আখের অভাবে দফায় দফায় কেরুজ চিনিকলে মাড়াই বন্ধ

 

হুমকির মুখে চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা

দর্শনা অফিস/বেগমপুর প্রতিনিধি: অনেকটা দেরিতে হলেও কেরুজ চিনিকল আধুনিকায়নের কাজ শুরু হয়েছে। সুফলে স্থলে কুফল ভর করেছে চিনি কারখানায়। আখের অভাবে দফায় দফায় মিলের মাড়াই বন্ধ রাখা হচ্ছে। দিনদিন লোকসানের বোঝা ভারী হয়েই উঠছে। এ বোঝার হিসেব গোপন রাখতে নোটিশ বোর্ডে লেখায় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সাশ্রয়নীতির আদলে এ কোনো নীতি তা বুঝতে কষ্ট হচ্ছে সাধারণ শ্রমিক-কর্মচারী ও আখচাষিদের। রাতের আঁধারে বিভিন্ন বাণিজ্যিক খামারের আখ পোড়ানো হচ্ছে। এতে কমছে চিনি আহরণের হার। ধারণা করা হচ্ছে এবার লোকসানের বোঝা স্মরণকালের রেকর্ড ভাঙতে পারে। গত ২৮ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয় চলতি আখমাড়াই মরসুম। প্রচুর পরিমাণ লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে লাভের আশায় যাত্রা শুরু করলেও যেন সে গুড়ে বালি পড়ার মতো অবস্থায় পরিণত হয়েছে। ১ লাখ মেট্রিকটন আখ মাড়াই করে সাড়ে ৭ হাজার মেট্রিকটন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্পকরপোরেশন কর্তৃপক্ষ। কেরুজ চিনিকলের নিজস্ব ২ হাজার ৭৫ একর জমিসহ ৭ হাজার ৬২০ একর জমিতে এবারের মরসুমে রয়েছে ৮৫ হাজার মেট্রিকটন আখ। ফলে ৯০ মাড়াই দিবসে ৮৫ হাজার মেট্রিকটন আখ মাড়াই করে প্রায় ৬ হাজার মেট্রিকটন চিনি উৎপাদন করা হতে পারে। চিনি আহরণের গড়হার নির্ধারণ করা হয়েছে শতকরা ৭ ভাগ। আখ মাড়াই মরসুম শুরু হওয়ার পরপর দফায় দফায় যান্ত্রিক ত্রুটি, ব্রেকডাউন ও নো-ক্যানের কবলে পড়ে সৃষ্টি হয়েছে হ-য-ব-র-ল অবস্থায়। অন্যদিকে ই-পূজির বেড়াজালে পড়েছে আখচাষিরা। আধুনিক পদ্ধতিতে পূর্জি বিতরণ ব্যবস্থা চালু করার কারণে সঠিক বণ্টনে বিঘিœত হচ্ছে। যে কারণেই মিলে আখ সরবরাহের ক্ষেত্রে দেখা দিয়েছে ত্রুটি। এ দিকে চাষিদের আখ আনতে না পারায় নো-ক্যানের সৃষ্টি হয়েছে কয়েক দফা।

সূত্র বলেছে, প্রতিবার নো-ক্যানের কারণে আখ মাড়াই বন্ধ হলেও মিলকর্তপক্ষকে কমপক্ষে ৫ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হয়। আখ শূন্যতা পুষাতে চিনিকলের নিজস্ব জমির আখ কর্তনের চেষ্টাও ভেস্তে যাচ্ছে। বর্তমান বাজারে ১২০ টাকা জোন হাজিরায় শ্রমিক পাওয়া দুষ্কর। যে কারণে উপায়ন্তর না পেয়ে রাতের আঁধারে মিলের নিজস্ব রোপণকৃত আখে আগুন ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে। শ শ বিঘা জমির আখের পাতা পুড়ে হচ্ছে ছাই। আগুনের তাপে আখের রস কমছে। চিনি আহরণের হার ব্যাপকভাবে নিচে নামছে। অনেকেই মন্তব্য করে বলেছে, এবার হয়তো লোকসানের ক্ষেত্রে স্মরণকালের রেকর্ড ভাঙতে পারে চিনিকল কর্তৃপক্ষ। আখ মাড়াইয়ের নোটিশ বোর্ডে হিসেব লেখা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। লাভের আসায় লোকসানের পথেই হাঁটছে মিল কর্তৃপক্ষ। মিলের সবকটি বিভাগের শ্রমিক-কর্মচারীদের ক্ষেত্রে যখন সাশ্রয়নীতির খড়ক চাপানো হচ্ছে, ঠিক তখনই মিলের একজন কর্মকর্তা মাসে ৫২ হাজার টাকায় ভাড়ায় গাড়ি নিয়ে চড়ছেন। তবে এটা কোন সাশ্রয়নীতির মধ্যে পড়ে এ প্রশ্ন শ্রমিক-কর্মচারীদের। এখনই সাশ্রয়নীতি প্রথা বাতিল করা না হলে চিনিকলের সবকটি বিভাগে উৎপাদনের ক্ষেত্রে ব্যাপক ধস নামতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে ভারী হতে পারে লোকসানের বোঝা। অনেকেই ধারণা করে বলেছে, কেরুজ চিনিকলটি ধ্বংসের গভীর পরিকল্পনা নয়তো? বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার বলে মন্তব্য করেছে সচেতন মহল।