দোলনও থাকবে। আর এতে যেন দেশের কোনো কিছু বিপাকে না পড়ে সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। রাজনীতির কারণে দেশের অন্যান্য বিষয় যেমন- অর্থনীতি, তথা ব্যবসা-বাণিজ্য শিক্ষা-স্বাস্থ্য এসবকে উপেক্ষা করা যাবে না। কোনোরূপ বাধাও সৃষ্টি করা যাবে না। রাজনীতির কারণে বা রাজনৈতিক দলের আন্দোলন সংগ্রামের কারণে লাখ লাখ শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনকে ব্যাহত করা যাবে না। এ শুভবুদ্ধির পরিচয় দিতে হবে রাজনীতিকদের। নইলে রাজনীতির প্রতি, রাজনীতিকদের প্রতি আগামী প্রজন্মের একটি নেতিবাচক ধারণা তৈরি হওয়াও অসঙ্গত নয়, যা ভবিষ্যত বাংলাদেশের নেতৃত্বের জন্য কোনোভাবে সুখকর ও আনন্দদায়ক হবে না। এটা দেশের রাজনীতিবিদরা যত তাড়াতাড়ি বুঝতে পারবেন, ততোই তা সবার জন্য মঙ্গলজনক হবে।