দরিদ্রদের জন্য বরাদ্দের সদ্ব্যবহার

 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অতিদরিদ্র, দুস্থ, বিধবা ও প্রতিবন্ধীদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে সরকারের গৃহীত সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি প্রকল্প ও অন্যান্য কর্মসূচির নিবিড় মনিটরিঙের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন। গত রোববার বাংলাদেশ সচিবালয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে দেয়া ভাষণে তিনি আরও বলেছেন যে, অবহেলিতদের কল্যাণে বরাদ্দকৃত অর্থের সদ্ব্যবহার অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের গুরুত্ব ও যৌক্তিকতা অনস্বীকার্য। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় যে বরাদ্দ প্রদান করা হয়- চাহিদার তুলনায় তা যে খুবই অপ্রতুল তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। আবার আমাদের মজ্জাগত দুর্বলতার কারণে মাঝপথে বরাদ্দকৃত সহায়তার একটি অংশ যে উধাও হয়ে যায়, তাও কোনো নতুন কথা নয়। এ ধরনের নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বছরের পর বছর ধরে বাংলাদেশ একদিকে যেমন খুবই সফলভাবে এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে আসছে, অন্যদিকে তেমনই সমাজের একেবারে তলদেশে বসবাসকারী হতদরিদ্র মানুষ এর সুফলও ভোগ করছে। সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম সম্পর্কে যারা কিঞ্চিৎ খোঁজখবর রাখেন তারা জানেন যে অসহায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, বিধবা ও দুস্থদের মধ্যে এ কার্যক্রমের ইতিবাচক প্রভাব উপেক্ষা করার মতো নয়।

 

এটি সুবিদিত যে, বাংলাদেশ নামক জনবহুল এ দেশটির যাত্রা শুরু হয়েছিলো দুঃসহ দারিদ্র্যকে সঙ্গী করে। অবস্থা এতোটাই প্রতিকূল ছিলো যে, বিশ্বের ঝানু ঝানু উন্নয়ন বিশেষজ্ঞরাও কোনো আশার বাণী শোনাতে পারেননি। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, মাত্র কয়েক দশকের ব্যবধানে সেই চিত্রটি আমূল বদলে গেছে। শুধু যে দারিদ্র্য বিমোচনেই বাংলাদেশ বিস্ময়কর সাফল্য দেখিয়েছে তা নয়, নারীর ক্ষমতায়নসহ সামাজিক উন্নয়নের বেশকিছু সূচকে এমনকি প্রতিবেশী ভারতকেও ছাড়িয়ে গেছে। সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সপ্রশংস মনোযোগ এখন বাংলাদেশের দিকে। সীমিত সম্পদ ও পর্বতপ্রমাণ প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও এ যে অর্জন- তাকে খাটো করে দেখার কোনো অবকাশ নেই। পদে পদে দুর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থার উত্পীড়ন অবশ্যই আছে। এসব না থাকলে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার গতি যে আরও দ্রুততর হতো তাতেও দ্বিমত নেই। প্রধানমন্ত্রীও মূলত সেদিকেই ইঙ্গিত করেছেন। তিনি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলে আসছেন যে, দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করাই তার লক্ষ্য। সে লক্ষ্য অর্জন করতে হলে অর্জিত সাফল্য আঁকড়ে বসে থাকা কিংবা তা নিয়ে আত্মতুষ্টিতে ভোগার কোনো অবকাশ নেই।

 

দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম এখনও অব্যাহত আছে। আছে দৃশ্য-অদৃশ্য নানা চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার ক্ষেত্রে সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচিসমূহের গুরুত্ব কোনো অংশে কম নয়। জনসংখ্যার তুলনায় আমাদের সম্পদ সীমিত। অতএব, এ কার্যক্রমে বরাদ্দকৃত অর্থের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে নিবিড় মনিটরিং নিঃসন্দেহে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে নিখাদ রাজনৈতিক সংকল্প ও সদিচ্ছা থাকলে সব বাধাই যে অতিক্রম করা যায়, তাও অস্বীকার করার উপায় নেই।

Leave a comment