কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন নির্বাচন ২১ জানুয়ারি

নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা ॥ দর্শনা মিছিলের শহরে পরিণত

দর্শনা অফিস: কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন নির্বাচন বরাবরই আলোড়ন সৃষ্টি করে থাকে। এ নির্বাচনের বাতাস শুধু দর্শনা শহরেই সীমাবদ্ধ থাকে না। এ বাতাস ছড়িয়ে পড়ে গোটা জেলার অনাচে-কানাচে। প্রার্থীদের দৌড়-ঝাঁপ, প্রচার-প্রচারণা নির্বাচনের আমেজ বাড়িয়ে তোলে। নির্বাচনের দিনক্ষণ নির্ধারণের অনেক আগে-ভাগেই প্রার্থী, ভোটার ও সমর্থকদের দলবদ্ধ মহড়াই শহরবাসীকে মনে করিয়ে দিচ্ছে কেরুজ নির্বাচনের কথা। সাধারণসভার পর থেকেতো যেন কোমর বেধে মাঠে নেমেছে সকলে। সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে প্রায় সবকটি সংগঠনের পক্ষে মিছিলের মহড়ার হিড়িক পড়ে যায়। দর্শনা যেন পরিণত হয় মিছিলের শহরে। প্রতিদিন প্রায় সবকটি সংগঠনের কর্মীসভা ও মধ্যাহ্নভোজ চলছে। তবে নির্বাচনে খরচের নেপথ্যে থাকেন মদ বিক্রি কেন্দ্রগুলোর এজেন্টরাই। প্রত্যেক সংগঠনের র‌্যালি ও কর্মীসভায় উপস্থিতির সংখ্যা দেখে বোঝায় মুশকিল প্রকৃত ভোটারের সংখ্যা কতো। মোট ভোটার সংখ্যা ১২শ না হলেও একেক সংগঠনে কর্মী উপস্থিতি ও মিছিলের জনবল যেন ১২শ পেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম। নিজের অবস্থান মজবুত বুঝাতেই এ কৌশল অবলম্বন করে থাকেন শ্রমিক নেতারা। সংগঠন কার্যালয় ও মিছিল-মিটিংয়ে ভোটারদের পাশাপাশি বহিরাগতদের অংশগ্রহণ লক্ষ্যণীয়। ১০ জানুয়ারি সাধারণসভায় ঘোষণা দেয়া হয় ২১ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন। ৫ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন পরিচালনা পর্ষদকে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে। স্বল্প সময়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রমে খানেকটা নাকানি-চুবানিতে পরিণত হয়েছে। তবুও নির্ধারিত সময়েই নির্বাচনের লক্ষ্যে ঘোষণা করা হয়েছে তফসিল।

