বিদ্যালয় ছেড়ে বন্ধুর কোলে বান্ধবী : গাংনীতে পুলিশের অভিযানে আটক ৫

 

গাংনী প্রতিনিধি: ছেলেমেয়ে বিদ্যালয়ে গেছে। পরিবার নিশ্চিত। কিন্তু ক্লাস হচ্ছে তো অন্য জায়গায়। জুগিরগোফা বঙ্গ এগ্রো কমপ্লেক্স মৎস্য খামারের নির্জনে। প্রেমিকের কোলে মাথা রাখা প্রেমিকা। রসিকতা করে স্থানীয়রা তাই বললেন, ক্লাসরুম ছেড়ে খামারের নির্জনে প্রেমিকের কোলে মাথা রেখে প্রেমিকারা ক্লাস করে। এলাকার প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন খামারে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ করে বলেন, প্রতিদিনই স্কুল কলেজ ছাত্রছাত্রীসহ বিভিন্ন বয়সী নারী পুরুষ এখানে সময় কাটায়। গতকাল সোমবার সকালে খামার থেকে গাংনীর একটি বিদ্যালয়ের তিন ছাত্রীসহ তাদের দুই বন্ধুকে আটক করে পুলিশ। পুলিশের অভিযানের পর খামারে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে এলাকার মানুষের মাঝে তীব্র সমালোচনার ঝড় শুরু হয়।

গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, স্কুল-কলেজ ফাঁকি দিয়ে কতিপয় প্রেমিক-প্রেমিকা জুগিরগোফা বঙ্গ এগ্রো কমপ্লেক্স মৎস্য খামারের নির্জনে বসে থাকে। সেখানে অনেকেই অনৈতিক কাজেও জড়িয়ে পড়ে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সেখানে বিভিন্ন বয়সী কপোত-কপোতী অবস্থান করে বলে অভিযোগ রয়েছে। এর ভিত্তিতে গতকাল সকালে এএসআই মকবুল হোসেন সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে খামারে অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় খামারের নির্জন এলাকা থেকে গাংনীর একটি বিদ্যালয়ের তিন ছাত্রী, তাদের দুই প্রেমিকে আটক করা হয়। অবশ্য দুপুরে তাদের অভিভাবক ও প্রধান শিক্ষকের মুচলেকায় ছেড়ে দেয়া হয়। পরবর্তীতে এমন কাজ আর হবে না বলে তারা লিখিত মুচলেকায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অভিযান পরিচালনাকারী এএসআই মকবুল হোসেন বলেন, দুই ছাত্রী তাদের প্রেমিকের কোলে শুয়ে ছিলো। অপরজন প্রেমিকের জন্য অপেক্ষা করছিলো। ওই মুহূর্তে তাদের আটক করা হয়। গ্রামের প্রধান সড়ক থেকে অনেক নির্জন স্থানে অবস্থান করায় বাইরে থেকে টের পাওয়া যায় না। তবে খামারটিতে প্রতিনিয়ত অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে বলেও জানান তিনি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গ এগ্রো কমপ্লেক্স মৎস্য খামারের স্বত্বাধিকারী হচ্ছেন জুগিরগোফা গ্রামের হেদায়েত উদ্দীন এ্যালবার্ট বিশ্বাস। বিশাল এলাকাজুড়ে পুকুর। পুকুরের পাড়ে গাছগাছালিতে মনোরম পরিবেশ। তাই এখানে বনভোজনসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষ বেড়াতে যান। কিন্তু এর আড়ালে যে অনৈতিক কর্মকাণ্ড চলছে তা প্রথমে টের পায়নি গ্রামবাসী। সম্প্রতি বিষয়টি আলোচিত হলেও খামার কর্তৃপক্ষ তাতে কর্ণপাত করেনি।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বলেন, খামারটিতে প্রবেশে ১০ টাকা টিকিট নেয়া হয়। এর তদারকি করেন ব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলাম। তিনি সার্বক্ষণিক খামারে দায়িত্ব পালন করেন। ১০ টাকা টিকিটের পাশাপাশি বাড়তি টাকা দিলেই কপোত-কপোতি খামারে প্রবেশের সুযোগ পায়। ব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলাম নিজস্ব লোকজনের মাধ্যমে পাহারা দিয়ে তাদের নির্জনে সময় কাটানোর ব্যবস্থা করেন। এলাকার মানুষ বিষয়টির প্রতিবাদ করলেও তিনি দাম্ভিকতা দেখিয়ে এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষের আনাগোনা লক্ষ্য করা যায় উল্লেখ করে স্থানীয়রা আরো বলেন, প্রথমে খামারটি ছিলো দর্শনার্থীদের জন্য একটি ভালো স্থান। কিন্তু বর্তমানে তা খারাপ কাজের স্থান হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছেলেমেয়েদের পাশাপাশি বয়স্ক নারী-পুরুষরাও বাড়তি টাকা দিয়ে সেখানে সময় কাটান। এতে এলাকার পরিবেশ নষ্ট হলেও কর্ণপাত করেন না খামার কর্তৃপক্ষ। তাই খামারটিতে অব্যাহত অভিযান ও অনৈতিক কাজের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পুলিশের দৃষ্টি কামনা করেছে এলাকাবাসী।