স্টাফ রিপোর্টার: আজ ১০ এপ্রিল। চুয়াডাঙ্গায় গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেছেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তথা ১৯৭১ সালে আজকের এই দিনে অস্থায়ী রাজধানী ঘোষণা করে ১৪ এপ্রিল শপথের প্রস্তুতি নেয়া হয় বলেই পাকিস্তানি বর্বর হানাদারবাহিনী হামলার কেন্দ্রবিন্দু করে চুয়াডাঙ্গাকে। অথচ রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি মেলেনি। স্বীকৃতি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন সংগ্রাম চলবে।
আজ ১০ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গায় দিনব্যাপী কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। আয়োজকদের তরফে জানানো হয়েছে, সকাল সাড়ে আটটায় চুয়াডাঙ্গা বড় বাজার শহীদ হাসান চত্বরে দিনব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন জাতীয় সংসদের হুইপ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপি। অনুষ্ঠানে জেলা পরিষদ প্রশাসক মাহফুজুর রহমান মনজু, পৌর মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী ও বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চুয়াডাঙ্গা জেলা ইউনিট কমান্ডার আবু হোসেন বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। সকাল সাড়ে ৯টায় শহীদ হাসান চত্বরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হবে। মানববন্ধন শেষে দাবির পক্ষে শোভযাত্রা বের করা হবে। শোভাযাত্রা শেষে বেলা ১১টায় শহীদ হাসান চত্বরের মুক্তমঞ্চে চুয়াডাঙ্গা প্রথম রাজধানী, স্বীকৃতি চাই শীর্ষক আলোচনাসভা এবং প্রস্তাবনার স্বপক্ষে তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন আলোচনাসভা রাজনৈতিক নেতৃত্বের সংহতি জ্ঞাপন অনুষ্ঠিত হবে। বিকাল পাঁচটায় চুয়াডাঙ্গার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত হবে স্মৃতিচারণমূলক আলোচনা ২৬ মার্চ থেকে ১৭ এপ্রিল আমার স্মৃতিতে চুয়াডাঙ্গা। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় একই স্থানে পরিবেশিত হবে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র মুক্তির গান, ভিডিও প্রদশনী। এছাড়া স্থানীয় সাংস্কৃতিককর্মীদের পরিবেশনায় আবৃত্তি ও গান পরিবেশিত হবে।
দিবসটি উপলক্ষে গতকাল শনিবার বেলা ১১টার দিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা শিল্পকলা একাডেমী ভবনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। চুয়াডাঙ্গা প্রথম রাজধানী বাস্তবায়ন সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ওয়ালিউর রহমান টুল্লুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পরিষদের সদস্য জেলা জেএসডির সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ হোসেন, বাংলাদেশ মুক্তযোদ্ধা সংসদ চুয়াডাঙ্গা জেলা ইউনিট কমান্ডার আবু হোসেন, সাবেক কমান্ডার নুরুল ইসলাম মালিক প্রমুখ। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সচিব জহির রায়হান। এ সময় সাবেক কমান্ডার নুরুল ইসলাম মালিক বলেন, ৭১’র ২৫ মার্চ থেকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যখন গণহত্যার নেশায় মেতে উঠেছিলো তখন বাংলাদেশের কোথাও নিরাপদ ছিলো না। তখন তাজউদ্দিন আহম্মেদ চুয়াডাঙ্গায় পৌছান এবং মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার নিরাপদ স্থান মনে করে ১০ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গাকে বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাজধানী ঘোষণা করেন। অতঃপর স্বাধীনতার সকল যুদ্ধ চুয়াডাঙ্গা থেকে পরিচালনা করা হতো। এ জেলায় বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার গঠন করে শপথ নেয়ার কথা ছিলো। কিন্তু তথ্য পাক হানাদার বাহিনীর কাছে ফাঁস হলে তারা চুয়াডাঙ্গায় বিমান হামলা করতে থাকে। এ পরিস্থিতিতে তারা সীমান্ত সংলগ্ন মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর উপজেলার ভবেরপাড়া গ্রামের বৈদ্যনাথতলা আমবাগানে সরকার গঠন করা হয় এবং ১৭ এপ্রিল অস্থায়ী সরকার শপথ গ্রহণ করে। ঐতিহাসিক শপথ গ্রহণের সেই দিনকে স্মরণীয় করে রাখতে ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। তৎকালীন সময়ে মুজিবনগর স্বীকৃতি পেলেও চুয়াডাঙ্গা প্রথম অস্থায়ী রাজধানীর স্বীকৃতি পায়নি। প্রকৃত ইতিহাসকে মেনে নিয়েই চুয়াডাঙ্গাকে বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ের লক্ষ্যে রাজপথে নামবে চুয়াডাঙ্গাবাসী। তিনি আরও বলেন, যতোদিন চুয়াডাঙ্গা প্রথম অস্থায়ী রাজধানীর স্বীকৃতি না পাবে ততোদিন স্বীকৃতির দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রাখা হবে।