জানা গেছে, ২০১৫ সালের ২০ জানয়ারি অনুষ্ঠিত হয়েছিলো কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের নির্বাচন। সে হিসেব মাথায় রেখেই বর্তমান পরিষদ ২১ জানুয়ারি নির্বাচনের দিনক্ষণ নির্ধারণ করেছে। কমিটি পরিসর কমানো সংক্রান্ত জটিলতার কারণেই মাত্র ১ দিন বেড়েছে। চলতি আখমাড়াই মরসুমের যাত্রা শুরুর আগেই নির্বাচনের লক্ষ্যে প্রার্থীদের যাত্রা শুরু হয়েছে। কেরুজ চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন নির্বাচনকে সামনে রেখে চলছে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা। শীতকে উপেক্ষা করে ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ধরনা দিচ্ছেন প্রার্থীরা। দিচ্ছেন প্রতিশ্রুতির ঝুলি। নির্বাচিত হলে সকলের দাবিই পূরণের আশ্বাসের কথা নতুন কিছু নয়। পুরাতন হলেও সকলকেই তালিকার ১ নম্বরেই রাখার প্রতিশ্রুতিটাও বেশ পুরোনো। প্রশ্ন উঠেছে সকলেই তালিকার ১ নম্বরে থাকলে তালিকার পরের নম্বরগুলোতে কাদের নাম থাকবে ? আসলে কেরুজ নির্বাচন মানেই চাওয়া-পাওয়া আর পাওয়া না পাওয়ার ক্ষোভ। এ ক্ষোভকে পুঁজি করেই সাধারণ ভোটারদের মধ্যে দল বদলের পালার ঘটনাতো বহুদিনের। এ পালায় পাল্ল¬া দিয়ে সুবিধা লুটে থাকে এক শ্রেণির সুবিধালোভী ভোটার। গত নির্বাচনে কেরুজ চিনিকলের হিসাব, প্রশাসন ভা-ার, স্বাস্থ্য বিধান, ইমারত, সেনিটেশন, হাসপাতাল, চোলাই মদ কারখানা, ডিস্টিলারি, বিদ্যুত ও কারখানা, প্রকৌশলী, পরিবহন, ইক্ষু উন্নয়ন, ইক্ষু সংগ্রহ বিভাগসহ বাণিজ্যিক খামারগুলোর শ্রমিক-কর্মচারীদের নিয়ে সর্বমোট ভোটার সংখ্যা ছিলো ১ হাজার ২৫৮ জন। এবার কমেছে ভোটার সংখ্যা। গতকাল বৃহস্পতিবার ঘোষণা করা হয়েছে নির্বাচনী তফসিল। কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান, চিনিকলের মহাব্যবস্থাপক (অর্থ) মোশারফ হোসেন, সদস্য সচিব, মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আকুল হোসেন, সদস্য আক্রাম হোসেন শিকদার, আব্দুল ফাত্তাহ ও ফিদা হাসান বাদশা স্বাক্ষরিত নির্বাচনী তফসিলে জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় নির্বাচনী এলাকার বিতরণ প্রকাশ করা হয়েছে। আজ শুক্রবার সকাল ১০টায় খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। আগামীকাল শনিবার সন্ধ্যায় ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তি বিষয়ে আপত্তি জানাতে পারবে ভোটাররা। পরশু রোববার চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। গত সোমবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টার পর্যন্ত প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে পারবেন। একই দিন দুপুর ১টা থেকে বিকাল ৩টার মধ্যে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে হবে। ওই দিনই বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র বাছাই শেষে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে। সেদিন রাত ৮টার মধ্যে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। পরদিন মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে। ২১ জানুয়ারি সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত কেরুজ হাইস্কুল কেন্দ্রে গোপন ব্যালোটের মাধ্যমে গ্রহণ করা হবে ভোট। নির্বাচনের আচরণবিধি মেনে চলার জন্য প্রার্থীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে। ইউনিয়নের ২৫টি পদের স্থলে এবার নির্বাচন হবে ১৩টি পদে। শ্রম আইনে এ পরিবর্তন করা হয়েছে। ফলে ৭টি ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা কমে ১ হাজার ১৪০ জন হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ নির্বাচনে সভাপতি পদে মাঠে রয়েছেন বর্তমান সভাপতি তৈয়ব আলী। তিনি তৈয়ব সংগঠনের কর্ণধর। সাবেক সভাপতি আজিজুল হকের শূন্যতা পূরণে তার ছেলে সবুজ মাঠে নেমেছেন গত নির্বাচন থেকেই। তিনি পিতার স্থান দখলে নিজের নামেই সংগঠনের আত্মপ্রকাশ করেছেন। এবারের নির্বাচনেও ফিরোজ আহম্মেদ সবুজ সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সূর্যসেনা শ্রমজীবী সংগঠনের চেয়ারম্যান ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি হাফিজুল ইসলাম হাফিজ, মোস্তাফিজুর সংগঠনের কর্ণধর সাবেক সহসভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান পুরোদমে সভাপতি পদে লড়াইয়ে মাঠে রয়েছেন। সাধারণ সম্পাদক পদে ৪ জনের নাম শোনা গেলেও মাঠে দেখা মেলে ৩ জনকে। এরা হলেন মাসুদ সংগঠনের কর্ণধর ইউনিয়নের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান মাসুদ, প্রিন্স সংগঠনের কর্ণধর সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম প্রিন্স ও সদ্য আত্মপ্রকাশ করা ইসমাইল সংগঠনের কর্ণধর ইসমাইল হোসেনকে। এছাড়া গত নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে আ. রব বাবু ও আতাউর রহমানের নাম শোনা গেলেও এবার তাদের নাম শোনা যাচ্ছে না। তবে পরিষ্কার জানা যায়নি তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়টি। ২ জন সহসভাপতির স্থলে ১ জন এবং ২ জন যগ্মসম্পাদকের স্থলেও এবার ১ জন নির্বাচিত হতে পারবেন। ৭টি ওয়ার্ডে ৯ জন সদস্য নির্বাচিত হওয়ার বিধান করা হয়েছে। ফলে ১৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ইউনিয়ন পরিচালনা করবে।

Leave a comment