করোনাভাইরাস : হুট করে বেড়ে গেছে মাস্কের দাম

স্টাফ রিপোর্টার: নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাংলাদেশে না ঘটলেও আতঙ্কে চাহিদা বেড়েছে মাস্কের; আর এই সুযোগে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেছে, চাহিদা বেড়ে যাওয়া, অতি লাভের আশায় মজুদ এবং চীনা নাগরিকসহ অনেকের বেশি পরিমাণে মাস্ক কেনায় মজুদে সঙ্কট দেখা দেয়ায় চড়েছে দাম। ব্যবসায়ীরা বলছেন, যদিও বাংলাদেশে বেশিরভাগ মাস্কের উৎস চীন, কিন্তু এখন উল্টো চীনে পাঠাতে চীনা নাগরিকসহ অনেকে বাজার থেকে প্রচুর মাস্ক কিনেছেন। গত মাসের শেষার্ধ্বে চীনের উহান শহরে নভেল করোনাভাইরাস ব্যাপক সংক্রমণের পর তা বৈশ্বিক খবরে রূপ নেয়। কয়েকদিনের মধ্যে চীনের সব অঞ্চলে ছড়ানোর পর দুই ডজনের মতো দেশেও এই ভাইরাস ছড়িয়েছে। বাংলাদেশে অবস্থানরত চীনা নাগরিক এবং উহান থেকে ফেরত আসা বাংলাদেশিদের পরীক্ষা করে ভাইরাস সংক্রমণ ধরা না পড়লেও গত বছরের ডেঙ্গুর ঝড় পেরিয়ে আসা বাংলাদেশিদের মধ্যে এই ভাইরাসও আতঙ্ক ছড়িয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকার তোপখানা সড়কে বিএমএ ভবনের মেডিকেল যন্ত্রপাতির বাজার গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ দোকানে মাস্কের খোঁজ করছেন ক্রেতারা।
করোনাভাইরাসের মধ্যেও চীনে ফিরতে হচ্ছে চাকুরে রকিবুল হাসানকে; নিজের সুরক্ষার জন্য বেশি করে মাস্ক কিতে এই বিপণি বিতানে এসেছিলেন তিনি। বিএমএ ভবনের একটি দোকান থেকে ৫০টি মাস্কের পাঁচটি প্যাকেট কেনার পর কথা হয় রকিবুলের সঙ্গে। তিনি বলেন, দাম বেশ চড়া। সাংহাইয়ে একটি ট্রেডিং কোম্পানির চাকুরে রকিবুল বলেন, ‘আমি চায়নাতে চাকুরির কারণে এখনই ফিরতে হচ্ছে। চীনে এখন মাস্ক ছাড়া বাইরে বের হওয়া কোনোভাবে সম্ভব না। সেখানে সংকটও আছে, তাই কিছু কিনে নিয়ে যাচ্ছি।’ ৫০টি ডিসপোজেবল মাস্কের এক প্যাকেট ৪৮০ টাকা করে পড়েছে বলে জানান তিনি।’ দেখা যাচ্ছে, আগের যেটা ১ থেকে ৫ টাকা ছিলো, সেটা এখন ১০ থেকে ১১ টাকা হয়েছে।’ বিএমএ ভবন দোকান মালিক সমিতির সহকারী সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস লস্কর জানান, ৫০টি মাস্কের প্রতি বাক্স আগে তারা ৬০ টাকা বিক্রি করতেন, এখন সেটা বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায়। তিনি জানান, ‘পিএম ২.৫’ মডেলের যে মাস্ক প্রতিটির দাম আগে ছিলো ১৮ থেকে ২০ টাকা, এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়।’ দাম বাড়ার ব্যাখ্যায় ইলিয়াস বলেন, ‘চীনে পাঠানোর আশায় অনেকে মাস্ক কিনেছে, আবার অনেকে মাস্ক মজুদ করেছে- এ কারণে দাম বেড়ে গেছে। ‘কিছুই বুঝলাম না, কেন এই অবস্থার তৈরি করল। অথচ, রাস্তায় দেখবেন, মাত্র দুয়েকজনের মুখে মাস্ক। পুরোই লবণের মতো অবস্থা। যে যেভাবে পারছে, কিনছে।’ বিএমএ ভবনে ভাই ভাই সার্জিক্যালের মালিক নন্দ কুমার সরকার বলেন, ‘জানুয়ারির শেষের দিকে মার্কেটে চীনা নাগরিকদের অনেক ভিড় ছিলো। মনে হয়েছে, ঢাকায় যতো চীনা নাগরিক আছে, সবাই বোধহয় মাস্ক কিনে দেশে পাঠিয়েছে।’ রোববার বিএমএ মার্কেটে আসা একজন চীনা নাগরিক জানান, বাংলাদেশে একটি চীনা প্রকল্পে চাকরি করেন তিনি। চীনে পাঠানোর জন্য মাস্ক কিনতে এসেছেন। তবে তিনি বলেন, ‘চ্যারিটির অংশ হিসাবে ফ্রি বিলি করার চিন্তা করছি আমরা। তবে এক্ষেত্রে এনবিআরের অনুমোদন নেয়ার কথা শুনছি। এখনো জানি না, পাব কি-না।’ এর মধ্যে গত ৩০ তারিখে বিদেশে’ রপ্তানির জন্য’ মাস্ক বিক্রি বন্ধ করতে জরুরি নোটিস দেয় বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) ভবন দোকান মালিক সমিতি। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসে উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে ফেইস মাস্ক কোনো অবস্থায় মজুদ এবং বেশি মূল্যে বিক্রয় করা যাবে না। নোটিসে আরও বলা হয়, ‘দেশি কাস্টমারের কাছে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিক্রয়ের জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে। বিদেশে রপ্তানির জন্য কোনো অবস্থায় বিক্রি করা যাবে না।’ এই বিপণি বিতানের আরেকজন ব্যবসায়ী আকরাম হোসেন বলেন, স্টক শেষ হয়ে যাওয়ায় আমরা ইমপোর্ট করতে চাচ্ছি। আমাদের বেশিরভাগ মাস্ক চীন থেকে আসে। কিন্তু চীনে সাত-আট জায়গায় মেইল করলেও রিপ্লাই পাচ্ছি না।” সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকার লাজফার্মার দুটি স্টোরে খোঁজ নিয়ে ‘পিএম ২.৫’ মাস্কের দুই রকম দাম দেখা যায়। পান্থপথ শাখায় এই রকম মাস্ক ৬০ টাকায় বিক্রি হলেও মোহাম্মদপুরে বিক্রি হচ্ছিলো ৯০ টাকায়। মোহাম্মদপুরে লাজফার্মার এক কর্মী বলেন, করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে এমন আশঙ্কায় অনেকে মাস্ক সংগ্রহ করে রাখছে। এ কারণে চাহিদা চার-পাঁচ গুণ বেড়েছে। চীন মাস্কের বড় উৎপাদক হলেও তারা সংকটের পড়ার কারণ ব্যাখ্যায় মেডিলিংক ইন্টারন্যাশনালের কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, ‘চান্দ্র বর্ষের ছুটির কারণে তাদের কারখানা বন্ধ। তার ওপরে এসেছে করোনাভাইরাস। সে কারণে তাদের টান পড়েছে। ভাইরাসের ফলে এখন ছুটি বেড়েছে। চীনের ছুটি শেষে পুরোদমে উৎপাদন শুরু হলেও আমদানি-রপ্তানি স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে আশা করছেন রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের এই কর্মকর্তা। ক্রেতারা জানাচ্ছেন, দোকানের পাশাপাশি অনলাইন বাজারেও কয়েক গুণ বেড়েছে মাস্কের দাম। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী মনিরুজ্জামান জানান, দারাজ থেকে যে মাস্ক ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে ২০ টাকা করে তিনি কিনেছিলেন, তা এখন বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকায়। তিনি বলেন, ‘ডিসেম্বরে পিএম ২.৫ মডেলের যে মাস্কের পাঁচটির প্যাক ছিলো ১০০ টাকা, দাম বেড়ে তা হয়েছে ৪২০ টাকা। হিসাব করলে বোঝা যাচ্ছে, কতো গুণ দাম বেড়েছে।’ তিনি জানান, চালডাল ডটকমে ৫০টি মাস্কের যে প্যাকেট ২০০ টাকায় বিক্রি হত, তা এখন দেখাচ্ছে আউট অব স্টক। অন্যদিকে, দারাজে ৫০টির মাস্ক আছে, এমন প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ৯৯০ টাকায়।