দৌলতপুরে এমপির ভাইয়ের পিটুনিতে নিহত হাসানের ময়নাতদন্ত হলেও মামলা হয়নি

 

দৌলতপুর প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ার দৌলতপুর আসনের এমপি রেজাউল হক চৌধুরীর ছোটভাই মিন্টু চৌধুরী ও তার ক্যাডারদের বেধড়ক গণপিটুনিতে স্থানীয় যুবক হাসান আলী (২৩) নিহত হয়েছেন। গত মঙ্গলবার দুপুরে দৌলতপুর উপজেলার সোনাইকুণ্ডি গ্রামে এমপির বাসভবনের লিচুতলায় এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। এদিকে অভিযুক্ত এমপির ভাই মিন্টু চৌধুরীর পরিবার ও পুলিশ হত্যাকাণ্ডটিকে ভিন্নখাতে নেয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে। এলাকাবাসী জানায়, চুরির অভিযোগে দৌলতপুর আসনের স্বতন্ত্র এমপি রেজাউল হক চৌধুরীর ভাই মিন্টু চৌধুরী সোনাইকুণ্ডি গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে হাসানকে ধরে নিয়ে আসে এবং তার নিজ বাড়ির আঙিনায় আটক রেখে ওই যুবকের ওপর চালানো হয় মধ্যযুগীয় নির্যাতন। নির্যাতন ও বেধড়ক মারপিটের এক পর্যায়ে যুবক হাসান গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। দৌলতপুর থানার এসআই সাঈদ হাসানকে পুলিশ প্রহরায় দৌলতপুর হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক হাসানের প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে রেফার্ড করেন। কিন্তু পুলিশ তাকে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা না নিয়ে এমপি পুত্র কলিন্স চৌধুরীর নির্দেশে পুলিশ হাসানকে মুমূর্ষু অবস্থায় পিয়ারপুর ইউপির ৩ নং ওয়ার্ডের সদস্য মিন্টু মেম্বারের জিম্মায় তুলে দেয়। এরপর বিকেলে তারাগুনিয়া ডাকবাংলোর প্রাচীরের পাশে থেকে পুলিশ হাসানের লাশ উদ্ধার করে। মুমূর্ষু ব্যক্তিকে পুলিশ চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে অন্যের জিম্মায় দেয়াকে যড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে দেখছে সাধারণ মানুষ। বুধবার দুপুরে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। এমপি পরিবার ও তাদের ক্যাডার বাহিনীর ভয়ে হাসানের পরিবার মামলা করতে সাহস পাচ্ছে না এবং তারা সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সাহস পায়নি। ঘটনার পর এমপির ভাই মিন্টু ও তার পরিবারের প্রত্যক্ষ যোগসাজশে পুলিশ নিহত যুবককে চোর ও মাদকাসক্ত বলে অপবাদ ও অপপ্রচার প্রকৃত ঘটনা ভিন্নখাতে নেবার চেষ্টা বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে। নিহত হাসান আলী উপজেলার হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নের সোনাইকুণ্ডি পশ্চিমপাড়া গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে। তার বিরুদ্ধে থানায় কোনো মামলা বা অভিযোগ নেই বলে দৌলতপুর থানা পুলিশ জানায়। নিহতের শরীরে আঘাতের অসংখ্য চিহ্ন রয়েছে। এছাড়া তার ডান পা ভেঙে ফেলা হয়েছে। এ ঘটনার পর এলাকার নিরীহ ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হলেও ভয়ে কেউ প্রতিবাদ কিংবা মুখ খুলছে না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আল্লারদর্গা এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানান, এমপির ভাই ও যুবলীগ নেতা টোকন চৌধুরী ইতঃপূর্বে প্রকাশ্যে ছাত্রদল নেতা খোকনকে গুলি করে হত্যা করেছিলো। সম্প্রতি যুবলীগ নেতা আক্কাস আলী হত্যাকণ্ডেও তাদের হাত রয়েছে বলে তারা জানিয়েছেন। এদিকে এমপির ভাই মিন্টু চৌধুরী নিহত হাসান চৌধুরীকে মারপিট ও নির্যাতনের ঘটনার সাথে জড়িত নন বলে দাবি করেছেন। দৌলতপুর থানার ওসি শাহিদুল ইসলাম শাহিন কৌশল অবলম্বন করে জানান, হাসানকে স্থানীয় লোকজন গণপিটুনি দিলে সে গুরুতর আহত হয়। পরবর্তীতে সে পথিমধ্যে মারা যায়। মাদক সেবনের কারণে নাকি গণপিটুনিতে সে নিহত হয়েছে তা ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর নিশ্চিত করে বলা যাবে। তবে গণপিটুনিতে নিহত প্রমাণিত হলে দোষীদের বিরুদ্ধে অবশ্যই হত্যা মামলা হবে বলে ওসি জানান।