উত্তরবঙ্গে তাপমাত্রা হিমাঙ্ক ছুঁইছুই ॥ চুয়াডাঙ্গার তাপও কমছে দ্রুত

তীব্র শীতে জনজীনন স্থবির ॥ শীতার্তদের দুর্ভোগ লাঘবে শীতবস্ত্র বিতরণ

স্টাফ রিপোর্টার: দেশের উত্তরাঞ্চলে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের কাছাকাছি নেমে এসেছে। চুয়াডাঙ্গায় রাখা ব্যারোমিটারের পারদও নামছে তরতর করে। ফলে হাড় কাঁপানো শীতে কাঁপছে গোটা পুরো পশ্চিম-উত্তরাঞ্চল। আবহাওয়া অধিদফতর পূর্বাভাসে বলেছে, আকাশ আংশিক মেঘলাসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্কই থাকবে কয়েকদিন। উত্তরবঙ্গের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহের পরিধি বাড়াচ্ছে ক্রমশ।
শীতের তীব্রতা থেকে রক্ষা পেতে অনেকেই আগুনের পাশে বসে উষ্ণতা নিচ্ছেন। কেউ কেউ অসতকর্তায় অগ্নিদ্বগ্ধও হচ্ছেন। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার চিৎলা ইউনিয়নের রুইথনপুরে আব্দুর রহমান চুলার পাশে বসে আগুন তাপাতে গিয়ে আগুনে পুড়েছেন। তাকে চুয়াডাঙ্গা সর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি মৃত এরশাদ ম-লের ছেলে।
গতকাল দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্র জয়পুরহাটের রাজারহাটে ৫ দশমিক ৫ ও সর্বোচ্চ টেকনাঠে ২৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। চুয়াডাঙ্গায় গতকাল সর্বনি¤œ ৯ দশমিক ২ ও সর্বোচ্চ ২২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। উত্তরে হিম বাতাসের মাঝারি শৈত্যপ্রবাহের কারণেই তাপমাত্রা দ্রুত হ্রাস পেয়েছে। কনকনে শীতে দরিদ্র-অসহায় মানুষের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। শিশু ও বৃদ্ধসহ অনেক মানুষ শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। দুর্ভোগ লাঘবে সরকারি বেসরকারিভাবে গতকালও চুয়াডাঙ্গায় শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। অপরদিকে গত কয়েক দিনের শীতের প্রকোপের কারণে পুরাতন কাপড়ের দোকানে দরিদ্র ও হতদরিদ্র মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা গেলেও বিক্রেতাদের মুখে উচ্চারিত হচ্ছে হতাশার বাণী। চুয়াডাঙ্গা পোস্ট অফিস এলাকার এক শীতবস্ত্র বিক্রেতা মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, ক্রেতাদের অনেকে দোকানে ভিড় জমালেও তাদের অধিকাংশই না কিনে ফিরছেন খালি হাতে। তাদের অভিমত, আর ক’দিনই বা আছে শীত!
তীব্র শীতে কাঁপছে হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত দিনাজপুর-রংপুরসহ দেশের উত্তরের জনপদ। প্রচ- শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। দেখা দিয়েছে শীতজনিত বিভিন্ন রোগ-বালাই। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আলুসহ বিভিন্ন ফসল। দিনাজপুরে শুক্রবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৭ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটিই এই অঞ্চলে (দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়) এ মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। অন্যদিকে গতকাল রংপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
চুয়াডাঙ্গা বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্রীদের উদ্যোগ শীতার্তদের মাঝে ১২০ শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। বিভিন্ন মাদরাসা ও এতিমখানায় এ শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়। গতকাল শুক্রবার বেলা সাড়ে ১০টার দিকে চুয়াডাঙ্গা বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্রীদের উদ্যোগে ১২০ জন শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়। সকালে বুজরুকগড়গড়ি দারুস সালাম মাদরাসাসহ কয়েকটি মাদরাসা ও এতিমখানায় ৬০টি কম্বল ও ৬০টি সোয়েটার বিতরণ করে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক স্বপন কুমার। সহকারী প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম, অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী মিথিলা ফাহরিয়া, নুসরাত আরা অরিন, মারিয়া জামান, জান্নাতুল ফেরদৌস ইফাত, সাদিয়া ইসলাম মৌ, আফরা আনান স্বর্ণালী সহ সামিয়া রহমান প্রাপ্তি।
জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, শীত মরসুমের শেষ ভাগে এসে অবশেষে হাঁড় কাঁপানো শীতের কবলে পড়েছে জীবননগরবাসী। গতকাল শুক্রবার সারাদিনই বয়ে যাওয়া লু হাওয়ায় হাঁড়ে কাঁপন ধরাই। তীব্র এ শীতের কবলে পড়ে মানুষের পাশাপাশি পশুপাখির জীবন কাহিল হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে কষ্টের মধ্যে পড়েছে হতদরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষ। শীতবস্ত্রের অভাবে তারা খড়-কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। এদিকে শীতের প্রকোপ বৃদ্ধির কারণে শীতজনতিন রোগের মাত্রাও বৃদ্ধি পেয়েছে। নিউমোনিয়া ও কোল্ড ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। খেটে খাওয়া দিনমজুরের কনকনে ঠা-ায় কৃষিক্ষেতে কাজ করতে যেতে না পারায় পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।