আলমডাঙ্গার ভোদুয়ায় ৫০ বছরের দম্পতির দারুণ উপভোগ্য দিন : কারো কারো কটূক্তি
কেএ মান্নান: বরের বাড়ি নামিদামি বরযাত্রী হাজির। কনেসহ কনেপক্ষের লোকজনও হাজির বরের বাড়িতেই। আমন্ত্রণে কাজিও হাজির যথাসময়ে। বর-কনের নাতি-নাতনিরাও নাচা-নাচিতে ব্যস্ত। শুধু বাড়ি ঘিরেই নয়, মহল্লা জুড়েই উৎসবের আমেজ। হবেই না বা কেন? এ যে বুড়ো-বুড়ির পুনঃবিয়ে! বরপক্ষের খরচ জোগালেন দু ছেলে, আর কনেপক্ষের খরচ দিলেন ৪ মেয়ে। পাত পেড়ে খেলেন শতাধিক অতিথি।
পুনঃবিয়ে? নাকি বিয়ের ৫০ বছর পূর্তি? এ নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও বিয়ের সাজে বরের আসনে বসে চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার জামজামি ভোদুয়ার বীর মুক্তিযোদ্ধা তাইজেল শাহ লাজু লাজু চেহারা বললেন মায়ের ইচ্ছে পূরণ। সেটি কেমন? ৫০ বছর আগে পাঁচলিয়ার মৃত খোরশেদ ম-লের মেয়ে জোহরা খাতুনকে বিয়ে করি। তখন মায়ের ইচ্ছে ছিলো আত্মীয়স্বজনকে আমন্ত্রণ করে বড়সড় আয়োজন করে বরযাত্রী পাঠিয়ে ছেলের বিয়ে দেয়া। সেটা তখন হয়নি। অভাব সে সময় মায়ের ইচ্ছে পূরণ করতে দেয়নি। ইতোমধ্যে মা মারা গেছেন। তাকে? মায়ের ইচ্ছে পূরণে তো আর বাধা নেই। এখন দু ছেলে চাকরি করে। বড় ছেলে রবিউল ভোদুয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহারী। ছোট ছেলে উজ্জ্বল চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের দৌলাতদিয়াড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। ৪ মেয়েও তাদের স্বামী- সংসার নিয়ে সুখেই রয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধা ভাতাও পাচ্ছি নিয়মিত। এর মাঝে মনে হলো মায়ের সেই ইচ্ছে পূরণের কথা। স্বপ্নেও দেখলাম। বিষয়টি জানাতেই ছেলেমেয়েরা পেয়ে বসলো। ব্যাস! হয়ে গেলো আয়োজন। দিনটি যে এতো উপভোগ্য হবে তা ভাবতেও পারিনি। পোয়াতি বউ বাড়ি রেখে স্বাধীনতা যুদ্ধে গিয়েছিলাম। যুদ্ধ জয়ে করে যেদিন বাড়ি ফিরি, আজ সেই দিনটির কথা যেমন মনে পড়ছে তেমনই মনে হচ্ছে মা যদি থাকতো তাহলে তিনি হয়তো আমার চেয়ে অনেক অনেক বেশি খুশি হতো।
নিজ বাড়িতেই বীর মুক্তিযোদ্ধা তাইজেল ৫০ বছর আগে বিয়ে করা স্ত্রী জহুরা খাতুনের সাথে ধুমধামের সাথে পুনঃবিয়ের যাবতীয় আয়োজন করেন। আমন্ত্রণ জানান, তার সহযোদ্ধাসহ আশপাশের নামিদামি অনেকের। আমন্ত্রণে সাড়া দেন প্রায় সকলে। মোটা তাজা দুটি খাসি জবাই করে ধুমধামের সাথে পিতা–মাতাকে বর–কনে সাজিয়ে যখন ছেলেমেয়েরা উৎসবে মেতে ওঠেন, তখন নাতি–পুতিদের কেউ কেউ বিভ্রান্তের মধ্যে পড়লেও প্রতিবেশী বুড়ো–বুড়িদের বেশির ভাগই হেসেই কুটি কুটি। করো কারো কটূক্তি– একেই বলে বুড়ো বয়সে ভিমরতি।
গতকাল নিজ বাসভবনে ছাল্লাতালা সাজিয়ে আমন্ত্রিত অতিথির উপস্থিতিতে পুণঃসাজ নিলেন তিনি ও তার আদরের সহধর্মিণী জোহুরা খাতুন। তাই আলমডাঙ্গার মক্তিযোদ্ধা কমান্ড নেতৃবৃন্দসহ শতাধিক অতিথির কাছ থেকে দাম্পত্য সুখ ও পরিবার স্বজনদের জন্যে দোয়া পেয়ে তিনি তুষ্ঠ। বরযাত্রী হয়ে উপস্থিত এ পুনঃবিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়াজেদ আলী মাস্টার, নাজিমুদ্দিন, ইসাহক আলী, খবির উদ্দিন, ফজলুল হক, আব্দুল জব্বার, ওহিমুদ্দিন, রসিদ মাস্টার, বাদশা খন্দকার, মহাসিন আলী, জামাল উদ্দিন, শরিফ মুন্সি, বাবুল জোয়ার্দ্দার প্রমুখ। এ বিয়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। এলাকায় বিরূপ সমালোচনাও এখন কম হচ্ছে না। অবশ্য তাতে আয়োজকদের তেমন কিছু আসে যায় না।