অপরাধীদের কী সাজা হয় তা দেখার অপেক্ষায় দেশবাসী

নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনকে ভারত কর্তৃক বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তরের বিষয়টি স্বস্তিদায়ক। গত বছরের ২৭ এপ্রিল সাত খুনের ঘটনার পর ভারতে পালিয়ে যান নূর হোসেন। ওই বছরেরই ১৫ জুন কোলকাতার লাগোয়া বাগুইআটির একটি ফ্ল্যাট থেকে দু সহযোগীসহ তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলা করা হয়। এ মামলার কারণে নূর হোসেনকে দ্রুত দেশে ফেরত পাঠানো যাচ্ছিলো না। ভারত সরকার সম্প্রতি মামলাটি প্রত্যাহার করে নিলে তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর পথ সুগম হয়।

নারায়ণগঞ্জের সাত খুন দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টিকারী একটি ঘটনা। নারায়ণগঞ্জের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাত ব্যক্তি অপহৃত হওয়ার তিনদিন পর শীতলক্ষ্যা নদীতে ছয়জনের এবং পরদিন আরেকজনের লাশ পাওয়া গেলে দেশব্যাপী চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। অপহৃত ও নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে এ ঘটনায় ৱ্যাবের সংশ্লিষ্টতার জোরালো অভিযোগ ওঠার পর ৱ্যাব-১১-এর অধিনায়কসহ তিন কর্মকর্তাকে আগাম অবসরে পাঠানো হয়। এ মামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন ৱ্যাবের এক সাবেক অধিনায়ক, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েক কর্মকর্তা। সাত খুনের ঘটনায় সবচেয়ে উদ্বেগজনক দিক হলো, অপহরণ ও হত্যাকাণ্ডে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জড়িত থাকার অভিযোগ। এ কারণে এই ঘটনার নিষ্পত্তি শেষ পর্যন্ত কী হয়, অপরাধীদের কী সাজা হয় তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছে দেশবাসী। প্রতিটি অভিযোগেরই যথাযথ নিষ্পত্তি হওয়া জরুরি। কারণ এর সাথে গোটা প্রতিষ্ঠানটির ভাবমূর্তির প্রশ্ন জড়িত। দু-একজন ব্যক্তির জন্য সম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি কলুষিত হোক, এটা কারও কাম্য হতে পারে না। তাছাড়া কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জনগণের আস্থা হারালে তা শুধু ওই প্রতিষ্ঠানেরই নয়, গোটা দেশের জন্যই বিপজ্জনক।

মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনকে দেশে ফিরিয়ে আনার ফলে তাকে এখনো বিচারের সম্মুখীন করা হবে। তবে সাত খুনের ঘটনায় জড়িত তার অনেক সহযোগী এখনও ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। তাদের অবিলম্বে গ্রেফতারের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালাতে হবে। এমন একটি নৃশংস ঘটনায় জড়িত একজনও যেন বিচার ও শাস্তি থেকে অব্যাহতি না পায় তা নিশ্চিত করা জরুরি। অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করার ব্যাপারে সরকারের দৃঢ় অবস্থান কাম্য। নারায়ণগঞ্জের সাত অপহরণ ও খুনের ঘটনার সুষ্ঠু বিচার এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এটাই প্রত্যাশা।