হিলারী নাকি ট্রাম্প? রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা

আজকের মধ্যে জানা যাবে আমেরিকাবাসীর সিদ্ধান্ত

 

মাথাভাঙ্গা মনিটর: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ঐতিহাসিক নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকেই ৫০টি অঙ্গরাজ্যের ভোটাররা ভোট দিতে শুরু করেছেন। বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়। ভোট শুরু হওয়ার পরই পুরো বিশ্বের মানুষ ফল পেতে রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষায় আছেন। আজ বুধবারের মধ্যে দেশটির হোয়াইট হাউসের ৪৫তম বাসিন্দা কে হবেন তার অনানুষ্ঠানিক ফল জানা যাবে। যুক্তরাষ্ট্রে কোনো নারী প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন কি-না ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তার সিদ্ধান্ত জানাতে শুরু করেছেন মার্কিনীরা। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের জাতীয় জরিপে হিলারির প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা ৯০ শতাংশ বলে জানিয়েছে। আর রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ডোনাল্ড জে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে দ্বিতীয়বারের মতো কোনো  ‘অরাজনৈতিক’ ব্যক্তির হোয়াইট হাউসে প্রবেশের ইতিহাস সৃষ্টি হবে। মার্কিন সংবাদ মাধ্যম ইউএসএটুডে জানিয়েছে, নিউ হ্যাম্পশায়ারের ছোট্ট তিনটি শহরের ভোটে ট্রাম্প এগিয়ে আছেন। তবে চূড়ান্ত ভোটে ব্যাটেলগ্রাউন্ড স্টেট এবং হিস্পানিক ভোটাররা প্রভাব ফেলবেন বলে মনে করা হচ্ছে।

গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় ৬টি আলাদা আলাদা সময়ে ৫০টি অঙ্গরাজ্যে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। গতকাল গ্রিনিচ মান সময় সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে (বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টা থেকে ৮টা) ভোট শুরু হয়। ইউএসএ টুডে জানিয়েছে, নিউ হ্যাম্পশায়ারের তিনটি ছোট্ট শহর ডিক্সভিলি নচ, হার্টস লোকেশন ও মিলসফিল্ডে মধ্যরাতে ভোট শুরু হয়। ৩টি শহরের মোট ভোটার ১০০ জনের কম। এর মধ্যে ট্রাম্প পেয়েছেন ৩২ এবং হিলারি পেয়েছেন ২৫ ভোট। ১০০ জনসংখ্যার ডিক্সভিল নচে ভোটার আটজন। এখানে হিলারি ৪ এবং ট্রাম্প ২ ভোটপেয়েছেন। হার্টস লোকেশনে হিলারি ১৭-১৪ ভোটের ব্যবধানে জয় পান।   তবে মিসফিল্ডে হিলারি ট্রাম্পের চেয়ে ১২ ভোট কম পান। এসব শহরে ভোট শেষ হওয়ার এক মিনিটের মধ্যেই ফল ঘোষণা করা হয়। তিনটি শহর বাদে অন্য অনেক রাজ্যেই ভোট কেন্দ্র খোলার আগে ভোটারদের লাইনে দাঁড়াতে দেখা যায়। রিপাবলিকানপন্থী ইন্ডিয়ানা এবং কেনটাকি অঙ্গরাজ্যে সর্বপ্রথম ভোট গ্রহণ শেষ হবে। ইতোমধ্যেই প্রায় পাঁচ কোটি ভোটার আগাম ভোট দিয়েছেন।

নিউইয়র্কে ভোট হিলারির: হিলারি নিউইয়র্কের চাপ্পাকুয়াতে ভোট প্রদান করেন। হিলারির রানিংমেট টিম কেইন ভার্জিনিয়ায় এক ভোট কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ট্রাম্প এবং তার ভাইস প্রেসিডেন্ট ভোটদানের খবর পাওয়া যায়নি। তবে ট্রাম্পের নিউইয়র্কে ভোট দেয়ার কথা রয়েছে।

শেষ মুহূর্তের প্রচারণা: প্রচারণার শেষ মুহূর্তে ২ প্রার্থীই ব্যাটেলগ্রাউন্ড হিসেবে পরিচিত নর্থ ক্যারোলাইনা, পেনসিলভানিয়া ও মিশিগান চষে বেড়ান। হিলারি ‘একটি আশাবাদী, সমন্বয়বাদী এবং বড় হূদয়ের’ যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে আনার জন্য ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানান। আর প্রতিদ্বন্দ্বী ট্রাম্প তাকে ভোট দিয়ে ‘দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবস্থাকে পরাজিত করার এক অসামান্য সুযোগ’ না হারানোর জন্য আহ্বান জানান।

