ভিক্ষা করে রেখে যাওয়া সেই হাসিনা বেগমের অর্থে দোয়া মাহফিল : বেওয়ারিশ সকল মৃতদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে মারা যাওয়া সেই হাসিনা বেগমের বস্তায় ছিলো অনেক টাকা। তার মধ্যে সবই ছাতা ধরে নষ্ট হয়েছে। সচল ছিলো ৬ হাজার ৫শ ২০ টাকা। এই টাকার কিছু দিয়ে কাফন কেনা হয়, দাফনের খরচটাও সারা হয়। বাকি টাকা ছিলো হাসপাতাল এলাকারই এক চা দোকানির কাছে। কথা যতো দ্রুত সম্ভব, দোয়া খায়ের করে দেয়া হবে ওই টাকায়। হয়েছেও তাই। তবে তা হতে সময় লেগেছে প্রায় দেড় বছর। গতকাল হাসপাতার প্রাঙ্গনে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হলে হাসিনা বেগম প্রসঙ্গটি উঠে আসে আলোচনায়।
হাড়ের সাথে চামড়া লেগে যাওয়া। মুখের দাঁতগুলোর প্রায় সবই পড়ে যাওয়া। প্রথম দিকে সাতগাড়ির মোড়ে ঘুরতে দেখা গেলেও পরবর্তীতে দেখা যেতো চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনে। ভিক্ষা করতেন। চুয়াডাঙ্গার শহীদ হাসান চত্বরেও রাতযাপনকালে মাঝে মাঝেই চিৎকার দিয়ে উঠতেন আচমকা। কেনো? কাছে থাকা বস্তা। ওই বস্তায় কেউ হাত দিলেই ছাড় ছিলো না কারো। হাত না দিলেও যখনই মনে হতো কেউ হাত দিয়েছে বস্তায়, তখনই চিৎকার দিয়ে আরো শক্ত করে ধরতো বস্তাটা। ছেড়া কাগজের টুকরো আর কিছু কাপড়। মাছিও ভনভন করতো বস্তাটার আশে পাশে। একদিন অসুস্থ হয়ে পড়লেন। তাকে উদ্ধার করে সহৃদয় কিছু মানুষ ভর্তি করে দিলেন হাসপাতালে। ফিমেল মেডিসিন ওয়ার্ডর এক প্রান্তে পড়ে থাকতেন। কোনো কোনো সেবিকার দয়া হলে একটু খাবার দিতেন। চিকিৎসকদেরও সেদিকে কম বেশি নজর ছিলো। দীর্ঘদিন ওভাবে পড়ে থাকার এক পর্যায়ে ২০১৪ সালের ২৭ জুলাই বিকেলে জানা গেলো মারা গেছেন তিনি। তাকে যে নারী একটু বেশি বেশি খোঁজ রাখতেন মৃত্যুর বিষয়টি তিনিই প্রথমে টের পান। তারপর সেই বস্তার রহস্যভেদে স্থানীয়দের আগ্রহ বেড়ে গেলো। বস্তার মধ্যে বস্তা, তার মধ্যে ছোট্ট থলি। তাতেই রাখা টাকা। ভিক্ষা করতে গিয়ে যখন যে ভাজে, যেভাবে পেয়েছেন টাকা তার সবই রেখেছেন ওই থলিতে। কিছু টাকা নষ্ট হয়েছে। কিছু টাকায় ছাতা ধরেই অচল হয়ে গেছে।
গুণে পাওয়া টাকার মধ্যে সচল ছিলো ৬ হাজার ৫২০ টাকা। এর মধ্যে কাফন ও দাফনে খরচ হয় ২ হাজার ৭৮০ টাকা। বাকি টাকা দিয়ে বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া মাহফিলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তড়িঘড়ি করেই করার কথা ছিলো। হয়নি। কেউ কেউ সেই টাকার কথা ভুলতে বসলেও শেষ পর্যন্ত সম্প্রতি দোকানিরা বিশেষ দোয়ার আয়োজন করেন। হাসিনা বেগমের সেই টাকা আর স্থানীয় কিছু ব্যক্তির দেয়া অর্থে চার ডেস্কি খিঁচুড়ি রান্না করা হয়। তাতে কয়েকটি পোল্টিও দেয়া হয়। বাবুর্চির দায়িত্ব হাসপাতাল এলাকারই দোকানি ও রিকশা চালকদের ওপর বর্তায়। সামিয়ানা টাঙিয়ে উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদের পেশ ইমামকে দিয়ে খাস মিলাদ দিয়ে দোয়া খায়ের করা হয়।
হাসিনার বদৌলতে হাসপাতালে মারা যাওয়া সকল বেওয়ারিশ মৃতদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়ার সময় অনেকেরই চোখে আশে আশ্রু।