শারীরিক প্রতিবন্ধী নীল চাঁদের সংসার চিত্র

শিশু দু কন্যা পথের পাশের ডিম বিক্রেতা
কামরুজ্জামান বেল্টু: নীল চাঁদ শারীরিক প্রতিবন্ধী। তাই বলে ছেলে সন্তানের আশা করবে না? এক ছেলে হারিয়ে আর এক ছেলের আশায় আশায় সন্তান নিয়েছেন ৪টা। অবশ্য আরো যে হবে না তাও হলফ করে বলা যাবে না। অথচ টানাটানির সংসারে সংগ্রাম করতে হচ্ছে শিশু দু বোনকে। আর ওদের বড় বোন? বাল্যবিয়ের শিকার হয়ে ৬ মাসের মাথায় স্বামীর ঘর ছেড়ে প্রতিবন্ধী পিতার বাড়ি ফিরতে বাধ্য হয়েছে। কষ্টে কাটানো ৬ সদস্যের এ পরিবারটি বসবাস করে চুয়াডাঙ্গা হাটকালুগঞ্জের রাফিদ পোল্ট্রি ফিডের পাশে। এ ফিড মালিকের দয়ায় পাওয়া প্লাস্টিক কারখানায় চাকরির সুবাদে শারীরিক প্রতিবন্ধি নীল চাঁদ মাস গেলে এখন মায়নে পাচ্ছেন ৬ হাজার। এতে অবশ্য না খেয়ে থাকতে হচ্ছে না কারো।
নীল চাঁদের স্ত্রী বিলকিস খাতুন বললেন, ‘ভালোই চলছিলাম। মেয়েকে অল্প বয়সে বিয়ে দিতে গিয়ে ধার-দেনা হয়েছে। সে কারণে সংসারে টানাটানিটা থেকেই গেছে। তা না হলে ওনার মাস গেলে মায়নে আর আমাদের মা মেয়েরা মিলে সিদ্ধ ডিম বিক্রি করার লাভে ভালোই চলতো সংসার।’ গৃহকর্তা নীল চাঁদ শিশুকাল থেকেই প্রতিবন্ধী। পোলিও নাকি অন্য কিছু তা স্পষ্ট করে বলতে পারেন না। তবে ছোটবেলায় জ্বরের পর হাত ও পা অচল হয়ে পড়ে। সেই থেকেই পঙ্গু। বিয়ে হলো। সংসারে এক ছেলে এক মেয়ে হলো। ৮ বছর বয়সে মারা গেলো ছেলেটা। এরপর ছেলের আশায় সংসারে এলো আরো তিন মেয়ে। ফলে সংসারে ভারী হওয়ে উঠলো। নীল চাঁদের স্ত্রী বিলকিস খাতুন ডিম কিনে সিদ্ধ করে মেয়েদের সাথে নিয়ে রাস্তার পাশে বসে বিক্রি শুরু করলেন। বড় মেয়ের বিয়ে হলে মাকে কি আর ডিম বেচা মানায়? ছেড়ে দিলেন। হাল ধরেছে শিশু দু কন্যা। ডালিয়া ও আছিয়া দুজনে মিলে ডিম বিক্রি করে কেদারগঞ্জ নতুন বাজার মোড়ে। ডালিয়া ভিমরুল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির আর আছিয়া এবারই ওই বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। সম্প্রতি এদের নিকট থেকে ডিম কিনে খাওয়ার মাঝে আলাপচারিতায় উঠে আসে ওদের জীবনচিত্র।