ফাঁসির জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন

স্টাফ রিপোর্টার: একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াত নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকরে প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে কারা কর্তৃপক্ষ। সরকারের ওপর মহলের নির্দেশে এ প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় গুলশানে তার বাসভবনে সাংবাদিকদের বলেন, মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় কার্যকরের প্রস্তুতি নিতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ফাঁসির দণ্ড বহাল থাকার কথাও কামারুজ্জামানকে জানানো হয়েছে।

আইনমন্ত্রী আরও বলেন, সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের একটা রায় আছে, সেখানে রিভিউ পিটিশন ডিসমিস হয়েছে, সেটা ধরে নিয়ে জেল কর্তৃপক্ষকে রায় কার্যকরের প্রস্তুতি নিতে আদেশ দিয়েছি। কামারুজ্জামানকে আপিল বিভাগের রায় জানানো হয়েছে কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, আমি যতোটুকু শুনেছি, আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে কি-না, সে প্রশ্ন আমি আইজি প্রিজনকে করিনি, কিন্তু আমি যতোটুকু জানি তাকে (কামারুজ্জামান) জানানো হয়েছে, আপিল বিভাগে খারিজ হয়েছে এবং তার মৃত্যুদণ্ড বহাল আছে।

তিনি আরও জানান, তাকে (কামারুজ্জামান) একটা টাইম দেয়া হবে। সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদে তার একটা অধিকার আছে দোষ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার। এদিকে কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন দুপুরে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সাথে সচিবালয়ে দেখা করেন। বুধবার সন্ধ্যায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ফরমান আলী বলেছেন, ফাঁসির দণ্ড কার্যকর করতে কারাগারে সব সময়ই প্রস্তুতি থাকে। কামারুজ্জামানের রায়ের কপি হাতে পেলে সেটি কার্যকরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরও জানান, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে যেকোনো ফাঁসির দণ্ড কার্যকরে ফাঁসির মঞ্চ, মোম মাখানো দড়ি ও জল্লাদ সব সময় প্রস্তুত থাকেন। আদেশ পাওয়ার দু ঘণ্টার মধ্যে ফাঁসির দণ্ড কার্যকরের সক্ষমতা কারা কর্তৃপক্ষের আছে।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বুধবার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, কারা কর্তৃপক্ষ যেকোনো সময় কামারুজ্জামানের ফাঁসির আদেশ কার্যকর করতে পারে। বিষয়টি নির্ভর করছে সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর। এক্ষেত্রে রিভিউ পিটিশনেরও সুযোগ নেই। তিনি আরও বলেন, কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় কার্যকরের ক্ষেত্রে রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ পর্যন্ত অপেক্ষা করার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। এটা আমার ব্যক্তিগত অভিমত। জেল কর্তৃপক্ষ রায় কার্যকরের ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ রায় দেখবে না, দেখবে কী আদেশ দেয়া হয়েছে। ট্রাইব্যুনালে একটি পূর্ণাঙ্গ রায় হয়েই আছে। আপিল বিভাগ সেটাকেই বহাল রেখেছেন। সেক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের কী প্রয়োজন? আসামিপক্ষ থেকে কামারুজ্জামানকে রিভিউয়ের সুযোগ না দিয়ে ফাঁসি কার্যকর না করার আহ্বান জানানোর ঘণ্টাখানেক পর অ্যাটর্নি জেনারেল এই প্রশ্ন তোলেন।

এর আগে আসামিপক্ষের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, আমরা মনে করি এ রায় রিভিউয়ের সুযোগ আছে। আমরা পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি হাতে পাইনি। কপি পেলে রিভিউর আবেদন করব। রিভিউ নিষ্পত্তি হওয়ার আগে যেন মৃত্যুদণ্ড কার্যকর না হয় সেই আহ্বান জানাচ্ছি সংশ্লিষ্টদের প্রতি। সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বুধবার দুপুরে তিনি এ আহ্বান জানান। এমন আশঙ্কার কারণ জানতে চাইলে জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার মামলার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, সেই সময়েও আমরা রিভিউ করেছিলাম। কিন্তু রিভিউ নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই তাকে ফাঁসি দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিলো। এরপর আমরা চেম্বার জজের কাছে গেলে সেই দিনের মতো ফাঁসি কার্যকর বন্ধ করেছিলেন।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোন জায়গার কী সোহাগপুর, এতোদিন মানুষ জানলো না, হঠাৎ করে ৪৩ বছর পর সেই জায়গায় সংঘটিত অপরাধের শোনা কথায় কামারুজ্জামানকে ফাঁসি দেয়া হল। তাহলে কি রায় ভুল হয়েছে? জবাবে তিনি বলেন, বিচার কখনও ভুল হয় না। আইনজীবীর কোট পরে আমরা কখনও এ কথা বলতে পারি না। তবে, অধিকতর ন্যায়বিচারের সুযোগ আমাদের সামনে আছে। আমরা সে সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করছি।

একাত্তরের গণহত্যার দায়ে কামারুজ্জামানকে ট্রাইব্যুনালের দেয়া ফাঁসির আদেশ সোমবার বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সংক্ষিপ্ত আদেশে এ মৃত্যুদণ্ডের কথা জানান। পরদিন মঙ্গলবার কামারুজ্জামানকে কশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় কাশিমপুর থেকে রওনা হয়ে কঠোর পুলিশি নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে দুপুর ২টায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছে কামারুজ্জামানকে বহনকারী গাড়ি। তাকে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের জন্য নির্ধারিত কনডেম সেলে রাখা হয়েছে। কারা কর্তৃপক্ষের চিকিৎসক কামারুজ্জামানের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছেন। তিনি সুস্থ ও স্বাভাবিক আছেন। বুধবার দিনভর রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের আইনজীবী, কামারুজ্জামানের পরিবার এবং আপিল বিভাগের বিচারপতিদের বিষয়টি নিয়ে তোড়জোড় লক্ষ্য করা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বুধবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের খাস কামরায় আপিল বিভাগের বিচারপতিরা একটি বৈঠক করেন। সেখানে যুদ্ধাপরাধের এ রায়ের ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। তবে কী আলোচনা হয়েছে সে ব্যাপারে বিস্তারিত কিছুই জানা যায়নি।

এদিকে কামারুজ্জামানের আইনজীবী শিশির মনির জানিয়েছেন, আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় কামারুজ্জামানের সাথে তার কয়েকজন আইনজীবী সাক্ষাৎ করবেন। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় অনুমতি দিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপারের কাছে সাক্ষাতের জন্য আবেদন করেন অ্যাডভোকেট গাজী এমএইচ তামিম। মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শের জন্য আলাদাকক্ষে সাক্ষাতের অনুমতি চাওয়া হয় ওই আবেদনে।