চুয়াডাঙ্গায় তিন বছরে খুন ১১২ অপমৃত্যু ৫৫১ : সিংহভাগই অপমৃত্যু পারিবারিক কলহ ও বাল্যবিয়ে

 

নজরুল ইসলাম: চুয়াডাঙ্গায় ৩ বছরে খুনের ঘটনা ঘটেছে ১১২টি। অপমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ৫৫১টি। আর যত মানুষ অপমৃত্যুর শিকার হয়েছে তার অর্ধেকের বেশি আত্মহত্যাজনিত কারণে। আত্মহত্যার পেছনে নানা কারণের মধ্যে রয়েছে বাল্যবিয়ে, যৌতুক, বিবাহ বিচ্ছেদ। আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে অধিকাংশ বয়সই ৩০ বছরের নিচে বলে জানা গেছে।

চুয়াডাঙ্গা পুলিশ অফিসের রিপোর্ট অনুযায়ী জানুয়ারি ২০১৪ থেকে ডিসেম্বর ২০১৬ পর্যন্ত জেলার ৪ উপজেলায় খুনের ঘটনা ঘটেছে ১১২টি। আত্মহত্যা বা অপমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ৫৫১টি। যার মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় ১৮৮টি, দামুড়হুদা থানায় ১১৪টি, জীবননগর থানায় ৮৫টি এবং আলমডাঙ্গা থানায় ১৬৪টি। এর মধ্যে সর্বাধিক চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ১৮৮ জনের অপমৃত্যু হয়েছে। অপমৃত্যুর মধ্যে রয়েছে গলায় ফাঁস, বিষপান এবং অন্যান্য কারণ। আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে নারীর সংখ্যা বেশি। আত্মহননকারীদের অধিকাংশর বয়স ৩০ বছরের নিচে। তবে প্রশাসনিক ঝামেলা এড়াতে অনেক অত্মহত্যার ঘটনা পুলিশ রেকর্ডে আসেনি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আত্মহত্যার কারণ বেকারত্ব, পারিবারিক কলহ, প্রেম-বিরহ, ইভটিজিং বিবাহ বিচ্ছেদ প্রভৃতি। মানসিক সমস্যাগ্রস্ত অত্যন্ত আবেগি চরিত্র ও জেদি প্রকৃতির মানুষের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। এছাড়া এখন ছোটখাটো বিষয়েও মানুষ অত্মহত্যা করছে। বর্তমানে চুয়াডাঙ্গা জেলায় খুনের চাইতে আত্মহত্যা জনিত মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি।

কারণ হিসেবে জানা গেছে, প্রত্যাশার ব্যত্যয় ঘটলে তরুণ-তরুণীরা আত্মহত্যা করছে। চাওয়া-পাওয়ার কমতি হলেও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে। এমন কিছু আত্মহত্যার ঘটনা রয়েছে যারা পছন্দের জিনিস না পেয়ে আত্মহত্যা করেছে। বর্তমানে ঠুনকো বিষয়ে মতপার্থক্যর কারণেও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে থাকে। সামাজিক অস্থিরতা আত্মহত্যা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধন নড়বড়ে হওয়ার কারণে আত্মহত্যার সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে মানুষ অনেক বেশি ভোগবাদী হয়ে উঠেছে। সামান্য না পাওয়ার ঘটনা ঘটলে মানুষ রিঅ্যাক্ট করছে, মানসিক ভারসাম্য হারাচ্ছে। তবে আত্মহত্যার জন্য বাল্যবিয়ে অন্যতম কারণ বলে সচেতন মহল মনে করছেন।

চুয়াডাঙ্গা জেলার মানুষের মাঝে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি হওয়ার কারণ তারা সংগ্রামী নয়। সংগ্রামী মানুষ সব সময় বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে লড়াই করে। কিন্তু সহজ জীবনযাপনে অভ্যস্ত হওয়ার কারণে জেলার মানুষ বেশি আবেগি। যে কারণে সামান্য কারণে তারা আত্মহত্যা করছে। সামাজিক নৈরাজ্যের পাশাপাশি পারিবারিক অস্থিরতার কারণে আত্মহত্যার সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বেড়ে চলেছে। যৌথ পরিবার ভেঙে যাচ্ছে। মা-বাবা বা পরিবারের সদস্যরা সন্তানদের সময় দিচ্ছেন না। বিপদে কেউ কাউকে পাশে পাচ্ছেন না। প্রতিবেশী বা কাছের আত্মীয়-স্বজনরা এখন কেউ কারো খোঁজ-খবর রাখেন না। স্ব-স্ব জায়গা থেকে বর্তমান প্রজন্মকে পারিবারিক, প্রাতিষ্ঠানিক ও ধর্মীয় শিক্ষা দিতে পারছে না। এছাড়া তথ্য প্রযুক্তির নেতিবাচক ব্যবহারও কিছু কিছু আত্মহত্যার জন্য দায়ী। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে অব্যশই পারিবারিক বন্ধন মজবুত করতে হবে, অ্যাকাডেমিক শিক্ষা ও নৈতিক শিক্ষর মান বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিতে হবে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন।

চুয়াডাঙ্গা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলায়েত হোসেন বলেন, অসাভাবিক বা অকাল কোনো মৃত্যুই আমাদের কাম্য না। তার পরও গত ৩ বছরে খুনের ঘটনা একটু বেশি ঘটলেও ২০১৬ সালে খুনের ঘটনা অনেক কম। পুলিশের তৎপরতা জোরালো ছিলো বলেই খুনের ঘটনা কম ঘটেছে। তবে বেশির ভাগই খুনের ঘটনা ঘটেছে নানা বিষয়ে বিরোধের জেরধরে এবং আত্মহত্যা ঘটেছে বাল্যবিয়ে, যৌতুক, বিবাহ বিচ্ছেদ পারিবারিক মান অভিমানের জেরধরে।