কালীগঞ্জ প্রতিনিধি: উপবৃত্তির টাকা বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ অভিভাবকদের কাছে জানানোর কারণে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের ছোট ভাটপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ৩৫ ছাত্রছাত্রীকে বেত্রাঘাতে আহত করা হয়েছে। ওই বিদ্যালয়ের টিউলি ম্যাডাম নামে শিক্ষার্থীদের কাছে পরিচিত শিক্ষিকা পড়া না পারার অভিযোগে এসব ছাত্রছাত্রীদের বেত্রাঘাত করেন। বেত দিয়ে মারপিটের সময় শিক্ষিকা ছাত্রছাত্রীদের ছোট লোক, ইতর, অর্থলোভী, ফকিরের বাচ্চা গালি দিয়ে তিরস্কার করে বলেন, পড়া পারিস না আবার উপবৃত্তির টাকা চাস। টাকা দিবো কী তোদের চেহারা দেখে। তোদের আজ মেরেই ফেলবো নীচু জাতের বাচ্চা। এ ঘটনায় বুধবার দুপুরে এলাকার শত শত অভিভাবক স্কুল ঘেরাও করে ওই শিক্ষিকার অপসারণসহ শিক্ষাথীদের মারপিট করার বিচার দাবি করেন। বর্তমানে শিক্ষিকা টিউলিপের মারপিটের ভয়ে ছাত্রছাত্রীরা স্কুলে যাচ্ছে না বলে একাধিক অভিভাবক অভিযোগ করেন। তবে ওই শিক্ষিকা ছাত্রছাত্রীদের গালি দিয়ে তিরস্কার করার কথা অস্বীকার করে বলেন, পড়া না পারার কারণে তাদের দুইটি করে বেত মেরেছি। ঘটনাটি নিয়ে এলাকাবাসী ফুঁসে উঠেছে। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ যেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
শিক্ষিকা টিউলির বেত্রাঘাতে যেসব ছাত্রছাত্রী আহত হয়েছে তারা হচ্ছে, ছোট ভাটপাড়া গ্রামের সাধন দাসের ছেলে ৫ম শ্রেণির ছাত্র সোহাগ (১১), একই গ্রামের নারায়ন দাসের মেয়ে পিংকি দাস (৯), সন্তোষ দাসের মেয়ে ৫ম শ্রেণির ছাত্রী বিথিকা দাস (১১), বিপেন দাসের মেয়ে ৫ম শ্রেণির ছাত্রী ঋতু দাস (১১), হরিদাসের মেয়ে মুন্নি দাস, আনন্দ দাসের মেয়ে ৩য় শ্রেণির ছাত্র ঋতুপর্না দাস (৯), রঞ্জন দাসের ৫ শ্রেণি পড়ুয়া চেলে রনি দাস (১১), ভবেন দাসের যমজ দুই মেয়ে সততা ও সমতা, অশোক দাসের ছেলে ৩য় শ্রেণির ছাত্র অমিত দাস (৯), সাধান দাসের ছেলে ২য় শ্রেণির ছাত্র সজল দাসসহ (৮) প্রায় ৩৫ জন। এদের মধ্যে সোহাগের হাত ভেঙে গেছে বলে অভিযোগ পাওযা গেছে। সরেজমিন স্কুলে গেলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। তারা তাদের সন্তানদের জামা খুলে আঘাতের ক্ষত স্থান দেখান এবং মারপিট করার বিচার দাবি করেন। ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবক শুকুর আলী, কি-না রাম দাস, সুফিয়া বেগমসহ একাধিক অভিভাবক অভিযোগ করেন, তাদের সন্তানদের ১ হাজার ২শ টাকা করে উপবৃত্তি দেয়ার কথা। কিন্তু কাউকে ৫০, কাউকে ১শ আবার কাউকে ৪শ বা ৮শ করে টাকা দিয়েছে। নিয়মিত স্কুলে উপস্থিত ও ভাল রেজাল্ট করলেও কি-না রামের ছেলে-মেয়ে কৃষ্ণ দাস ও অর্পনা দাস দুই জনকে মাত্র ২৫০ টাকা দিয়েছে বলে তার অভিযোগ।
অভিভাবকরা আরো জানান, তাদের সন্তানদের ছবি অন্য বইতে লাগিয়ে টাকা তোলা হয়েছে। আবার অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের ছবি তুলে স্কুলে দিলেও শিক্ষকরা তা নেননি। সেই ছবি ফেরত দিয়ে ছবি তোলা বাবদ তাদের কাছ থেকে ৩০ টাকা করে নেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে ছোট ভাটপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছুটিতে থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে সহকারী প্রধান শিক্ষিকা নিলুফার ইয়াসমিন জানান, একজন ছাত্র বা ছাত্রী মাসে একশত করে বছরে ১ হাজার ২শ করে টাকা উপবৃত্তির টাকা পাবে। কিন্তু ক্লাসে ৮৫ ভাগ উপস্থিতি, ৩৩ ভাগ নাম্বার না থাকলে এবং একই ক্লাসে দু বছর থাকলে সেসব ছাত্রছাত্রী পুরো টাকা পাবে না। এসব কারনে উপবৃত্তির টাকা বিতরণ নিয়ে সমস্যা হয়েছে।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার সালমা খাতুনের সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও ফোনটি বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মানোয়ার হোসেন মোল্ল্যা জানান, কেউ আমার কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়নি। মৌখিক অভিযোগ এসেছে, আমি সেটি মৌখিকভাবে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নিবো।