ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: শৈলকুপার কবিরপুর মসজিদপাড়ায় ৩ শিশু পুড়িয়ে হত্যার নৃশংস সাক্ষী সেই বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র ওঠেছেন শোকাহত তাদের পরিবার। নিহত শিশু মাহিন, মোস্তফা সাফিন ও মোস্তফা আমিনের স্মৃতি বিজড়িত হলেও নৃশংসতার সাক্ষী হওয়ায় গত শুক্রবার সন্ধ্যায় তাদের সেই বাড়িতে তালা দেন।
শৈলকুপা শহরের পাইলট স্কুলপাড়ায় ৪ হাজার টাকার ভাড়া বাড়িতে গিয়ে উঠেন। ওই ভাড়া বাড়ির মালিকের নাম আব্দুল মতিন বলে জানা গেছে। গতকাল শনিবার রাতে নিহত শিশু মোস্তফা সাফিন ও মোস্তফা আমিনের দাদা হাজি গোলাম নবী বিষয়টি নিশ্চিত করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। ৩ শিশু নিহতের ১৩ দিন পরেও পরিবারটি স্বাভাবিক হতে পারেননি বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। হাজি গোলাম নবী আরো জানান, ওই বাড়িতে থাকতে এখন সবার ভয় ভয় লাগছে। তাছাড়া বাড়িটি এখন নৃশংসতার সাক্ষী হয়ে আছে। যে বাড়িতে আমার ৩ কলিজার টুকরাকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে সেই বাড়িতে আমার মন টিকছিলো না। ওই ঘটনায় আমার পরিবারটি শেষ করে দিয়েছে। আমার আর কিছুই নেই। বাড়িটি এখন খাঁ খাঁ করছে। বাড়িতে কোনো বাচ্চা কাচ্চা নেই। দুই পোতা মোস্তফা সাফিন ও মোস্তফা আমিন এবং নাতি মাহিন সারাক্ষণ ঘর আলোকময় করে বেড়াতো। এখন মনে হচ্ছে, আমরা ভূতুড়ে বাড়িতে বসবাস করছি। দুই পোতা মোস্তফা সাফিন ও মোস্তফা আমিনের স্মৃতি মনে করে তিনি বলেন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে আসতে দেরি হলে তারা আমার কাছে চলে যেতো। বলতো দাদা তাড়াতাড়ি বাড়ি চলো। এখন কে আমার বাড়ি নিয়ে যাবে?
তিনি আরো বলেন, মৃত্যুর আগের দিন সাফিন এসে বললো দাদা ক্লাসে আমি ফাষ্ট হয়েছি। দাদি আমাদের দুই ভায়ের ঘুড়ি কিনে দিয়েছে। তুমি বেল্ট কেনার জন্য ১০০ টাকা দাও। আমি টাকা দেয়ার পর সে খুশিতে আটখানা হয়ে মায়ের আঁচল ধরে বাড়ির দিকে যায়।
হাজি গোলাম নবী ৩ শিশুর খুনি তার বড় ছেলে ইকবালের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, কি জন্য যে কি হলো বুঝতে পারছি না। সিঙ্গাপুর থেকে ইকবাল বললো আব্বা আমার চাকরি নেই। আমি বললাম তুমি বাড়ি এসে ব্যবসা দেখো। ইকবাল বাড়ি আসার পর আমি তাকে সব কিছু বুঝিয়ে দিলাম। নগদ ৪৫ লাখ টাকা দিলাম। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সব মালামাল বুঝিয়ে দিয়েই আমি হজ পালন করতে গেলাম। তারপর সে কেনো এই নৃশংস কাণ্ড ঘটিয়ে পরিবারটি ছিন্নভিন্ন করে দিলো বুঝতে পারলাম। এ কথা বলতে বলতে হাজি গোলাম নবী হাও হাও করে কাঁদতে লাগলেন।
উল্লেখ্য, গত ৩ জানুয়ারী সন্ধ্যায় পারিবারিক কলহের জের ধরে কবিরপুর গ্রামের ইকবাল হোসেন তার ছোট ভাই দেলোয়ার হোসেনের দুই ছেলে মোস্তফা সাফিন (৯) ও মোস্তফা আমিন (৭) এবং ভাগ্নে মাহিমকে (১২) ঘরের মধ্যে হাত-পা বেঁধে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে ঘরের দরজা বন্ধ করে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে অগ্নিদগ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই দুই সহোদর ও পরে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে অপর শিশু মাহিম মারা যায়। এ ঘটনায় ইকবালকে আসামি করে নিহত দুই শিশুর পিতা দেলোয়ার হোসেন শৈলকুপা থানায় একটি মামলা করেন। ঘাতক ইকবাল আদালতে ৩ শিশু হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে।