দেশে প্রথমবারের মতো জিকা ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত

 

স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছে। ষাটোর্ধ্ব এই ব্যক্তির বাড়ি চট্টগ্রামে। তার নাম-পরিচয় গোপন রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। আর এটি নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ারও পরামর্শ দেয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ডেঙ্গু প্রতিরোধের প্রস্তুতি সম্পর্কে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক জিকা শনাক্তের কথা জানান।

সংবাদ সম্মেলনের পরে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে নিয়মিত পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে এ জিকা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আইইডিসিআর, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ, খুলনা মেডিকেল কলেজ ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসা রোগীদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিলো ডেঙ্গু পরিস্থিতি পর্যালোচনা করার জন্য। সেই নমুনা বিশ্লেষণের সময় জিকা ভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ে।

বিকেলে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, চট্টগ্রামের যে ব্যক্তিটি জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে তার বয়স ৬৭ বছর। যাতে আতঙ্ক না ছড়ায় এবং রোগীর সামাজিক সম্মানহানি যাতে না হয়, সে জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নাম-পরিচয় গোপন রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি নিজের বাড়িতে ভালো আছেন। তার সংস্পর্শে যারা আছেন, তারাও সুস্থ আছেন।

সিভিল সার্জন বলেন, ওই ব্যক্তি ২০১৪ সালে ডেঙ্গু পরীক্ষা করেছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ওই সময় তার রক্তে ডেঙ্গুর জীবাণু পাওয়া যায়নি। পরে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা থেকে নির্দেশ দেয়া হয় যে ডেঙ্গু যাদের নেগেটিভ হচ্ছে তাদের কারও কারও শরীরে জিকা ভাইরাস পাওয়া যাচ্ছে। ওই নির্দেশের পর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে যেসব রোগী ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য রক্ত জমা দিয়েছিলেন, সেই স্লাইডগুলো পুনরায় পর্যালোচনা করতে গিয়ে এই ব্যক্তির জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি সন্দেহ করা হয়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের একটি দল ওই ব্যক্তির কাছ থেকে নতুন করে নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় নিয়ে যায়।

সিভিল সার্জন বলেন, জিকা নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। জিকায় পৃথিবীতে কেউ এখনো মারা যায়নি। এই রোগ অনেকটা ডেঙ্গুর মতো। এটি শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ছড়ায় না। এডিস মশা এটি ছড়ায়। তাই আমাদের মশা থেকে দূরে থাকতে হবে। জিকা ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি দেশের বাইরে ছিলেন কি-না, সে সম্পর্কেও কোনো ধারণা দিতে পারেননি সিভিল সার্জন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জিকা ভাইরাসে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ আক্রান্ত হয় না। এটি ডেঙ্গুর মতো একটি রোগ। এর লক্ষণ হচ্ছে চোখ লাল হয়ে যাওয়া, সর্দি, জ্বর, কাশি ইত্যাদি। এর চিকিৎসা ব্যবস্থাও অনেকটা ডেঙ্গুর মতো। প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার খেতে হয়। জিকা আক্রান্ত প্রতি হাজার সন্তানসম্ভবা নারীর মধ্যে ২ থেকে ৩ জনের বাচ্চার মাথা ছোট হতে পারে। এ ছাড়া আক্রান্ত প্রতি ১০ হাজারের মধ্যে ২-৩ জনের পা অবশ হয়ে যেতে পারে।