মেহেরপুরে সড়ক দুর্ঘটনা রোধকল্পে করণীয় শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা-সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করতে হলে সড়কে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে হবে

 

মেহেরপুর অফিস: সড়ক দুর্ঘটনারোধে সড়কগুলোতে ট্রাফিক আইন মেনে চলাসহ অন্যান্য শৃঙ্খলা নিশ্চিত করার তাগিদ দিলেন বক্তারা। গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে ১০টার দিকে মেহেরপুর জেলা প্রশাসক সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত সড়ক দুর্ঘটনা রোধকল্পে আলোচনায় এমন দাবি করে বিভিন্ন সুপারিশ ও অভিযোগ উত্থাপন করা হয়। জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) মেহেরপুর এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে উপস্থিত ছিলেন সরকারি বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তা, যানবাহন চালক, মালিক ও শ্রমিক নেতৃবৃন্দ। প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জেলা প্রশাসক পরিমল সিংহ বলেন, যানবাহন চালক, মালিক ও জনগণের পারস্পরিক সুসম্পর্ক সৃষ্টি করতে হবে। চালকদের মনে রাখতে হবে তারা অনেকগুলো জীবন নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছেন। এ বিষয়ে তাদেরকে আরো সচেতন হওয়া জরুরি। অপরদিকে জনগণকে সড়কে চলাচলের নিয়ম-কানুন শেখাতে বিআরটিএ কর্তপক্ষকে তাগিদ দেন তিনি।

অনুষ্ঠানে বক্তব্যে কয়েকজন বাসচালক বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার জন্য সব সময় চালককে দায়ী করা হয়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী হচ্ছেন পথচারী। অপরদিকে ভাঙাচোরা সড়ক, অনিয়ন্ত্রিত অবৈধ যানবাহন ও ট্রাফিক আইন মেনে না চলায় দুর্ঘটনা ঘটছে। কিন্তু চালকদের ঘাতক হিসেবে উল্লেখ করা হয়। চালকের লাইসেন্স প্রাপ্তিতে দীর্ঘসূত্রিতা ও পথে পথে পুলিশের চাঁদাবাজিরও অভিযোগ তোলেন তারা। গুরুত্বপূর্ণ সড়কে অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধের দাবি জানিয়ে চালকরা আরো বলেন, দুর্ঘটনার কারণ নির্ণয় না করেই চালকদের মারপিট করা হয়। পুড়িয়ে দেয়া হয় যানবাহন। অনাকাঙ্ক্ষিত এই পরিস্থিতি এড়াতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তারা। স্বাগত বক্তব্যে বিআরটিএ খুলনা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক আশরাকুর রহমান বলেন, ৬০ কিলোমিটার গতি সম্পন্ন কোন যানবাহন এক সেকেন্ডে ৪০-৫০ হাত অতিক্রম করে। এ সময় কোনো চালক মোবাইলফোন দেখতে কিংবা রিসিভ করতে চাইলেও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই গাড়ি চালানোর সময় অবশ্যই মোবাইলে কথা বললে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা বেড়ে যায়। প্রত্যেক চালকের ডায়াবেটিস পরীক্ষার অনুরোধ করে তিনি বলেন, দেশের বাস্তবতায় চালকরা তেমন বিশ্রাম পান না। শারীরিকভাবে দুর্বল হলে সেই চালকের গাড়ি না চালানোর পরামর্শ দেন তিনি। বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম রসুল বলেন, সড়ক দুর্ঘটনারোধকল্পে বর্তমান সরকার নানামুখি কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। আমাদের সড়কগুলো প্রশ্বস্ত হচ্ছে। তবে জনগণকে পথচলাচলে সচেতন করা না গেলে সড়ক দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব নয়।

সভাপতির বক্তব্যে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শেখ ফরিদ আহমেদ বলেন, কেউ আপনজন হারালে সেই জানে তার কি ব্যথা। অন্য মহামারীর চেয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিনের যে মৃত্যুর মিছিল তা কোনো অংশে কম নয়। মানুষের অবচেতন মনের কারণে দুর্ঘটনা ঘটে। তাই চালকদের যেমন আরও দায়িত্বশীল হতে হবে তেমনই সড়কে চলাচলকারী সবাইকে নিয়ম-কানুন মেনে সদা সতর্ক হয়েই পথ চলার অনুরোধ করেন তিনি। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী আজিম উদ্দীন সর্দ্দার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ। বক্তব্য রাখেন মেহেরপুর প্রেসক্লাব সভাপতি আলামিন হোসেন, জেলা ট্রাক-মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান রানা, আঞ্চলিক পরিবহন কমিটির সদস্য আসকার আলী, মোটরশ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি আহসান হাবীব সোনা ও ট্রাক এবং ট্রাঙ্কলরি শ্রমিক ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক আবু হোসেন খান বাবু।