জয়-পরাজয়ের হিসাব-নিকেশ: গতকাল রয়টার্স/ইপসোসের শেষ মুহূর্তের জাতীয় জরিপে প্রকাশিত ফলে জানানো হয়, হিলারির জয়ের সম্ভাবনা ৯০ শতাংশ। সোমবার প্রকাশিত জরিপে জানানো হয়, হিলারির জয় নির্ভর করছে ৬ থেকে ৭টি অঙ্গরাজ্যে শ্বেতাঙ্গ, কৃষ্ণাঙ্গ এবং হিস্পানিক ভোটারদের ভোটদানের ওপর। ৫৩৮ ইলেক্টোরাল ভোটের মধ্যে বিজয়ীকে ২৭০টি পেতে হবে। জরিপে দেখা যায়, হিলারি (৪৫) ট্রাম্পের (৪২) চেয়ে পপুলার ভোটে তিন শতাংশ এগিয়ে আছেন। আর হিলারি ৩০৩ এবং ট্রাম্প ২৩৫টি ইলেক্টোরাল ভোট পেতে পারেন। ফ্লোরিডা, মিশিগান, নর্থ ক্যারোলাইনা এবং ওহাইওতে হিলারি-ট্রাম্পের জোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। পেনসিলভানিয়ায় হিলারি সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে। ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে হলে অধিকাংশ রাজ্যেই জয় পেতে হবে। ফ্লোরিডা, মিশিগান এবং পেনসিলভানিয়ার যে কোনো দুটি রাজ্যে যদি ট্রাম্প হেরে যান তাহলে হিলারির বিজয় ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। আর রিপাবলিকানপন্থী অ্যারিজোনায় ট্রাম্পকে অবশ্যই জিততে হবে। ট্রাম্পকে জেতার জন্য ২০১২ সালের চেয়ে শ্বেতাঙ্গ ভোটারদের বেশি পরিমাণে ভোট কেন্দ্রে আসতে হবে। আফ্রিকান-আমেরিকান এবং হিস্পানিক ভোটারদের সংখ্যা বেড়ে গেলে ট্রাম্পের জন্য তা দুঃখজনক খবর বলেই বিবেচিত হবে।

মঙ্গলবার গভীর রাতেই নর্থ ক্যারোলাইনার ভোটের ফল জানা যাবে। যদি হিলারি জয় পান তাহলে বুঝতে হবে এখানে গত নির্বাচনের মতোই আফ্রিকান-আমেরিকান ভোট পড়েছে। আগাম ভোটে অবশ্য হিলারি পিছিয়ে আছেন। এই রাজ্যে ট্রাম্প (৪৭) হিলারির (৪৬) চেয়ে এক পয়েন্ট ব্যবধানে এগিয়ে। শ্বেতাঙ্গ ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্প হিলারির চেয়ে ৩০ পয়েন্ট ব্যবধানে এগিয়ে। কিন্তু কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের মধ্যে হিলারি ৮৫ পয়েন্টের ব্যবধানে এগিয়ে আছেন।

ফ্লোরিডার ২৯টি ইলেক্টোরাল ভোট ট্রাম্পের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে যদি হিলারি জিতে যান তাহলে বাকি তিনটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য ওহাইও, মিশিগান এবং পেনসিলভানিয়ার মধ্যে একটি রাজ্যে জয় পেলেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন তিনি। বিপরীতে ট্রাম্পকে ৩টি রাজ্যেই জিততে হবে। ফ্লোরিডায় জিতলে ট্রাম্পকে ওহাইও এবং মিশিগানে জিতলেই হবে। ফ্লোরিডায় হিলারি (৪৮) ট্রাম্পের (৪৭) চেয়ে এক পয়েন্টের ব্যবধানে এগিয়ে। হিলারি ট্রাম্পের চেয়ে কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে ৭৫ ভাগ এবং হিস্পানিকদের মধ্যে ২০ ভাগ এগিয়ে আছেন। কিন্ত ট্রাম্প শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে হিলারর চেয়ে ৩০ ভাগ এগিয়ে। ফলে কৃষ্ণাঙ্গ এবং হিস্পানিকদের ভোটদানের ওপরই নির্ভর করছে এখানে কে জয় পাবেন।

মিশিগান এবং ওহাইওতে হিলারি ও ট্রাম্পের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। পেনসিলভানিয়ায় হিলারি ট্রাম্পের চেয়ে বেশ খানিকটা এগিয়ে। এই ৩ রাজ্যেও সংখ্যালঘু ভোটারদের হারের ওপরই জয়-পরাজয় নির্ভর করছে। অ্যারিজোনায় ট্রাম্প আগে এগিয়ে থাকলেও এখন ক্রমেই হিলারির দিকে ঝুঁকছেন ভোটাররা। অ্যারিজোনায় জেতার পরও তাকে উটাহতে জয়ের অপেক্ষায় থাকতে হবে। তবে তিনি এই রাজ্যে ৫ পয়েন্টের ব্যবধানে এগিয়ে আছেন। নির্বাচনে মার্কিন পার্লামেন্ট কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদ, গণর্ভর, মেয়র এবং অন্যান্য স্থানীয় নির্বাচনে ভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে। হিলারি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেই সমস্যার সমাধান হবে না। তার দলকে কংগ্রেসেও জয় পেতে হবে। কারণ কংগ্রেসে এখন রিপাবলিকান পার্টির সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। দেশটিতে এর আগে কোনো নারী প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ছিলেন না। আর এর আগে অরাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবে আইজেন আওয়ার প্রথমবারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন।