সারাদিন হৈ-হুল্লোড় শেষে ফুটবল ও লাঠিখেলা এনে দেয় ভিন্নমাত্রা

?

দামুড়হুদায় বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীদের নিয়ে ভিন্নধর্মী আয়োজন : উন্নত মানের খাবার আর লাল গেঞ্জি পেয়ে খুশিতে আত্মহারা

বখতিয়ার হোসেন বকুল: দামুড়হুদার পুরাতন হাউলী আশা, জুলু, দেউলীর আরমান, দামুড়হুদা বাজারপাড়ার মোহাম্মদ আলী, দশমীর রাজু, মনজু, হাকিম, আলমগীর, জয়নাল, আকবার, পুড়াপাড়ার গোলাম এবং মোক্তারপুরের মান্নান এরা সবাই বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীর পাশপাশি এদের মধ্যে কেউ কেউ আবার শারীরিকভাবেও প্রতিবন্ধী। সমাজের লোকজন এদেরকে পাগল বলে ডাকে। আর সংসারের লোকজন এদেরকে বোঝা মনে করে। একবেলা খাবার খেতে এদের কাপালে জোটে গালমন্দ আর লাথি-ঝাটা। মাঝে মাঝে কেউ কেউ আদর করে কিছু খেতে দেয় না বিষয়টি এমনও নয়। কে খেতে দিল আর কে দিলোনা এ নিয়ে ওদের খুব একটা মাথাব্যথা নেই। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাজারের বিভিন্ন স্থানে ওদের অবাধ ঘোরাফেরা। মনের আনন্দে সারাদিন ঘোরাফেরার পর ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফেরা এটাই ওদের নিত্যদিনের কাজ। কারণ ওদের নির্দিষ্ট কোন কাজ নেই। প্রায়ই দেখা যায় এলাকার কিছু রসিক ব্যক্তি এদের নিয়ে একটু মজা করছেন। মাঝে মাঝে ক্ষিপ্ত হয়ে রসিক লোকজনকে গালাগালি করতেও ছাড়েনা ওরা। অশ্রাব্যভাষায় গালাগালি করলেও বিষয়টি তেমন কেউ গাঁয়ে না মাখলেও সচেতন মহলের কেউ কেউ বলে থাকেন এক পাগলের সাথে আর এক পাগলের পাগলামি। কিন্তু না এবার কোন পাগলামি নয়। দামুড়হুদা সদর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের মেম্বার আবু সাইদ ওই সমস্ত বুদ্ধি প্রতিবন্ধীদের নিয়ে করলেন ভিন্ন আয়োজন। সাইদ মেম্বারের সাথে ছিলেন যুবলীগ নেতা হায়দার আলী, বাসস্ট্যান্ড বাজার কমিটির সদস্য মিলন, মালিক সুপার মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম রশিদ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মনি, দামুড়হুদা পাইলট গালর্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ইমরান আকাশ ওরফে ইমান আলী, কসমেটিকস ব্যবসায়ী হাফিজুর রহমান, আশকার, মুফা, চঞ্চল, বাবলু, জলিলসহ অনেকেই। ওই সমস্ত বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীদের অন্তত একটি দিন ভিন্ন ধরণের আনন্দ দেয়াটাই ছিলো আয়োজকদের মূল উদ্দেশ্য। বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী সকলের জন্য একটি করে লাল গেঞ্জি এবং একটি করে লাল গামছা দেয়া হয়। সাথে ছিলো উন্নত মানের খাবারের ব্যবস্থা। বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীরা দাওয়াত পেয়ে খুশিতে আত্মহারা হয়ে পড়ে। সকালে নাস্তার পাশপাশি দুপুরের খাবার হিসেবে পোলাও-মাংসেরও ব্যবস্থা ছিলো ওই সমস্ত বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীদের জন্য। লাল গেঞ্জি আর লাল গামছা ওদের পছন্দ মতোই কেনা হয়। লাল রঙটায় নাকি ওদের বেশি পছন্দ। আয়োজকরা বাসযোগে গতকাল শনিবার সকালে ওদের লাল গেঞ্জি পরিয়ে নিয়ে গেলেন মুজিবনগরে। এই প্রথম ওরা মুজিবগর দেখলো। কিছুক্ষণ স্বাধীনভাবে ঘোরাফেরার পর আয়োজন করা হয় খেলাধুলার। প্রথমে ফুটবল খেলা শুরু করা হলেও তা শেষ না করেই ওরা একসাথে বলে উঠলো আর ফুটবল খেলবো না। আমরা লাঠি খেলা করবো। কথানুযায়ী শুরু হলো লাঠিখেলা। ধরণ দেখে আয়োজকদের সে কী হাসি। হাসতে হাসতে সকলেরই দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম। খেলাধুলা শেষে আট শহীদ স্মৃতি কমপ্লেক্স ভবন এবং শীবনগরস্থ ডিসি ইকোপার্ক ঘুরিয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরা। আয়োজকদের কয়েকজন অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বললেন, ওদের অন্তত একদিন একটু উন্নত মানের খাবার খাওয়ানোর পাশাপাশি বাড়তি আনন্দ দিতেই এ আয়োজন। জীবনে অনেক টাকাই ব্যয় হয় নানাভাবে। কিন্ত এ আনন্দ লক্ষ কোটি টাকা দিয়েও কেনা যাবে না। এ আনন্দের কাছে ঈদের খুশিও ম্লান হয়ে গেছে। যা বলে বোঝানো সম্ভব না। এদিকে এলাকার বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীদের নিয়ে এ ধরণের আয়োজন করায় আয়োজক সকলকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন এলাকার সচেতন মহল।