এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা পাবেন ৬ মাস পর

নতুন বেতন কাঠামো আজ মন্ত্রিসভায় উঠছে না

 

স্টাফ রিপোর্টার: সরকারি স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীরা ১ জুলাই থেকে নতুন বেতন কাঠামো পেলেও এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে তা কার্যকর হবে ছয় মাস পর, ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে। এর আগে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর আয় পর্যালোচনা করে তা কোষাগারে জমা দিতে বাধ্য করবে সরকার। মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা জাতীয় বেতন ও চাকরি কমিশনের সুপারিশে এমনটিই বলা হয়েছে। এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আয়ের একটি অংশ কোষাগারে জমা নেয়ার বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে সরকারও পরিকল্পনা করছিলো বলে বিভিন্ন সময় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জানিয়েছেন।

আজ সোমবার নতুন বেতন কাঠামো অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে ওঠার কথা গত সপ্তাহে অর্থমন্ত্রী জানালেও শেষ পর্যন্ত তা হচ্ছে না। মূলত সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল রাখা না রাখাসহ প্রক্রিয়াগত নানা জটিলতা দূর করতেই বাড়তি সময় লাগছে। অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ গতকাল রোববার সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন, সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদনের জন্য নতুন বেতন কাঠামোর প্রস্তাব উত্থাপন করা হচ্ছে না। অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ১০০ শতাংশ বেতন সরকার দিচ্ছে। আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে টিউশন, ভর্তি, পুনঃভর্তি ফিসহ নানাভাবে প্রচুর আয় করছে। ওই কর্মকর্তা জানান, সরকার এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের শতভাগ বেতন বহনের মধ্যদিয়ে শিক্ষার খরচ কমানোর যে উদ্যোগ নিয়েছিলো, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর আরোপিত ফির কারণে তা ব্যাহত হচ্ছে। এ কারণে সিদ্ধান্ত রয়েছে, এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর এসব আয় সরকারি কোষাগারে জমা নেয়া হবে। এর পরই নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন করা হবে। তিনি বলেন, ড. ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় বেতন ও চাকরি কমিশনের সুপারিশেও এমনটি বলা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, কমিশন এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বেতন সহায়তা বৃদ্ধি ছয় মাস পরে বাস্তবায়নের সুপারিশ করছে এই শর্তে যে, বেতন ও চাকরি কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের ছয় মাসের মধ্যে এমপিও স্কিমের একটি বস্তুনিষ্ঠ মূল্যায়নের ফলাফল দৃষ্টে এবং প্রতিষ্ঠানসমূহের আয়ের স্বীকৃত অংশবিশেষ সরকারি কোষাগারে জমাদানসাপেক্ষে তাদের বেতন বৃদ্ধি করা যেতে পারে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মরত মোট শিক্ষক রয়েছেন তিন লাখ ৪৪ হাজার ২৮৮ জন। এ ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষকদের বেতন সহায়ক বাবদ সরকারি তহবিল থেকে গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ব্যয় হয়েছে পাঁচ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা। এর আগে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এ খাতে পাঁচ হাজার ৩৪১ কোটি, ২০১২-১৩ অর্থবছরে পাঁচ হাজার ২৯৭ কোটি, ২০১১-১২ অর্থবছরে পাঁচ হাজার ১২ কোটি, ২০১০-১১ অর্থবছরে চার হাজার ৯৯৩ কোটি, ২০০৯-১০ অর্থবছরে তিন হাজার ২৮৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।

অর্থ বিভাগের পর্যালোচনা অনুযায়ী, নতুন বেতন কাঠামোতে বিভিন্ন গ্রেডে শতভাগ বেতন বাড়ানোর প্রস্তাব করা হলেও মহার্ঘ্য ভাতা বাদ দিলে চাকরিজীবীদের মূল বেতন বাড়বে ৫৯.৫ শতাংশ। অর্থাৎ এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন সহায়ক বাবদ গত অর্থবছরে যেখানে পাঁচ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা লেগেছে, নতুন বেতন কাঠামো অনুযায়ী তাদের বেতন দিতে দরকার হবে সাত হাজার ৩৬৫ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।

গত কয়েকটি বেতন কাঠামো কার্যকর পদ্ধতি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ১৯৯১ সালে চতুর্থ বেতন কাঠামো বাস্তবায়নের ছয় মাস পর পেয়েছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। তবে ১৯৯৭ সালের পঞ্চম বেতন কাঠামো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সরকারি চাকরিজীবীদের সাথেই পেয়েছেন তারা। আবার ২০০৫ সালে ষষ্ঠ বেতন কাঠামো কার্যকর হওয়ার বেশ কয়েক মাস পর পেয়েছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা, কিন্তু ২০০৯ সালের বেতন কাঠামো পেয়েছেন অন্য চাকরিজীবীদের সাথেই।

১ জুলাই থেকে চাকরিজীবীদের সাথেই এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা নতুন বেতন কাঠামোর সুবিধা ভোগ করবেন- এমন কোনো আভাস না পেয়ে হতাশায় রয়েছেন তারা। এরই মধ্যে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে একাধিক শিক্ষক সংগঠন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, সারা দেশে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২৬ হাজার ৭১। শিক্ষার্থী প্রায় এক কোটি। অর্থাৎ গড়ে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪৬০ জন। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কয়েক হাজার পর্যন্ত। আবার এমনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেখানে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের সংখ্যা সমান। গত বছর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর খুলনার রূপসা মহিলা কলেজ পরিদর্শনে যায়। সেখানে তারা ১৬ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে ১৬ জন শিক্ষককে দেখতে পায়। এর মধ্যে আটজনই এমপিওভুক্ত। অন্যরাও এমপিওর জন্য আবেদন করেছেন। অথচ জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ অনুযায়ী কোনো স্কুল বা কলেজে ৩০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন শিক্ষক থাকার বিধান রাখা হয়েছে।