সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে রেকর্ড : লাভের অঙ্কে শূন্য

স্টাফ রিপোর্টার: লাগাম টানতে সুদের হার কমানো হলেও পুরো অর্থবছরে রেকর্ড পরিমাণে বিক্রি হয়েছে সঞ্চয়পত্র। ২০১৪-১৫ অর্থবছর শেষে এই বিক্রির পরিমাণ গিয়ে ঠেকেছে সাড়ে ২৮ হাজার কোটি টাকায়; যা পুরো অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় তিনগুণ বা সাড়ে ১৯ হাজার কোটি টাকার বেশি।

বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনোই সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে এতো বেশি টাকা সরকারের কোষাগারে জমা থাকেনি। গত অর্থবছরের শেষ মাস জুনেও সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ১৭০ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অর্থবছরের শেষ প্রান্তে এসে সঞ্চয়পত্রে বিক্রির উল্লম্ফন ঠেকাতে সুদের হার কমানো হলেও বিক্রিতে তেমন প্রভাব পড়েনি।

জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তরের সর্বশেষ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে (জুলাই-জুন) এ খাতে নিট বিক্রি হয়েছে প্রায় ২৮ হাজার ৭৩২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা, যা পুরো অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৯ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা বেশি। এ বছর নিট বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ হাজার ৫৬ কোটি টাকা।

আলোচ্য সময়ে মূল্য পরিশোধ বাবাদ পরিশোধ করা হয়েছে ১৩ হাজার ৯২৭ কোটি টাকা। আর সুদ হিসেবে পরিশোধ করা হয়েছে ৯ হাজার ৮১৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। পুরো অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে পরিবার সঞ্চয়পত্র। পরিবার সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৫৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা। তিন মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে নিট বিক্রি হয়েছে ৮ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা এবং পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে ৩ হাজার ৪৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা। মূলত এই তিন ধরনের সঞ্চয়পত্রের বিক্রিই বেশি হয়ে থাকে।

গত অর্থবছরে ডাকঘরের মাধ্যমে সঞ্চয়পত্র বেশি বিক্রি হয়েছে। এই সময়ে ডাকঘরের মাধ্যমে বিক্রি হয়েছে ১৩ হাজার ৬৪ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র। বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে ১০ হাজার ৪২০ কোটি ৪৩ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। সঞ্চয়পত্র ব্যুরোর মাধ্যমে নিট বিনিয়োগ এসেছে ৫ হাজার ২৪৮ কোটি ২১ লাখ টাকা।

সঞ্চয়পত্র বিক্রির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, জুনে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ এসেছে ২ হাজার ১৭০ কোটি ২০ লাখ টাকা। এর আগে মে মাসে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা এবং এপ্রিলে ২ হাজার ৯শ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ আসে সঞ্চয়পত্রে। এর আগে কখনোই সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে এতো টাকা সরকারের কোষাগারে জমা থাকেনি।

বিক্রি যতো বাড়বে সরকারের ঋণের বোঝাও ততো বাড়বে: এই হারে সঞ্চয়পত্র বিক্রি প্রসঙ্গে কথা বলতে চাইলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সঞ্চয়পত্রে সুদের হার কমলেও তা ব্যাংকের আমানতের সুদ হারের তুলনায় অনেক বেশি। এজন্য সঞ্চয়পত্র বিক্রি অব্যাহতভাবে বাড়ছে। গত অর্থবছরের সঞ্চয়পত্র বিক্রি নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।

তিনি আরো বলেন, শেয়ার বাজারে দীর্ঘদিনের মন্দা এবং ব্যাংকগুলো আমানতে সুদের হার কমানোয় নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে সঞ্চয়পত্রের দিকে ঝুঁকেছেন সবাই। ব্যাংক আমানতের তুলনায় সঞ্চয়পত্রের সুদের হার অনেক বেশি। তাই এর বিক্রি যতো বাড়বে সরকারের ঋণের বোঝাও ততো বাড়বে। এক্ষেত্রে সঞ্চয়পত্রে সুদের হার আরেক দফা কমানো যায় বলে মনে করেন তিনি।

এদিকে সরকারের নীতি নির্ধারকদের মধ্যেও কেউ কেউ মনে করছেন, সঞ্চয়পত্র বেশি বিক্রি হওয়ার অর্থ হলো সরকার দায় বৃদ্ধি পাওয়া, সেইসঙ্গে সুদের অর্থ বাবদ বেশি অর্থ খরচ হওয়া। অন্যদিকে এ খাতের সুদের হার বেশি হওয়ার অজুহাত তুলে ব্যাংকগুলোও ঋণের সুদের হার কমাতে চাইছে না। তারা বলছে, সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমলে কম সুদে আমানত নিয়ে কম সুদে ঋণ দিতে পারবে।

উল্লেখ্য, ২০১৪-১৫ অর্থবছরের মূল বাজেটে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে ৯ হাজার ৫৬ কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এ লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ২১ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। মূলত ব্যাংকের তুলনায় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে সুদের হার কিছুটা বেশি হওয়ায় সঞ্চয়পত্র বিক্রি অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। এ নিয়ে ব্যাংকগুলোর তরফ থেকে চাপ এবং নানামুখী আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে গেল মে মাসের শুরুতে অর্থমন্ত্রী সঞ্চয়পত্রের সুদের হার গড়ে ২ শতাংশ কমানোর ঘোষণা দেন। কিন্তু এরপরও এ খাতে বিক্রি কমেনি।