আন্দোলনে ভটভটি চালক-মালিকরা : মহাসড়কে বিক্ষোভ ভাঙচুর

স্টাফ রিপোর্টার: মহাসড়কে অটোরিকশা, অটোটেম্পো, নসিমন, করিমন, ভটভটি, আলমসাধু ও অযান্ত্রিক সব যান চলাচল নিষিদ্ধ করার প্রতিবাদে গতকাল রোববার চট্টগ্রাম, সিলেট, ফেনী, ময়মনসিংহ, বরিশাল, সিরাজগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন অটোরিকশা-অটোটেম্পো মালিক ও শ্রমিকরা। ফেনীতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষুব্ধ অটোচালকরা গাড়ি ভাঙচুরের চেষ্টা করে। পুলিশ কয়েকটি ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। বরিশালে অটো শ্রমিকদের বাধার কারণে জেলার ১৫টি রুটে বাস চলাচল বন্ধ রাখতে বাধ্য হন বাসমালিকরা। অটোরিকশা বন্ধ থাকায় অনেক এলাকায় দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ।

প্রসঙ্গত, দুর্ঘটনা এড়াতে গত ১ আগস্ট থেকে মহাসড়কে অটোরিকশা (থ্রিহুইলার), অটোটেম্পো এবং সব ধরনের অযান্ত্রিক যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গত ২৭ জুলাই সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে। এরপর থেকে বিভিন্ন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে অটোচালক-শ্রমিকদের জরিমানা করছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নিষেধাজ্ঞার প্রথম দিন শনিবার সারাদেশে এক হাজার ৩৩১টি অটোরিকশা, অটোটেম্পো, নসিমন, করিমন, ভটভটি ও অযান্ত্রিক যানবাহন আটক করেছে পুলিশ। মামলা হয়েছে ২৬১টি।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এমএএন ছিদ্দিক বলেছেন, জাতীয় মহাসড়কে অটোরিকশা ও অযান্ত্রিক যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা সরকার বাস্তবায়ন করবে। এ থেকে সরে আসার কোনো সম্ভাবনা নেই। তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি না বুঝেই চালকরা আন্দোলনে নেমেছেন। বাংলাদেশের আড়াই লাখ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে মাত্র তিন হাজার ৫৭০ কিলোমিটার মহাসড়ক যেখানে এসব যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে; যা মোট সড়কের মাত্র ১ দশমিক ৪২ শতাংশ। তিনি বলেন, জাতীয় মহাসড়ক বাদে অন্যসব সড়কেই তিন চাকার যান চলতে পারবে।

কোন জেলায় কতোটুকু জাতীয় মহাসড়ক রয়েছে তা মানচিত্রের মাধ্যমে চিহ্নিত করা হয়েছে জানিয়ে সড়ক সচিব বলেন, ওই মানচিত্র ওয়েবসাইটেও দেয়া আছে।

পুলিশ সদর দফতরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, পুলিশ শক্তি প্রয়োগ করে নয়, চালকদের ঝোঝানোর চেষ্টা করছে। সিলেটসহ কয়েকটি এলাকায় অটোচালকরা ধর্মঘট ডেকেছিলো তা আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

বাংলাদেশ অটোরিকশা-অটোটেম্পো সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক গোলাম ফারুক বলেন, মানবিক কারণে সরকার আমাদের দাবি বিবেচনা করবে। আমরা টাকা চাই না। আমাদের দাবি খুব ছোট।  তিনি বলেন, সারাদেশে দেড় লাখ অটোরিকশা। এর সাথে কয়েক লাখ মানুষের জীবন জীবিকা জড়িত। সরকার বিকল্প পথের ব্যবস্থা এবং আলোচনা না করেই হঠাত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি সবদিক বিবেচনা করে সরকার আমাদের দাবি অবিলম্বে মেনে নেবে। আর আমাদের দাবি মানা না হলে আগামী ৪ আগস্ট জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সরকারের কাছে স্মারকলিপি পেশ করা হবে। ৮ আগস্ট জেলা সদরে মানববন্ধন করা হবে। ৯ থেকে ১১ আগস্ট জেলায় জেলায় সমাবেশ ও মিছিল করা হবে এবং সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তায় ঢাকায় সমাবেশ করা হবে। ওই সমাবেশ থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে তিনি জানান।

নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে সিলেট, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, কুমিল্লা, সাভার, ময়মনসিংহের ত্রিশাল, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ, চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট, পোর্ট লিংক, চন্দনাইশ, নরসিংদী বেলাব, টাঙ্গাইলের ভুঞাপুর, দেলদুয়ার, বরিশালের গৌরনদী, বানারীপাড়া, মুলাদি, পিরোজপুর, গাজীপুর, শ্রীপুর, ফেনীর পরশুরামে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে অটোচালকরা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ। এসব এলাকায় বড় ধরনের কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। পুলিশের হস্তক্ষেপে তারা কয়েক ঘন্টা পর অবরোধ তুলে নিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

ফেনীতে ভাংচুর, গুলি: গতকাল সকাল দশটার দিকে ফেনীর মহিপাল, দেবীপুর, ফতেহপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে ১০-১২টা যানবাহন ভাঙচুর করে অটোচালকরা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশ বেশ কয়েকটি ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

বরিশালের ১৫ রুটে বাস চলাচল বন্ধ: বরিশালের অভ্যন্তরীণ ১৫ রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে বাস মালিক সমিতি। গতকাল দুপুর থেকে এসব রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। বরিশাল বাসমালিক সমিতির সভাপতি আফতাব হোসেন জানান, মহাসড়কে সিএনজি ও থ্রি-হুইলার বন্ধের প্রতিবাদে আগৈলঝাড়া-পয়সারহাট রুটে থ্রি-হুইলার যানবাহনের চালক-শ্রমিকরা বাস চলাচল করতে দিচ্ছে না। এর প্রতিবাদে ও এ সমস্যা সমাধানের দাবিতে বাস চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে বরিশাল-বানারীপাড়া, বরিশাল-মুলাদি, বরিশাল-গৌরনদীসহ অভ্যন্তরীণ ১৫ রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।  বরিশাল জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন জানিয়েছেন রাতে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকের কথা রয়েছে। বৈঠকে সমাধান না আসলে দূরপাল্লার রুটের বাস চলাচল বন্ধ করা হবে। আর আকস্মিক বাস চলাচল বন্ধ হওয়ায় অফিসগামী, স্কুল-কলেজের যাত্রীসহ সাধারণ যাত্রীরা পড়েছেন চরম দুর্ভোগে।