নারী নেতৃত্বকে শোপিস বলে সংসদে তোপের মুখে এরশাদ

স্টাফ রিপোর্টার: জাতীয় সংসদের শীর্ষ পদে থাকা নারীদের ‘শো-পিস’ বলে সংসদে নারীদের ক্ষোভ-তোপের মুখে পড়েছেন জাতীয়পার্টি (জাপা) চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এইচএম এরশাদ। সরকার দলীয় নারী সংসদ সদস্যদের তীব্র প্রতিবাদের মুখে পড়ে এরশাদের ওই বক্তব্য সংসদের কার্যবিবরণী থেকে বাদ দিয়েছেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। আর স্বামীর বক্তব্যে শব্দ চয়নে এ ধরনের ভুলের জন্য সংসদে দাঁড়িয়ে ‘বোন’দের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ।

গতকাল সোমবার ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে এরশাদ বলেন, মাননীয় স্পিকার, নারীর ক্ষমতায়ন। আমরা কথায়-কথায় বলি, আমাদের প্রধানমন্ত্রী নারী, স্পিকার নারী, সংসদের উপনেতা নারী, বিরোধী দলীয় নেত্রী নারী। এরাতো শোপিস। বাইরে কিন্তু এ অবস্থা না। বাইরে কোনো সম্মান নেই।

এরশাদের এ বক্তব্যের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে উপস্থিত ছিলেন। অধিবেশনে সভাপতিত্ব করছিলেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী উপস্থিত না থাকলেও ছিলেন বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ। নিজের ডান পাশে থাকা রওশনের কথা বলতে গিয়ে হাত দিয়ে দেখিয়েও দেন এরশাদ।

নারী নেতৃত্বকে ‘শো-পিস’ বলায় সাথে সাথেই সরকার দলীয় নারী সংসদ সদস্যরা একযোগে চিত্কার করে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। বিশেষ করে, আওয়ামী লীগের ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পীসহ কয়েকজন উত্তেজিত হয়ে, টেবিলে শব্দ করে তীব্র আপত্তি জানান। দুএকজন নারী সদস্য দাঁড়িয়েও প্রতিবাদ করেন এবং এরশাদের ওই বক্তব্য এক্সপাঞ্জের দাবি জানান। স্পিকার তখন সবাইকে শান্ত থাকতে অনুরোধ করেন।

হইচই-প্রতিবাদের মধ্যে এরশাদ তাদের উদ্দেশে বলেন, প্লিজ আমাকে বলতে দিন। পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলে এরশাদ বলেন, ‘বাইরে কিন্তু নারীরা অসহায়, বাইরে কিন্তু নারীরা অসহায়। মাননীয় স্পিকার, আপনার মনে আছে, আমরা একুশে ফেব্রুয়ারি মালা দিতে যাই শহীদ মিনারে। সেখানে কেউ থাকে না। মধ্যরাতে কেন সেখানে কোনো নারী যায় না, কারণ তারা ভয় পায়।’ তখনও প্রতিবাদ চলতে থাকলে একপর্যায়ে এরশাদ বলেন, ‘ঠিক আছে, আমি যদি বলে থাকি, তাহলে প্রত্যাহার করে নিচ্ছি।’

এরপর জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘পয়লা বোশেখের কথা মনে আছে, আমি ভুলিনি, কি ঘটেছিলো, কোথায় ঘটেছিলো, ভিডিও ফুটেজ দেখেছি, তার কী বিচার হয়েছিলো, বিচার হয়নি। নারীরা আজ এসিড সন্ত্রাসের শিকার হচ্ছে।’ পরে স্পিকার সেইসব শব্দাবলী ৩০৭ বিধি, কার্যপ্রণালী বিধির আলোকে সংসদের কার্যবিবরণী থেকে এক্সপাঞ্জ করলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নারী সংসদ সদস্যসহ সরকার দলীয় সদস্যরা একযোগে টেবিল চাপড়ে স্পিকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান।

এরপর বাজেট আলোচনায় অংশ নিতে দাঁড়িয়ে প্রথমেই স্বামীর মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়ে নেন বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ। তিনি বলেন, এখানে প্রধানমন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রী এবং অন্য যারা বোনেরা আছেন, আমাদের দলের পক্ষ থেকে আমি আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছি। ওনার হয়তো শব্দ চয়ন ঠিক ছিলো না। সে কারণে আন্তরিকভাবে দুঃখিত।’ সরকারি দলের সদস্যরা তখনও টেবিল চাপড়ে রওশনকে ধন্যবাদ জানান। এরশাদকে তখন মাথা নিচু করে হাসতে দেখা যায়। অবশ্য রওশনের এ দুঃখ প্রকাশে জিয়াউদ্দিন বাবলুসহ জাপার কয়েক সদস্যকে উষ্মা প্রকাশ করতে দেখা গেছে। পরে জাপা মহাসচিব বাবলু বলেন, সংসদের কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী একজনের বক্তব্য আরেকজন প্রত্যাহার করতে পারে না, অন্য কেউ দুঃখ প্রকাশও করতে পারে না। যিনি বক্তব্য রাখেন, কিছু প্রত্যাহার করতে হলে তাকেই করতে হয়, অথবা স্পিকার এক্সপাঞ্জ করতে পারেন, এটিই নিয়ম।

দুপুরে সংসদের এ ঘটনার বিষয়ে বিকেলে এরশাদ বলেন, নারীর ক্ষমতায়ন আসলে বাস্তবে হচ্ছে কিনা-আমি সেটিই তুলে ধরতে চেয়েছিলাম। নারীরা এখনও পদে পদে বঞ্চিত, লাঞ্ছিত। ওরা ভয়ে শহীদ মিনারে যায় না, রাতে ঘর থেকে বের হয় না। কিন্তু ওরা আমার কথা না বুঝেই হইচই করেছে।’

প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে এইচএম এরশাদ আরো বলেন, দেশের তরুণ প্রজন্ম আজ মাদকের ছোবলে। রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এ মাদক ব্যবসা সম্ভব হয় না। দেশের ইয়াবা সম্রাটের নাম আমরা সবাই জানি। এ ইয়াবা সম্রাট এ সংসদেই আছে। আমরা নির্বাচিত হই এজন্য? লজ্জা করে না? কী জবাব দেব?

তিনি বলেন, ঐশীর কথা মনে আছে? এ ঐশীর জন্য কে দায়ী? আমরাই দায়ী, এ সমাজ দায়ী। এ সময় সংসদে উপস্থিত থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন ‘আপনি দেশের মা। মা হয়ে আপনি সন্তানের মৃত্যু দেখতে পারেন না। এ মাদক থামান।