নবগঙ্গায় কিশোর সলোকের অর্ধগলিত লাশ : মায়ের বুকফাটা আহাজারি

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের সরোজগঞ্জ বোয়ালিয়ার নবগঙ্গা শ্মশান ঘাট থেকে অর্ধগলিত এক কিশোরের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। লাশের গায়ে থাকা শাট দেখে অপহৃত কিশোর সলোকের মা নিগারণ বেগম বলেছেন, এটা আমারই ছেলের লাশ। পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের প্রক্রিয়া করেছে। আজ শুক্রবার ময়নাতদন্ত শেষে দাফন কাজ সম্পন্ন করা হতে পারে।

কিশোর সলোক হোসেন (১৭) চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার খাসকররা ইউনিয়নের কাবিলনগর মাঠপাড়ার দরিদ্র কৃষক শামসুল হকের একমাত্র ছেলে। গত শনিবার সন্ধ্যায় মোবাইলফোনে ডেকে নিয়ে তাকে অপহরণ করা হয়। অপহরণের পরদিন রোববার আলমডাঙ্গা থানায় জিডি করা হয়। সোমবার বাড়ির পাশের পোয়ালগাদার কাছে পাওয়া যায় অপহৃত কিশোর সলোক হোসেনের মোবাইলফোন। ওই মোবাইলফোনে অজ্ঞাত স্থান থেকে অজ্ঞাত পরিচয়ের ব্যক্তি অপহৃত সলোকের মুক্তির জন্য ১০ লাখ টাকা দাবি করে। হতদরিদ্র কৃষকের নিকট তার ছেলের মুক্তিপন বাবদ ১০ লাখ টাকা দাবির বিষয়টি জানাজানি হলে অনেকেই বিরূপ মন্তব্য করতে থাকেন। অবশ্য দিন গড়ানোর সাথে সাথে মুক্তিপণের টাকা দরকষাকষি শুরু হয়। কমতে থাকে মুক্তিপণের দাবিকৃত টাকার অঙ্ক। শেষ পর্যন্ত আড়াই লাখ টাকা দাবি করা হয়। গতপরশু বুধবার বিকেলেও মুক্তিপণের টাকা দাবি করে বলা হয়, টাকা দিলেই সলোককে ছেড়ে দেয়া হবে। অথচ এর একদিন পর গতকাল বৃহস্পতিবার নবগঙ্গা থেকে উদ্ধার করা হলো অপহৃত কিশোরের অর্ধগলিত লাশ। অপহরণের ৫ দিনের মাথায় ছেলের লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন তার মাসহ নিকটজনেরা। মায়ের আহাজারিতে এলাকার বাতাস ভারী হয়ে ওঠে।

জানা গেছে, সরোজগঞ্জ বোয়ালিয়ার দু যুবক গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে গ্রামের অদূরবর্তী মাঠের নবগঙ্গা নদীর শ্মশানঘাটে মাছ ধরতে যায়। মাছ ধরার জন্য নদীর কচুরিপানা সরাতে গেলে চোখে পড়ে মানুষের মৃতদেহের হাত। চমকে ওঠে তারা। মাঠের অন্য কৃষকদের ডাকে তারা। খবর দেয়া হয় পুলিশে। সরোজগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আজিজুল হক সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে বোয়ালিয়া নবগঙ্গা শ্মশানঘাটে পৌঁছান। উৎসুক জনতার ভিড় জমে। খবর পেয়ে কাবিলনগর থেকে ছুটে আসেন অপহৃত সলোকের পিতা শামসুল হক। তিনি লাশ দেখে প্রথমে চিনতে না পেরে সলোকের মাকে আসতে বলেন। বেলা দেড়টার দিকে মৃতদেহের গায়ে থাকা জামা দেখে সলোকের মা বলেন, এটা আমারই ছেলের লাশ। গত ঈদেই ওই জামাটা কিনে দিয়েছিলাম ছেলেকে। জামা ছাড়া পরনে আর কিছু ছিলো না তার।

সলোক হোসেন গ্রামের প্রাইমারি স্কুল পাস করেছে। এরপর আর পড়া হয়নি তার। পিতা শামাসুল হক দরিদ্র কৃষক। দিন মজুরিও করতে হয় তাকে। এক ছেলে দু মেয়ের মধ্যে ছেলে সলোকই বড়। পরিবারের সদস্যরা এসব তথ্য দিয়ে বলেছে, ৫ দিন আগে শনিবার সন্ধ্যায় সলোক বাড়িতেই ছিলো। মোবাইলফোনে রিং হলো। কথা বলতে বলতে সে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল। এরপর আর ফেরেনি। বাড়ি না ফেরায় সম্ভাব্য স্থানে খোঁজাখুজি করেও পাওয়া যায়নি। পরদিন রোববার গ্রামের কয়েকজনকে সাথে নিয়ে আলমডাঙ্গা থানায় নিখোঁজ জিডি করা হয়। সোমবার বাড়ির পাশের বিচুলি গাদার নিকট থেকে সলোকের মোবাইলফোনটি পাওয়া যায়। বিকেলে ওই ফোনে কল আসে। তার মুক্তিপণ বাবদ ১০ লাখ টাকা চাওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত আড়াই লাখ টাকার দাবি করে অপহরকরা।

দরিদ্র দিন মজুরের ছেলেকে কেন হত্যা করা হয়েছে? হত্যার জন্যই কি তাকে মোবাইলফোনে ডেকে নেয়া হয়? মুক্তিপণের টাকা দাবি করে কি ঘাটতকরা ঘটনাকে ভিন্ন খাতে নিতে চেয়েছে? পুলিশ ও স্থানীয়দের মাঝে এসব প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। ঘাতক নিকজনদের কেউ কি-না তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। লাশ দেখে স্থানীয়রাসহ পুলিশ বলেছে, ধারণা করা হচ্ছে কয়েকদিন আগেই তাকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। নবগঙ্গা পানিতে ফেলে লাশ কচুরিপানা দিয়ে এমনভাবে ঢেকে দেয়া যে, আর কয়েকদিন থাকলে অস্তিত্বই থাকতো না। হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের ধরতে পুলিশি তদন্তের পাশাপাশি সিআইডিও বিশেষ নজর দিচ্ছে। সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

 Chuadanga  dead08-10-15