ইবি উপাচার্যের ওপর হামলা গভীর ষড়যন্ত্রের ফল : মন্তব্য শিক্ষকদের

ইবি প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ের (ইবি) উপাচার্য অধ্যাপক হারুন উর রশিদ আসকারীর ওপর অতর্কিত হামলাকে গভীর ষড়যন্ত্রের ফল হিসেবে দেখছেন বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। শিক্ষকদের ধারণা, বর্তমান উপাচার্যের সফলতায় ঈর্ষান্বিত হয়ে কোনো স্বার্থান্বেষী মহল এ ঘটনা ঘটাতে পারে। এ ঘটনার পর থেকে শিক্ষকরা উপাচার্য ও তাদের নিরাপত্তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি এ ঘটনার সাথে জড়িতদেরকে দ্রুত শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা। শনিবার বিশ^বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষকের সাথে কথা বলে এ কথা জানা যায়।
শুক্রবার রাত আনুমানিক সাড়ে তিনটার দিকে বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুন উর রশিদ আসকারী ঢাকা থেকে ফেরার পথে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার বড়দাহ নামক গ্রামে এসে পৌছুলে দূর্বৃত্তরা রাস্তায় গাছের গুড়ি ফেলে গাড়ি ভাঙচুর করে। তবে উপাচার্য, তার ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) ও গাড়ির ড্রাইভার অক্ষত থাকেন। উপাচার্য দূর্বৃত্তদের ল্যাপটপ দিতে চাইলেও তারা তা নেয়নি। পরে তারা ভয়ভীতি দেখিয়ে চলে যায়। এ ঘটনাকে বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা গভীর ষড়যন্ত্রের ফল হিসেবে দেখছেন। বিশ^বিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, ‘এটা একটা গভীর ষড়যন্ত্রের ফল। বর্তমান উপাচার্যের সফলতায় ঈর্ষান্বিত হয়ে কোনো স্বার্থান্বেষী মহল এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। তিনি বলেন, উপাচার্য দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ক্যাম্পাসে আমূল পরিবর্তন এনেছেন। উপাচার্য বলেছিলেন ক্যাম্পাসে সেশনজট থাকবে না, সেশনজট নেই। দীর্ঘ ১৭ বছর পর সমাবর্তন হয়েছে। ৭ বছর বন্ধ থাকার পর গত বছর থেকে নিয়মিত ডায়েরি প্রকাশ হচ্ছে। ক্যাম্পাসে অনেক অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে। উপাচার্য বিশ^বিদ্যালয়কে আর্ন্তজাতিকীকরণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এসব কারণে কোনো স্বার্থান্বেষী মহল ঈর্ষান্বিত হওয়া স্বাভাবিক। ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘উপাচার্য যেভাবে ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন তাতে আমার কাছে মনে হয়েছে এ ঘটনার পেছনে কোনো মাস্টার মাইন্ডার (মূল হোতা) আছে। আমরা চাই, ওই মাস্টার মাইন্ডারকে খুঁজে বের করা হোক এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক।’
পরিসংখ্যান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আলতাফ হোসেন বলেন, ‘বর্তমান ভিসি স্যার ক্যাম্পাসে অনেক ভালো কাজ করছেন। তিনি বিশ^বিদ্যালয়ের অনেক অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করেছেন। স্যারের এসব কাজে স্থানীয়, অন্য ব্যক্তি বা গোষ্ঠী রুষ্ট হওয়া স্বাভাবিক। এ ঘটনার পর থেকে উপাচার্যের চলাফেরায় আরও সতর্ক হওয়া উচিত। প্রয়োজনে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা নেয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন এই শিক্ষক।
এদিকে, এ ঘটনার পর থেকে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন শিক্ষকরা। তারা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিরাপত্তা জোরদার করার দাবি জানিয়েছেন। উপাচার্যের ওপর হামলার ঘটনাকে দুঃখজনক ও ন্যাক্কারজনক মন্তব্য করে বিশ^বিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক শাহজাহান ম-ল বলেন, ‘উপাচার্য ক্যাম্পাসের অভিভাবক। তিনিই যদি নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন তাহলে আমরা সাধারণ শিক্ষকদের নিরাপত্তা কোথায়। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ঘটনাটি অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক। পুলিশ প্রশাসনের উচিত এ ঘটনায় যারাই জড়িত থাকুক তা দ্রুত উৎঘাটন করা।
২০১৬ সালের ২১ আগস্ট ১২তম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান অধ্যাপক হারুন উর রশিদ আসকারী। তিনি দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে ক্যাম্পাসে আমূল পরিবর্তন এসেছে। আগে বিভাগভেদে দুই থেকে তিন বছরের সেশনজট থাকলেও বর্তমানে সেশনজট নেয় বললেই চলে। কর্মঘন্টা দুপুর দুই থেকে বাড়িয়ে বিকেল চারটা করা হয়েছে। দেড়যুগ পর ক্যাম্পাসে বিদেশি শিক্ষার্থী হয়েছে। দীর্ঘ ১৫ বছর পর গত ৭ জানুয়ারি বিশ^বিদ্যালয়ের চতুর্থ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। ২০০৯ সাল থেকে ডায়েরি প্রকাশনা বন্ধ থাকলেও গত বছর থেকে নিয়মিত ডায়েরী প্রকাশ হচ্ছে। দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মটারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কারণে দফতরগুলোতে দুর্নীতি কমে এসেছে। বর্তমান উপাচার্য নিয়োগের পর ক্যাম্পাসে অবকাঠামোগত অনেক উন্নয়ন হয়েছে। ৫শত কোটি টাকার মেগা প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায়। সম্প্রতি বিশ^বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপন করা হয়েছে।