রংপুর সিটি নির্বাচন

রংপুরে বিজয়ী জাপা (এরশাদ) নেতা মোস্তফা

স্টাফ রিপোর্টার: রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করা হয়েছে। বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে জাতীয় পার্টির (এরশাদ) মহানগর সভাপতি মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাকে (লাঙ্গল)। মোস্তফা ১ লাখ ৬০ হাজার ৪শ ৮৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সাবেক মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা সরফুদ্দীন আহমেদ ঝন্টু (নৌকা) পেয়েছেন ৬২ হাজার ৪শ ভোট। গতরাত ১২টা ২০ মিনিটে রিটার্নিং ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র সরকার বেসরকারি ফলাফল ঘোষণা করেন। ঘোষিত ফলাফলে বিএনপি মহানগর সহ-সভাপতি কাওসার জামান বাবলা (ধানের শীষ) ৩৫ হাজার ১শ ৩৬ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী এটিএম গোলাম মোস্তফা বাবু (হাত পাখা) পেয়েছেন ২৪ হাজার ৬ ভোট। মোট ভোটার ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৯শ ৯৪ জনের মধ্যে ২ লাখ ৯৩ হাজার ৭শ ২৩ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। মোট ভোটারের মধ্যে ৭৪.৩০ শতাংশ ভোট পড়েছে।

বিজয়ী প্রার্থী মোস্তফার প্রতিক্রিয়ায় জানান, রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে সম্ভাব্য বিজয়ী জাতীয় পার্টির (এরশাদ) মহানগর সভাপতি মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ফলাফলে এগিয়ে থাকার খবর পাওয়ার পর এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, রংপুরকে সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত করবো। রংপুরের অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ বিগত মেয়রের অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করবো।

তিনি আরও বলেন, রংপুরকে একটি আধুনিক, বসবাসযোগ্য, পরিবেশ বান্ধব নগরী গড়ার জন্য কাজ করে যাবো। সকল শ্রেণিপেশার মানুষকে নিয়ে নগর উন্নয়ন কমিটি গঠন করে তাদের পরামর্শে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়ন তরান্বিত করবো। এছাড়া সরকার বিদেশী সাহায্য সংস্থা ও স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সেতুবন্ধন তৈরী করে সকল শ্রেণিপেশার মানুষের দাবি-দাওয়া পূরণে সচেষ্ট থাকবো। সিটি কর্পোরেশনকে দলীয় কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করবো না। রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও সাবেক মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা সরফুদ্দীন আহমেদ ঝন্টু (নৌকা), বিএনপি’র মেয়র প্রার্থী রংপুর মহানগর বিএনপি’র সহসভাপতি কাওসার জামান বাবলা (ধানের শীষ), জাতীয় পার্টির (এ) মেয়র প্রার্থী রংপুর মহানগর সভাপতি মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা (লাঙ্গল), জাপা (এরশাদ) চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদের ভাতিজা বহিষ্কৃত কেন্দ্রীয় যুগ্মসম্পাদক স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী এইচএম আসিফ শাহরিয়ার (হাতি), বাসদের মেয়র প্রার্থী আব্দুল কুদ্দুস (মই), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী এটিএম গোলাম মোস্তফা বাবু (হাতপাখা) ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মেয়র প্রার্থী সেলিম আখতার (আম) প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এছাড়া সিটি কর্পোরেশনের ৩৩টি ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২শ ১১ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৬৫ জন প্রার্থী বিভিন্ন প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।

প্রসঙ্গত, রংপুর পৌরসভাকে সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত করার পর দ্বিতীয় ভোট হলো এবার। ২০১২ সালের ২৮ জুন রংপুর পৌরসভা থেকে সিটি করপোরেশনে উন্নীত হয়। ২০১২ সালের ২০ ডিসেম্বর প্রথম নির্বাচন নির্দলীয়ভাবে হলেও এবার মেয়র পদে ভোট হয়েছে দলীয় প্রতীকে।গত নির্বাচনে সরফুদ্দীন আহমেদ ঝন্টুর কাছে পরাজিত মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা এবার জাতীয় পার্টির (এরশাদ) হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বিএনপি প্রার্থী কাওসার জামান বাবলা প্রথম নির্বাচনে চতুর্থ অবস্থানে ছিলেন।গতকাল বৃহস্পতিবার ২১ ডিসেম্বর রংপুর সিটি কর্পোরেশনে নির্বাচনে মোট ১শ ৯৩টি ভোটকেন্দ্রের ১ হাজার ১শ ৭৭টি ভোট কক্ষে ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বর্তমানে ভোটার রয়েছে ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৯শ ৯৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৯৮ হাজার ৬শ ৫৯ এবং নারী ১ লাখ ৯১ হাজার ৭শ ৬২ জন। এর মধ্যে তরুণ এবং নতুন ভোটার রয়েছে ৩৬ হাজার ২শ ৮২ জন। ২০১২ সালের ২০ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো রংপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিলো।

বিএনপি প্রার্থী বাবলার ফলাফল বর্জন

স্টাফ রিপোর্টার: রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ফলাফল বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। বিএনপির রংপুর মহানগর সহসভাপতি কাওসার জামান বাবলা রংপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন শেষ হওয়ার সাড়ে ৫ ঘণ্টা পর দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আকস্মিকভাবে এ ঘোষণা দেন। এর আগে সকালে বাবলা মাহিগঞ্জের দেওয়ানটুলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ভোট প্রদান শেষে বলেছিলেন, ভোটের পরিবেশ সন্তোষজনক। তবে শেষ পর্যন্ত ভোটের পরিবেশ সুষ্ঠু থাকবে কিনা সে ব্যাপারে তিনি শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন।

নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার পর থেকে বাবলা মাঠে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালান। তার পক্ষে দলীয় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা রংপুরে এসে শেষ পর্যন্ত প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যান। কিন্তু গতকাল বৃহস্পতিবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর ফলাফল তার বিপক্ষে যেতে থাকে এবং প্রতিদ্বন্দ্বীতায় তিনি বিশাল ব্যবধানে তৃতীয় স্থানে চলে যান। অবস্থা বেগতিক দেখে দলীয় হাই-কমান্ডের ফোন পেয়ে তিনি তড়িঘড়ি সংবাদ সম্মেলন করে ফলাফল বর্জনের ঘোষণা দেন। এ ফলাফল বর্জনের ঘোষণার বিষয়টি দলের অধিকাংশ নেতাকর্মী জানতেন না।

রংপুরের নির্বাচনে গণতন্ত্রের বিজয় হয়েছে : কাদের

স্টাফ রিপোর্টার: আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আবারও প্রমাণ হয়েছে, বর্তমান সরকারের সময়ে নির্বাচন কমিশন স্বাধীন। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডিস্থ রাজনৈতিক কার্যালয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে দলের পক্ষ থেকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, সবচেয়ে বড় কথা হলো অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশন স্বাধীন ও কর্তৃত্তপূর্ণ নির্বাচনের রেকর্ড রেখে যাচ্ছে। এই নির্বাচনে গণতন্ত্রের বিজয় হয়েছে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা এ নির্বাচনের ফলাফলকে গণতন্ত্রের বিজয় হিসাবেই দেখছি। মনে করি, এ নির্বাচনের রেজাল্ট জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির জন্য একটা বার্তা রেখে যাচ্ছে।

নির্বাচনে বিএনপির কারচুপির অভিযোগ সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বানরে সঙ্গীত গায়, সীতা জলে নাচে।

সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, উপ-দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।