দর্শনা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ভবন অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে

 

দর্শনা অফিস: চুয়াডাঙ্গা জেলার গুরুত্বপূর্ণ শহর হিসেবে দর্শনার পরিচিত রয়েছে ব্যাপক। এ শহরে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বসবাস। জেলার ঐহিত্যবাহি কেরুজ চিনিকল, কাস্টমস সার্কেল, কলেজ, হাট-বাজার, রেল স্টেশন, বন্দর ইয়ার্ডসহ অসংখ্যা সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। দর্শনাবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করণে ততকালীন বৃট্রিশ শাসনামলে স্থাপন করা হয় পুলিশ ফাঁড়ি। দর্শনা পুরাতন বাজার সংলগ্ন পরিত্যক্ত জমিদার বাড়িতে দীর্ঘদিন পুলিশ ফাঁড়ির কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। ভবনের জরাজীর্ণ অবস্থার কারণেই পুলিশ ফাঁড়ি স্থানান্তর করা হয়। পুলিশ ফাঁড়ি থেকে উন্নীত করে সংশি¬ষ্ট বিভাগ থেকে ঘোষণা দেয়া হয় পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে। দর্শনা পোষ্ট অফিসের সামনে সরকারি জমিতে নির্মাণ করা হয় দর্শনা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র ভবন। ১৯৯৯ সালের ২৪ জুলাই এ ভবনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন ততকালীন আ.লীগ সরকারের স্বরাষ্ট, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মো. নাসিম। সে থেকেই দর্শনা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু হয়। এর বছর ৫/৬ পরে পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র এলাকায় নির্মাণ করা হয় স্ট্যাফ ও অফিসার কোয়ার্টার। দুটি ভবনে ২ জন অফিসার ও ৬ জন কনস্টোবল পরিবার বসবাসের ব্যবস্থা রয়েছে। ভবন নির্মাণের পর ২/৩ মাস ওই ভবনে অফিসার ও কনস্টোবলদের বসবাস করতে দেখা গেলেও পরে কাউকে ওই কোয়ার্টারে বসবাস করতে দেখা যায়নি। কারণ হিসেবে জানা গেছে, সরকারের নিয়মানুযায়ি একজন পুলিশ সদস্যকে বাসভবনের ভাড়া বাবদ বেতন/ভাতার ৪০ শতাংশ কর্তনণ করে থাকে সংশি¬ষ্ট বিভাগ থেকে। এছাড়া বিদ্যুত বিল পরিশোধ করতে হয় বেতনের বাকি ৬০ শতাংশ থেকে। ফলে একজন পুলিশ সদস্যকে কোয়ার্টার ও বিদ্যুত বিল পরিশোধ করে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। এ কারণেই তদন্ত কেন্দ্রের ব্যারাকে ব্যাচেলার কোনো কোনো সদস্য থাকলেও বেশির ভাগই থাকেন কোয়ার্টারের বাইরের বাসা ভাড়ায়। কোয়ার্টারের তুলনায় অনেক কম মূল্যে বাসা ভাড়া পাওয়ায় পুলিশ সদস্যরা নিরাপত্তাহীনতার কথা ভুলেও ভাড়া বাসায় বসবাস করছে। পুলিশ সদস্যরা তদন্ত কেন্দ্রের বাইরে বাসা ভাড়ায় থাকায় দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রেও সমস্যার সম্মুক্ষীণ হতে হচ্ছে। তড়িৎ অভিযানের ক্ষেত্রে পড়তে হয় অসুবিধায়। যে কারণে দর্শনা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের অফিসার্স ও স্টাফ কোয়ার্টারগুলো ফাকা পরে আছে। এদিকে কোয়ার্টারগুলোতে দীর্ঘদিন কেউ বসবাস না করায় সৃস্টি হয়েছে ভুতরে অবস্থা। নষ্ট হচ্ছে ভবন। ক্ষতি হচ্ছে সরকারের সম্পদ। তাই ভবনের ভাড়া কমানো হলে একদিকে যেমন একজন পুলিশ সদস্য নিরাপত্তায় বসবাসের সুযোগ পাবে, অন্যদিকে রক্ষা হবে সরকারের সম্পদ। ইতোমধ্যেই দর্শনা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র থেকে উন্নীত করে থানায় রূপান্তরের প্রক্রিয়া প্রায় শেষের পথে। ঝুকিপূর্ণ শহরের পুলিশি ভূমিকা জোরদার রাখা অপরিসিহীম। সেক্ষেত্রে পুলিশের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করণের ব্যাপারে সংশি¬ষ্ট বিভাগের আন্তরিকতা থাকা উচিত বলেও মনে করছে সচেতন মহল। এদিকে দর্শনা শহরে নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশি লোকবল ও যানবাহন বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বর্তমানে পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে রয়েছেন ১ এসআই, ২ এএসআই, ১ মহিলা পুলিশ সদস্য, ১ অপরেটরসহ ২০ জন কনস্টোবল। অফিসার ও কনোস্টেবলসহ ২৩ জন পুলিশ এ শহরের আইনশৃংখলা রক্ষায় অনেকটাই নাকানি-চুবানি খেতে হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ দর্শনা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে নেই নিজস্ব কোনো যানবাহন। নছিমন, করিমন, আলমসাধু ও সিএনজিতে চড়েই দর্শনার সর্বস্থরের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করতে হিমশিম খেতে হয় পুলিশের। পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে বাউন্ডারী প্রাচীর না থাকায় সেন্ট্রি ডিউটি ওয়ালাকেই গরু-ছাগল তাড়াতে হয়। পরিস্কার-পরিচ্ছনার জন্য নেই পরিচ্ছন্ন কর্মী। খাবার ও গোসলের পানির সমস্যায় চরমে। জেলার গুরুত্বপূর্ণ এ শহরের দর্শনা পুলিশের সমস্যা সমাধানে পুলিশ সুপারের সুদৃষ্টি কামনা করেছে দর্শনাবাসি।