চুয়াডাঙ্গায় প্রথম দিনে অনুপস্থিত ৬৫ ও মেহেরপুরে অনুপস্থিত ৬৮ পরীক্ষার্থী
স্টাফ রিপোর্টার: নানা ঘটনা ও দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে সোমবার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হয়েছে। ভুল প্রবেশপত্র সরবরাহের কারণে নীলফামারীর ডোমারে এক ছাত্রী আত্মহত্যা করেছে। পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন, বোর্ড থেকে ভুল প্রবেশপত্র বিতরণ, নকল সরবরাহ, পুরনো প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা গ্রহণের মতো ঘটনাও ঘটেছে এদিন। আছে ফরম পূরণ করেও প্রবেশপত্র না পাওয়ার ঘটনা। এসব কারণে সারাদেশে ৩৪ শিক্ষককে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে ৫ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া ৫ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। নকলে সহায়তার কারণে বরিশালে ২ ছাত্রীকে জরিমানা করা হয়েছে। এবার চুয়াডাঙ্গায় পরীক্ষায় ১২ হাজার ৩৫ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছে। এসএসসি পরীক্ষায় ১৭টি কেন্দ্র/ভেন্যুতে ৯৫৩৮ হাজার উপস্থিতও ৩৯ জন অনুপস্থিত ছিলো, এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) পরীক্ষায় ৬টি কেন্দ্র/ভেন্যুতে ১ হাজার ৪৩১ জন উপস্থিত ও ৬ জন অনুপস্থিত ছিলো এবং দাখিল পরীক্ষায় ৫টি কেন্দ্রে ১০০১ জন উপস্থিত ও ২০ জন অনুপস্থিত ছিলো। মেরেহপুরে প্রথম দিনে ৬৮ জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিলো। জেলার ৩ উপজেলায় মোট ১৩টি কেন্দ্রে ৭ হাজার ৩২৩ জন এসএসসি, ২টি কেন্দ্রে ৫৫৮ জন দাখিল এবং ৩টি কেন্দ্র এসএসসি (ভোকেশনাল) ৮৭২ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রশ্ন ফাঁসের কোনো ঘটনা না ঘটলেও গুজব রটিয়ে ভুয়া প্রশ্ন বিক্রি করতে গিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৪ জন র্যাবের হাতে আটক হয়েছে। তারা হলো সুনামগঞ্জে আহমেদ সালেহ তাইফ, ফেনীর দাগনভূঞায় ইমাজউদ্দিন রিয়াদ, ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে একজন এবং শেরপুরে মোশাররফ হোসেন শাওন। নকল সরবরাহ করায় কিশোরগঞ্জের আশুগঞ্জে ৫ শিক্ষককে দুই বছর করে জেল দেয়া হয়েছে। যশোরের চৌগাছায় ২০১৮ সালের প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেয়ার অপরাধে কেন্দ্র সচিবসহ ৫ শিক্ষক এবং দায়িত্বে অবহেলার দায়ে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে ৬ ও নীলফামারীতে ১৭ শিক্ষককে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। মানিকগঞ্জের শিবালয়ে দাখিল পরীক্ষা কেন্দ্রে ছাত্রীকে উত্তর বলে দেয়ায় মাজহারুল ইসলাম নামে এক শিক্ষককে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিনা অনুমতিতে কেন্দ্রে প্রবেশের দায়ে ঝালকাঠিতে এক শিক্ষককে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় পরীক্ষা কেন্দ্রে এক পুলিশ কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। বরিশালে শহরের হালিমা খাতুন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে জগদীশ সারস্বত বালিকা স্কুল ও কলেজের ২০ শিক্ষার্থীর নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষা নেয়া হয় পুরাতন সিলেবাসের প্রশ্নপত্রে। ভুল প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়ার পর কুষ্টিয়ায় ১৮ শিক্ষার্থীকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে পুনরায় পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়।
চুয়াডাঙ্গায় ২০২০ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ২৮টি কেন্দ্রে প্রথমবারের মতো সিসি ক্যামেরার আওতায় পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছে। গতকাল সোমবার থেকে শুরু হওয়া এসএসসি পরীক্ষা আগামী ২৭ ফেব্রয়ারি পর্যন্ত চলবে। প্রথমদিনে বাংলা ১ম পত্রের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমদিনে ৬৫ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিলো। পরীক্ষায় ১২ হাজার ৩৫ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছে। এদিকে, নকলমুক্ত পরিবেশে ও সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার লক্ষ্যে জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার সরকারি বালিকা বিদ্যালয়সহ কয়েকটি পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এসময় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মনিরা পারভীন উপস্থিত ছিলেন।
চুয়াডাঙ্গায় এসএসসি পরীক্ষায় ১৭টি কেন্দ্র/ভেন্যুতে ৯ হাজার ৫৩৮ হাজার উপস্থিত ও ৩৯জন অনুপস্থিত ছিলো। এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) পরীক্ষায় ৬টি কেন্দ্র/ভেন্যুতে ১ হাজার ৪৩১ জন উপস্থিত ও ৬ জন অনুপস্থিত ছিলো এবং দাখিল পরীক্ষায় ৫টি কেন্দ্রে ১০০১ জন উপস্থিত ও ২০ জন অনুপস্থিত ছিলো। সম্প্রতি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার প্রস্তুতিমূলকসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিদ্যালয় ও মাদরাসার প্রধানগণ যেসব তথ্য উপস্থাপন করেন তার চেয়ে পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক কম পাওয়া গেছে। প্রধান শিক্ষকদের হিসাব মতে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বলা হয়েছিলো, ১৩ হাজার ৪৪৫ জন। অথচ, পরীক্ষার্থী পাওয়া গেছে ১২ হাজার ১০০ জন। ১৩৪৫ জন পরীক্ষার্থী হিসেবে কম পাওয়া গেছে।
মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, যশোর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে মেহেরপুরে এসএসসি ও অন্যান্য বোর্ডের অধীনে সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়েছে। প্রথম দিন গতকাল সোমবার জেলার ৩ উপজেলায় মোট ১৩টি কেন্দ্রে ৭ হাজার ৩২৩ জন এসএসসি, ২টি কেন্দ্রে ৫৫৮ জন দাখিল এবং ৩টি কেন্দ্র এসএসসি (ভোকেশনাল) ৮৭২ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। প্রথম দিনে ৬৮ জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিলো। অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীদের মধ্যে এসএসসিতে ৪১ জন, দাখিলে ১৫ জন এবং এসএসসি (ভোকেশনাল) এ ১২ জন রয়েছে। প্রথম দিনে অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীর হার (০.৭৮%) শতকরা শূন্য দশমিক আটাত্তর শতাংশ।
তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর মেহেরপুরে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার কমেছে। গত বছরে মেহেরপুরে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ১০ হাজার ২৪৬ জন অংশগ্রহণ করেছিলো। যেখানে এ বছর এক হাজার ৪৯৩ জন শিক্ষার্থী কম পরীক্ষা দিচ্ছে। যা শতকরা প্রায় ১৫ শতাংশ কম। যশোর বোর্ডের অধীনে এসএসসিতে সদর উপজেলার মোট ৩টি কেন্দ্রে ২ হাজার ৪২১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ২ হাজার ৪০৪ জন উপস্থিত ছিলো। অনুপস্থিত ছিলো মাত্র ১৫ জন। এদের মধ্যে মেহেরপুর সরকারি বালক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এক হাজার ৩৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে এক হাজার ২৫ জন, সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৭৯২ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৭৯০ জন ও আমঝুপি মাধ্যামিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৫৯৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৫৯১ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। গাংনী উপজেলার মোট ৮টি কেন্দ্রে ৩ হাজার ৬৮২ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৩ হাজার ৬৫৯ জন উপস্থিত ছিলো। অনুপস্থিত ছিলো ২৩ জন। এদের মধ্যে গাংনী পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ৫৪৮ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৫৪৬ জন, গাংনী পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৪০৩ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৪০২ জন, বামন্দী-নিশিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ৫৮২ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৫৭৯ জন, জুগিরঘোপা মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ২৮০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ২৭৮ জন, সাহেবনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৩৪৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৩৪২ জন, বামন্দী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৪০৬ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৪০২ জন, বেতবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৫৩৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৫২৭ জন ও রায়পুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৫৮৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৫৮৩ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। এছাড়া মুজিবনগর উপজেলার মোট ২টি কেন্দ্রে এক হাজার ২৬১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে এক হাজার ২৫৮ জন উপস্থিত ছিলো। অনুপস্থিত ছিলো মাত্র ৩ জন। এদের মধ্যে মুজিবনগর সরকারি মাধ্যামিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৮১৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৮১১ জন ও দারিয়াপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৪৪৭ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৪৪৭ জনই অংশগ্রহণ করে।
এদিকে বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে দাখিল পরীক্ষায় জেলার মোট ২টি কেন্দ্রে ৫৭৩ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৫৫৮ জন উপস্থিত ছিলো। অনুপস্থিত ছিলো মাত্র ১৫ জন। এদের মধ্যে মেহেরপুর দারুল উলুম আহমদীয়া ফাজিল মাদরাসা কেন্দ্রে ৩৩৮ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৩৩১ জন উপস্থিত ছিলো ও গাংনী সিদ্দিকিয়া সিনিয়র আলিম মাদরাসা কেন্দ্রে ২৩৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ২২৭ জন উপস্থিত ছিলো।
এছাড়া বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড ঢাকার অধীনে এসএসসি (ভোকেশনাল) পরীক্ষায় জেলার মোট ৩টি কেন্দ্রে ৮৮৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৮৭২ জন উপস্থিত ছিলো। অনুপস্থিত ছিলো মাত্র ১২ জন। এদের মধ্যে মেহেরপুর টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ৩৭৬ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৩৭০ জন, গাংনী পাইল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ৩৭৬ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৩৭০ জন ও দারিয়াপুর মাধ্যামিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ১৩২ জন পরীক্ষার্থী ১৩২ জনই অংশগ্রহণ করে।
পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক মো. আতাউল গনি ও পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা পরীক্ষা কেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করেন। এসময় জেলা প্রশাসক আতাউল গনি বলেন, জেলার সবকটি কেন্দ্রে সুষ্ঠু ও নকলমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।