করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে দ্বিগুণ হারে

শ্বাসতন্ত্রের মাধ্যমেই একজন থেকে আরেকজনের দেহে ছড়ায়
মাথাভাঙ্গা ডেস্ক: প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে দ্বিগুণ হারে। মৃতের সংখ্যাও কম নয়। এ পর্যন্ত চীনে আক্রান্ত হয়েছে ১৭ হাজার ২০৫ জন। মারা গেছে ৩৬২ জন। গত রোববার মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৫৬ জনই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন হুবেই প্রদেশে। সেখানে এ পর্যন্ত মারা গেছেন অন্তত সাড়ে ৩০০ জন। এদিকে চীনে নতুন করে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ২ হাজার ৮২৯ জন। ফলে দেশটিতে প্রতিদিনই দ্বিগুণ হারে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। চীনের স্বাস্থ্য কমিশন জানিয়েছে, রোববার পর্যন্ত উহানে আরো ১ হাজার ৩৩ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। উহান থেকে মাত্র ৬০ কিলোমিটার দূরবর্তী হুয়াগং শহরেও বেড়েছে মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা। সেখানে নতুন করে ২৪৪ জন করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছে অন্তত দুইজন। চীন ছাড়া বিশ্বের অন্যান্য দেশে নতুন করে ১৭১ জন এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এদিকে, পটুয়াখালীর পায়রা তাপবিদ্যুত কেন্দ্রে চীন থেকে ছুটি কাটিয়ে দেশে ফেরা ২০ চীনা নাগরিককে কোয়ারেন্টাইন করে রাখা হয়েছে। পায়রা তাপবিদ্যুত কেন্দ্রের সহকারী প্রকল্প ব্যবস্থাপক শাহ মনি জিকো বিবিসিকে বলেন, সম্প্রতি চীনে ছুটি কাটাতে গিয়েছিলেন চীনা নাগরিকদের একটি অংশ। তাদের চীনে এক দফা এবং বাংলাদেশে বিমানবন্দরে আরেক দফা স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। দুই জায়গার কোথাও তাদের করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হবার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। তারপরেও সতর্কতা হিসেবে বিদ্যুতকেন্দ্রের একটি আলাদা ভবনে তাদের কোয়ারেন্টাইন করে রাখা হয়। অন্যদিকে চীন থেকে ফেরত আসা ৩১২ বাংলাদেশিকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বিশেষ ফ্লাইটের পাইলট ও কেবিনক্রুদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। করোনা ভাইরাসের ওপর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের অংশগ্রহণে দুইটি সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে। সেমিনারে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, এই ভাইরাসে কেউ আক্রান্ত না হলেও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। ভাইরাসটি যাতে এদেশে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য জনসচেতনা সৃষ্টির পাশাপাশি এটা মোকাবিলায় কী কী করণীয় রয়েছে তা দ্রুততার সঙ্গে নির্ধারণ করতে হবে।
ঢাকা শিশু হাসপাতাল কর্তৃক আয়োজিত সেমিনারে মূল প্রবন্ধে ডা. মির্জা মো. জিয়াউল ইসলাম বলেন, যত বেশি পারেন আপনার কণ্ঠনালিকে ভিজিয়ে রাখুন। কোনো অবস্থাতেই শুষ্ক হতে দেয়া যাবে না। অর্থাৎ তৃষ্ণা পেলেই পানি পান করুন। কণ্ঠনালি যদি শুষ্ক থাকে তবে মাত্র ১০ মিনিটেই আপনি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন। তিনি বলেন, ৫০ থেকে ৮০ সিসি হালকা গরম পানি পান করুন (বড়োদের জন্য)। ৩০ থেকে ৫০ সিসি ছোটোদের জন্য। যখনই আপনি মনে করছেন আপনার কণ্ঠনালি শুকিয়ে আসছে, অপেক্ষা না করে দ্রুত পানি পান করুন। সবসময় হাতের কাছে বিশুদ্ধ পানি রাখুন। একবারে প্রচুর পানি পান করে লাভ নেই। বরং অল্প অল্প বিরতিতে অল্প অল্প পান করে কণ্ঠনালিকে সবসময় আর্দ্র করে রাখুন। মার্চ মাসের শেষ পর্যন্ত এই নিয়মগুলো মেনে চলুন।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. সৈয়দ সফি আহমেদ বলেন, এই ভাইরাসটি একজন মানুষের দেহ থেকে আরেক জনের দেহে দ্রুত ছড়াতে পারে। করোনা ভাইরাস মানুষের ফুসফুসে সংক্রামণ ঘটায় এবং শ্বাসতন্ত্রের মাধ্যমেই এটি একজনের দেহ থেকে আরেক জনের দেহে ছড়ায়। তিনি বলেন, এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে ঘন ঘন উচ্চ তাপমাত্রায় জ্বর দেখা দিবে। জ্বরের পর দীর্ঘমেয়াদি কাশি থাকবে। শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। বয়স্কদের শারীরিক অসুস্থতাবোধ করা, মাথাব্যথা, বিশেষ করে শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত রোগে ভুগবে। করোনা ভাইরাস অত্যন্ত সংক্রামক।
বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) উদ্যোগে ‘বাংলাদেশ: সচেতনতা ও করণীয়’ শীর্ষক এক বৈজ্ঞানিক সেমিনারের আয়োজন করা হয়। বিএমএ সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এমপি। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল হাসান। এতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা অংশ নেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে এখনো এ ভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগী শনাক্ত না হলেও ভবিষ্যতে যদি কেউ আক্রান্ত হয় তাহলে তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা সরকার গ্রহণ করেছে এবং এ ভাইরাস সম্পর্কে সরকারের সংশ্লিষ্ট সব এজেন্সি সতর্ক রয়েছে। এ ভাইরাস সম্পর্কে আতঙ্কিত না হয়ে জনগণকে সচেতন করার জন্য মিডিয়ার প্রতি আহ্বান জানান। সভাপতিত্ব করেন বিএমএ সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন।