হরতালে পরীক্ষা সূচি মেলাতে হিমসিম : অভিভাবক মহল উদ্বিগ্ন

স্টাফ রিপোর্টার: গত বছরের মতো এবারও পরীক্ষার সূচি মেলাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। হরতালের কারণে একের পর এক পেছানো হচ্ছে পরীক্ষা। ইতোমধ্যে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি), জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি), জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং একাধিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা পেছানো হয়েছে। এছাড়া সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষাও পেছানো হয়েছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের ফাঁসির রায় কার্যকরের পরিপ্রেক্ষিতে আবারো হরতাল ডাকা হলে নতুন করে পরীক্ষা জট শুরু হবে। হরতালের কারণে জেএসসি-জেডিসির ২ নভেম্বরের পরীক্ষা ৭ নভেম্বর এবং ৩ নভেম্বরের পরীক্ষা আগামী ১৪ নভেম্বর নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। আবার ৫ ও ৬ নভেম্বরও হরতাল ডাকায় পরীক্ষা আবার পেছাতে বাধ্য হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ৫ ও ৬ নভেম্বরের পরীক্ষা ১৯ ও ২০ নভেম্বরে গ্রহণের নতুন তারিখ ঘোষণা করা হয়। এ কারণে ৭ নভেম্বর থেকে শুরু হবে জেএসসি পরীক্ষা।

এর আগে জেএসসির ঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী, ১৮ নভেম্বর পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা ছিলো। পরীক্ষা শুরু হতে বিলম্ব হওয়ায় পরীক্ষা শেষ হবে ২০ নভেম্বর। এর মধ্যে আবার রাজনৈতিক অস্থিরতা বা হরতাল ডাকা হলে এ সময়ের মধ্যে পরীক্ষা শেষ করা যাবে না।

অন্যদিকে ২৩ নভেম্বর শুরু হচ্ছে প্রাথমিক ও দাখিল শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা। অনেক মাধ্যমিক স্কুলে প্রাথমিক শাখা থাকায় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী শুরু হবার আগেই জেএসসি পরীক্ষা শেষ করতে না পারলে পরীক্ষার কেন্দ্র নিয়ে বিপাকে পড়তে হবে কর্তৃপক্ষকে। আবার প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী শেষ হবে ৩০ নভেম্বর। ডিসেম্বর জুড়ে চলবে স্কুলগুলোর বার্ষিক পরীক্ষা। এছাড়া এসএসসি পরীক্ষার নির্বাচনী পরীক্ষাও এ মাসে অনুষ্ঠিত হবে। ২৩ নভেম্বর  প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী শুরু করা না গেলে ৩০ নভেম্বর শেষ করা যাবে না। এ কারণে বার্ষিক পরীক্ষার সময়সূচি নির্ধারণে হিমসিম খেতে হবে কর্তৃপক্ষকে।

আবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগর, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ একাধিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা কোথাও চলছে, কোথাও এ মাসে অনুষ্ঠিত হবে। হরতালের কারণে ইতোমধ্যে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার তারিখ পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে।

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সাংবাদিকদের বলেছেন, জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা ২০১০ সাল থেকে প্রায় একই সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এটা শেষ হওয়ার সাথে সাথে পিএসসি পরীক্ষা। এরপর বার্ষিক পরীক্ষা। এ সময়ে হরতাল দিয়ে বিরাট বাধার সৃষ্টি করা হলো।

রাজধানীর ন্যাশনাল কলেজের অধ্যক্ষ শহীদুল আলম বলেন, হরতালের কারণে বিপাকে আছি। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষকরাও পরীক্ষার আয়োজন নিয়ে হিমসিম খাচ্ছেন। একের পর এক পরীক্ষা স্থগিত করে নতুন করে সূচি দেয়া হচ্ছে। এ কারণে ডিসেম্বরের মধ্যে বছরের সব পরীক্ষা শেষ করা কঠিন হবে। তিনি জানান, নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে স্কুলগুলোর বার্ষিক পরীক্ষা নেয়ার চিন্তাভাবনা ছিলো। কিন্তু জেএসসি ও প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা সময় পরিবর্তনে তা আর সম্ভব হবে না। এবার প্রাথমিকের প্রায় ৩০ লাখ এবং জেএসসি ও জেডিসির ২১ লাখ পরীক্ষার্থী অংশ নেবে।

অভিভাবক ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বলেন, হরতালে পরীক্ষা দিয়ে শিক্ষার্থীদের বিপাকে ফেলা হচ্ছে। আমরা রাজনৈতিক ব্যক্তিদের কাছ থেকে অঙ্গীকার আদায় করতে চাই যাতে অন্তত পরীক্ষার সময় হরতাল আহবান না করুক। তথ্য অনুযায়ী, প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সব স্তরের গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা থাকে নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে। এ সময়ে প্রাথমিক ও এবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষা, প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বার্ষিক পরীক্ষা, এসএসসি  নির্বাচনী পরীক্ষা, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা, একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাসহ বিভিন্ন পরীক্ষা থাকে।

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের টানা অবরোধের কারণে গত বছরও বার্ষিক পরীক্ষা শেষ করতে পারেনি স্কুলগুলো। এ কারণে অভিভাবকদের পক্ষ থেকে দাবিও করা হয়েছিলো, বার্ষিক পরীক্ষা ছাড়াই সাময়িক পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে ওপরের ক্লাসে অটো প্রমোশন দেয়া হোক। তাদের বক্তব্য- অবরোধের মধ্যেও বেশির ভাগ স্কুল পরীক্ষার আয়োজন করে। এ কারণে বাধ্য হয়েই ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীদের স্কুলে যেতে হয়। বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীরা আহতও হয়েছে। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো দায় নেয় না।

গত বছর ঘোষিত সূচি অনুযায়ী পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা ছিলো গত ২০ নভেম্বর। লাগাতার হরতাল ও অবরোধের কারণে ওই পরীক্ষা শেষ হতে ১৬ দিন সময় বেশি লেগেছে। এছাড়া প্রতিনিয়ত স্থগিত করা হয়েছিলো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা। পুনঃসময়সূচি দিয়েও আবার সেই পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাও পেছানো হয়ে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা বুদ্ধিজীবী দিবসেও নেয়া হয়।