ফর্সা হতে গিয়ে অসংখ্য তরুণীকে দিতে হচ্ছে খেসারত

মানুষ সুন্দরের পূজারি। সুন্দর কোনটি? বিতর্ক বিস্তর থাকলেও পত্র পত্রিকায় পাত্রি চাই বিজ্ঞাপনে যখন ফর্সার চাহিদা বেশি, তখন তরুণীদের মধ্যে গায়ের রঙ ফর্সা করা প্রসাধনীর কদর তো বাড়তেই পারে। এই সুযোগটাই নেয় প্রসাধনী প্রস্তুতকারক কিছু প্রতিষ্ঠান। যার পরিণতি কোনো জাতি বা সমাজের জন্য সুখকর নয়, বরঞ্চ বহু নারীর জন্য দুঃখ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। প্রতিকার? বিশ্বের কিছু দেশে এ ধরনের চটকদার বিজ্ঞাপনই শুধু নয়, রঙ ফর্সা করা ক্রিম বিক্রি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে বাজারের ওপর কড়া নজরদারি শুরু করেছে। আমাদের দেশে তেমন উদ্যোগ তো নেই-ই, ন্যূনতম সচেতন করার মতোও কোনো কর্মসূচি হাতে নিয়ে তা পালনের নজির মেলে না।
বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতায় সৌন্দর্য পরিমাপের মাপকাঠি কখনোই গায়ের রঙ ফর্সা দেখে না। কে কতোটা নিজেকে মেলে ধরতে পারছে, মেধাচর্চায় কে কতোটা এগিয়ে ইত্যাদি। যদিও সুন্দরী প্রতিযোগিতার আড়ালেও ওই প্রসাধনী সামগ্রী বিক্রিরই গভীর চক্রান্ত লুকিয়ে। তবুও বিবেকের দংশন এড়াতে ওরাও ফর্সা বা ত্বকের স্বাভাবিক সৌন্দর্য মূল্যায়ন করে। গায়ের রঙ ফর্সা বা ত্বকের উজ্জ্বলতা আনতে প্রসাধনী প্রয়োগের চেয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাই যে অতীবগুরুত্বপূর্ণ তা স্বাস্থ্য বিজ্ঞান বহুভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়েছে বলেই প্রসাধনী বর্জনের আহ্বান জানানো হয়। গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের যে মন্তব্য তুলে ধরা হয়েছে তাতেও স্পষ্ট, ত্বকের পরিচর্যা মানে ত্বকবিবর্ণ করার প্রসাধনী ব্যবহার নয়, ত্বকের সহনীয় মাত্রার সাবান দিয়ে নিয়মিত পরিষ্কার করা। শীতের টানে প্রয়োজনে পরিমিত অলিভওয়েল ও গ্লিসারিন ব্যবহার করা যেতে পারে। তাও মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার ক্ষতির কারণ। আর রঙ ফর্সা বা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে কেমিকেল যুক্ত নানা নামের নানা প্রকার ক্রিম বা প্রসাধনী ব্যবহার করা হয় তা হলে ত্বকের বারোটা বাজতে বাধ্য। ক্যান্সার পর্যন্ত হওয়ার ঝুঁকি। এই যখন প্রসাধনী ব্যবহারের পরিণতি তখন ওইসব ক্ষতিকর প্রসাধনী প্রস্তুত, আমদানি ও বিক্রি বন্ধের উদ্যোগ নেই কেন?
ত্বকের উজ্জ্বলতা কিম্বা গায়ের রঙ ফর্সা করে যতোটা না নিজেকে সুন্দর করা যায়, তার চেয়ে বহুগুণ বেশি সুন্দর হওয়া যায় বা তার স্বীকৃতি মেলে নিজের উৎকর্ষ মেলে ধরার মাধ্যমে। একজন রূপবতী বলে দাবি করা কারোর মুখে কুৎসিত কথা যেমন আনন্দঘন পরিকেশকে মুহূর্তেই বেদনার্ত করতে পারে, তেমনই সুন্দর বলে দাবি না করা কারোর মুখে চমৎকার কথা চোখের পলকে বিতাড়িত করতে পারে গ্লানি। তাছাড়া ত্বকের স্বাভাবিক সৌন্দর্য ধরে রাখার মধ্যে যে লাবণ্য-মাধুর্য মেলে প্রসাধনী বা অন্য কিছুর প্রলেপে সাময়িক সং ফুটলেও আখেরে চরম মূল্যই দিতে হয়। হুজুগে না মেতে এ বিষয়ে যতোটা সতর্ক থাকা যায় ততোই মঙ্গল।