খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে নির্বাচনে যাবে বিএনপি

খুলনায় খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিভাগীয় জনসভায় ফখরুল ইসলাম আলমগীর

স্টাফ রিপোর্টার: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ঐক্যবদ্ধ, শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করেই একটি নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ নির্বাচনে যাবে বিএনপি। এ সরকার গায়ের জোরে, ক্ষমতার দাপটে, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে আছে। তাই তারা একের পর এক মানুষ খুন করছে, গুম করছে। হাজার হাজার নেতাকর্মীকে কারাগারে প্রেরণ করেছে। বেগম জিয়ার মুক্তি দাবির আন্দোলনে সারাদেশে এ পর্যন্ত ৫ হাজার কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সরকার ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে, গণতন্ত্রের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। ন্যায় বিচার পাওয়ার অধিকার কেড়ে নিয়েছে। তারা জনগণকে ভয় পায়। খুলনার এ বিশাল জনসভার মাধ্যমে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ও দেশের মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকারের লড়াইয়ের সূচনা হলো। বিএনপির পূর্ব নির্ধারিত শহীদ হাদিস পার্কে পুলিশ ১৪৪ ধারা জারির পর গতকাল শনিবার বিকেলে নগরীর কেডি ঘোষ রোডস্থ দলীয় কার্যালয় সংলগ্ন হেলাতলা মোড়ে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে এ জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। ভোর থেকে নগরীর শহীদ হাদিস পার্ক, পুরাতন যশোর রোড, পিকচার প্যালেস মোড় ও কেডি ঘোষ রোডে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পাশাপাশি শহরের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সাঁজোয়া গাড়ি অবস্থান নেয়।

বিএনপি নেতারা জানান, পুলিশ দলীয় কার্যালয়ের সামনের কেডি ঘোষ রোডের পশ্চিম পাশে সমাবেশের মৌখিক অনুমতি দিলেও সকাল থেকে সেখানে মঞ্চ তৈরি ও মাইক টানাতে বাধা দেয়। তবে দুপুর ১টার পর থেকে মঞ্চ তৈরি ও মাইক টানানো শুরু হয়। তার আগে থেকেই নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে আসতে থাকেন। সমাবেশ শুরুর পরপরই সমাবেশস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। দলের নেতারা অভিযোগ করেন, গত শুক্রবার রাত ও গতকাল শনিবার সকালে বিএনপির ২৫ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। জনসভায় যোগ দিতে বিমানযোগে দুপুরে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী খুলনায় পৌঁছেন। এছাড়া আগে থেকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু খুলনা থেকে জনসভার কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন।

বিএনপি খুলনা মহানগর সভাপতি ও খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জুর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, অ্যাড. নিতাই রায় চৌধুরী, সাবেক হুইপ মশিউর রহমান, উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য সৈয়দ মেহেদী রুমি, কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মুজিবর রহমান সরোয়ার, প্রকাশনা সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিব, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক সোহরাব হোসেন, জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু, মাসুদ অরুন, আমিরুজ্জামান খান শিমুল, অমলেন্দু দাস, কবির মুরাদ, খুলনা জেলা বিএনপি সভাপতি অ্যাড. এসএম শফিকুল আলম মনা, খুলনা সিটি মেয়র মনিরুজ্জামান মনি, বাগেরহাট জেলা সভাপতি আব্দুস সালাম, নড়াইল জেলা সভাপতি জাহাঙ্গীর বিশ্বাস, মেহেরপুর জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি মাসুদ অরুণ, চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির যুগ্মআহ্বায়ক অ্যাড. ওয়াহেদুজ্জামান বুলা, সাতক্ষীরা জেলা সাধারণ সম্পাদক তারিকুল হাসান, যশোর জেলা সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. সাবেরুল ইসলাম সাবু, ২০ দলীয় জোটের নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নগর বিজেপি সভাপতি অ্যাড. লতিফুর রহমান লাবু ও নগর জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমীর এজাজ খান, নগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফকরুল আলম ও প্রচার সম্পাদক আসাদুজ্জামান মুরাদের পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন নগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি সাহারুজ্জামান মোর্ত্তজা, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুল হাসান বাপ্পি।

মির্জা ফখরুল বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারের জরাজীর্ণ একটি কক্ষে রাখা হয়েছে। তাকে ন্যূনতম আইনি অধিকার দেয়া হয়নি। সেদিন তাকে দেখতে গিয়ে আমাদের চোখে পানি এসে গিয়েছিলো। কিন্তু আমরা দেখলাম তিনি সেই আগের মতই তেজস্বী রয়েছেন। গণতন্ত্রের জন্য এ রকম ত্যাগ স্বীকার করতে অন্য কোনো নেত্রীকে আমরা আগে দেখি নাই। তিনি সম্পূর্ণ একাকী দীর্ঘ ১০ বছর নির্যাতন-নিপীড়ন সহ্য করেছেন। কিন্তু মাথা নত করেন নাই।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের সকলকে দলমত, ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সকল নেতাকর্মীকে আরও ত্যাগ স্বীকারের মাধ্যমে এ স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এ সরকার বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছে। প্রধান বিচারপতিকে বন্দুকের মুখে পদত্যাগ ও দেশ ছাড়তে বাধ্য করেছে। আওয়ামী লীগের মন্ত্রী নেতারা পুকুর চুরি করছে। ব্যাংক লুট করা হচ্ছে। সরকার শুধু মুখে মুখে বাগাড়ম্বর করছে। মিডিয়ার সামনে মিথ্যাকে সত্য আর সত্যকে মিথ্যা বলছে। সরকার গায়ের জোরে ক্ষমতা দখল করে আছে। ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য যত রকম অপরাধ আছে তা তারা করছে।

ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ১০ টাকা কেজি চালের প্রতিশ্রুতি দিয়ে এখন তা ৬০-৭০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। বিদ্যুতের মূল্য ৮বার বৃদ্ধি, সারের মূল্য তিনগুণ ও গ্যাসের মূল্য বাড়িয়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। শেয়ার বাজার লুট ও ব্যাংকের সঞ্চিত অর্থ আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-সংসদ সদস্যরা বিদেশে পাঠিয়েছে। এখন আন্দোলন শুধু খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন নয়, সাথে সাথে গণতন্ত্র, দেশ রক্ষা ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের আন্দোলন শুরু হয়েছে। এ আন্দোলনে আমরা বিজয়ী হবোই।

পুলিশকে উদ্দেশ্য করে ফখরুল বলেন, আপনারা কেনো জনগণের প্রতিপক্ষ হচ্ছেন। এ অবস্থা কি চিরদিন থাকবে? আপনারা জনগণের পাশে দাঁড়ান। খুলনা-যশোর রোডের দুর্দশার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, সড়ক ও পরিবহন মন্ত্রী মিডিয়ার সামনে উন্নয়নের জোয়ার এবং দিনকে রাত, রাতকে দিন বানান। তিনি দুঃখের সাথে বলেন, যশোর রোডের দুর্ভোগ এড়াতে নড়াইল সড়ক দিয়ে খুলনায় এসে পৌঁছেছি।