অবাধ সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটগ্রহণ হয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার: তিন সিটি করপোরেশনে অবাধ, সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে বলে দাবি করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ। মঙ্গলবার ভোট গ্রহণ শেষে সন্ধ্যা ৬টার দিকে ইসি সচিবালয়ে আনুষ্ঠানিক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ দাবি করেন তিনি। এর আগে তিনি দুটি এবং নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ ১৫-২০টি ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করেন। নির্বাচন প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া তিন সিটিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ব্যাপক ভোটার উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যে ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছেন। এ জন্য তিনি নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ধন্যবাদও দেন। একই সাথে প্রার্থীদের নির্বাচনের ফল মেনে নিয়ে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এগিয়ে নেয়ার আহ্বান জানান এবং নির্বাচন পরবর্তী সময়ে সব ধরনের সহযোগিতা কামনা করেন।

কমিশনাররা ভোট কেন্দ্র ঘুরে পরিস্থিতি ভালো পেয়েছেন জানিয়ে সিইসি বলেন, আমি ও আমার কয়েকজন সহকর্মী কয়েকটি কেন্দ্র পরিদর্শন করেছি। এ সময় ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা, নির্বাচনী এজেন্ট, সাধারণ ভোটারদের অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি। সাধারণ ভোটারদের কাছে জানতে চেয়েছি ভোট দিতে আসতে কোনো সমস্যা হয়েছে কি-না। ভোট দিতে আসতে কেউ ভয়ভীতি দেখিয়েছে কি-না তাও জানতে চেয়েছি। কেউ কোনো অভিযোগের কথা জানাননি। কয়েকটি দেশের কূটনীতিকরাও তাদের মতামতে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলে বক্তব্য দিয়েছেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমে তা প্রচারও হয়েছে। সিইসি বলেন, তিনটি সিটি করপোরেশনে একসাথে ভোট গ্রহণ একটি বিশাল কর্মযজ্ঞের ব্যাপার। ত্বরিত হস্তক্ষেপের কারণে বেশির ভাগ কেন্দ্রে অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেনি। কতিপয় কেন্দ্রে অনভিপ্রেত ঘটনার খবর পেয়েছি। দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের তিনটি কেন্দ্রের পরিস্থিতি প্রিসাইডিং কর্মকর্তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- কমলাপুর রেলওয়ে উচ্চ বিদ্যালয়, শ্যামপুর আশরাফ মাস্টার উচ্চ বিদ্যালয় ও পুরান ঢাকার সুরিটোলা প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার পেছনে দায়ীদের বিরুদ্ধে নির্বাচনের পরে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া গোলযোগের কারণে আরও কয়েকটি কেন্দ্রে সাময়িকভাবে ভোট গ্রহণ স্থগিত রাখা হয়। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে আবার ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। সিইসি বলেন, নির্বাচন কার্যক্রম সম্পন্ন করা এবং শহরের শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী আরও একদিন মোতায়েন রাখা হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সজাগ ও সতর্ক থাকার জন্য নির্দেশ দিচ্ছি।

কমিশনের ব্যর্থতার কারণেই কয়েকজন বিএনপি প্রার্থীসহ আরেক মেয়র পদপ্রার্থী জোনায়েদ সাকীর নির্বাচন নিয়ে অনাস্থা জ্ঞাপন কি-না গণমাধ্যম কর্মীদের এ ধরনের প্রশ্নের উত্তরে সিইসি বলেন, আমাদের কাছে এ পর্যন্ত নির্বাচন বর্জনের ব্যাপারে কেউ দরখাস্ত করেননি। এটা তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। যেসব কেন্দ্রে অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছে সেসব কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ বন্ধ রাখা হয়েছে। পুনরায় ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া এ নির্বাচন রাজনৈতিক নয়, এটি প্রার্থী ভিত্তিক নির্বাচন। তিনটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হলেও ক্যান্টনমেন্ট থেকে সেনাবাহিনীকে কেন ডাকা হল না এ প্রশ্নের উত্তরে সিইসি বলেন, কেন্দ্রে বন্ধ করা আর সেনাবাহিনী তলবের মধ্যে ডিফারেন্স আছে। যখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী তা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে সেনাবাহিনী তলব করা হয়। সেনাবাহিনীর উপস্থিতি ছাড়া এবারের যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো তা নিয়ে সিইসি হিসেবে সন্তুষ্টি কি-না এ প্রশ্নের উত্তরে সিইসি বলেন, নির্বাচন শেষ হয়নি। ভোট গণনার পর অনেক হামলার শিকার হতে হয়। নির্বাচন শেষেই ফাইনালি বলা যাবে। ভোট গ্রহণের সময় গণমাধ্যম কর্মীরাও পুলিশের কারণে দায়িত্ব পালন করেননি এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সিইসি জানান, এ ধরনের অভিযোগ পাওয়ার পরই সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ ধরনের নির্দেশের পরও কাজ হয়নি সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে জানানো হলে সিইসি বলেন, আপনারা পুলিশ সদস্যদের নাম উল্লেখ করে অভিযোগ দেন। অভিযোগ দিলে আমরা অ্যাকশন নেবো। হোয়াই নট?

সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবু হাফিজ ও মো. শাহনেওয়াজ, ইসি সচিব মো. সিরাজুল ইসলামসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

দুপুরে ভোট কেন্দ্র ঘুরে কথা বলেননি সিইসি: মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে ধানমণ্ডির কাকলী উচ্চ বিদ্যালয় ও রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল-কলেজ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ। কেন্দ্রে পরিদর্শনের সময়ে নির্বাচনে বিষয়ে ইসির মন্তব্য জানতে চাইলে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ কোনো কথা বলেননি। ভোট কেন্দ্রে সংঘর্ষ, জালভোট ও এজেন্টদের বের করে দেয়ার মতো ঘটনা রোধে ইসি কী ব্যবস্থা নিয়েছে জানতে চাইলে সিইসি সরাসরি কোনো জবাব না দিয়ে বলেন, আপনারা দেখান, আপনারা দেখান। এরপরই কেন্দ্র ত্যাগ করেন সিইসি।