বিএনপি প্রস্তুত : পরিবেশ না পেলে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবে

স্টাফ রিপোর্টার: আগামী ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠেয় ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে লড়তে প্রস্তুত বিএনপি। রাজনৈতিক কৌশল হিসাবে সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) চাপে রাখতে বাইরে এই নির্বাচনকে তামাশাসহ নানা কথা বললেও প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য ভেতরে-ভেতরে প্রয়োজনীয় সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি।
নাগরিক সমাজ, নাগরিক কমিটি ইত্যাদি ব্যানারে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সিদ্ধান্ত রয়েছে। তবে দল বা ২০ দলীয় জোট সমর্থিত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের গ্রেফতার-মামলায় হয়রানি করা হলে কিংবা সবার জন্য সমান সুযোগ না থাকলে মাঝপথে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের বিকল্প চিন্তাও নিয়ে রেখেছে।
নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রস্তুতির অংশ হিসাবেই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা বা সমর্থন না দিলেও এরমধ্যে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন বিএনপি নেতারা। ঢাকা উত্তরে মেয়র পদে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টু। দক্ষিণে মেয়র পদে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন বিএনপির অর্থবিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালাম, দলের কারাবন্দী সাবেক সংসদ সদস্য নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টু ও বিএনপিপন্থি শিক্ষক নেতা মো. সেলিম ভূঁইয়া।
অন্যদিকে চট্টগ্রামে বর্তমান মেয়র মনজুর আলমকে দল সমর্থিত মেয়র প্রার্থী হিসাবে গতকাল আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে চট্টগ্রাম মহানগর এবং উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী গতকাল তার চট্টগ্রামের বাসায় আনুষ্ঠানিকভাবে মনজুরের প্রতি দলীয় এই সমর্থন ঘোষণা করেন। এছাড়া ঢাকা ও চট্টগ্রামে কাউন্সিলর পদেও বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের অনেকে ইতোমধ্যে মনোনয়নপত্র কিনেছেন কিংবা রবিবারের মধ্যেই সংগ্রহ করবেন।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে, জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নতুন সংসদ নির্বাচনের দাবিতে চলমান আন্দোলনের মধ্যে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ না নেয়ার পক্ষেও দল-জোটের ভেতরে শক্তিশালী মত রয়েছে। এরপরেও ঢাকা-চট্টগ্রামসহ সারাদেশের নেতাকর্মী-সমর্থকদের মনোবল চাঙ্গা করতে এবং রাজনৈতিক কৌশল হিসাবে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে।
কিন্তু শুধু মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা মানেই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়টি চূড়ান্ত করে না। বিএনপিসহ ২০ দলের শীর্ষ নেতৃত্ব প্রশাসন ও ইসির ভূমিকা পর্যবেক্ষণে রাখছে। যদি দেখা যায়, ২০ দল সমর্থিত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের হয়রানি করা হচ্ছে কিংবা অন্য প্রার্থীদের মতো অবাধ প্রচারণা চালাতে দেয়া হচ্ছে না, তাহলে প্রয়োজনে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে আবারও সংসদ নির্বাচনের দাবিতেই নতুন করে আন্দোলন জোরদারের পথে যাবে বিএনপি।
তফসিল অনুযায়ী, ২৯ মার্চ পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দেয়া যাবে। এরপর যাচাই-বাছাই শেষে ৯ এপ্রিল প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হবে। বিকল্প চিন্তার আভাস দিয়েই বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান গতকাল বলেছেন, নির্বাচনে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। আমাদের দলের অনেক নেতা-কর্মী মিথ্যা মামলায় কারাগারে। সরকারের নিপীড়ন-নির্যাতনের কারণে অনেকে আত্মগোপনে আছেন। তাদের ফ্রি করে দিতে হবে। তিনি এও বলেছেন, নির্বাচন ও আন্দোলন একসঙ্গেই চলবে।
অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে বিএনপি সমর্থক পেশাজীবীদের ফোরাম শত নাগরিক কমিটির একটি প্রতিনিধি দল বুধবার প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সাথে দেখা করে একই আহ্বান জানিয়েছিলেন। গ্রেফতার ও হয়রানিতে থাকা সম্ভাব্য প্রার্থীদের নির্বাচনী কাজ বাধাহীন করা, কারাবন্দীদের প্রচারকাজে অংশগ্রহণের সুযোগ নিশ্চিত করা, বিরোধী দল সমর্থিতদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক পদক্ষেপ ঠেকাতে ইসির পদক্ষেপ চেয়েছেন তারা।
সিটি নির্বাচনের সময় বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার-হয়রানি বন্ধ রাখতে বিএনপি নেতারা আহ্বান জানিয়ে এলেও এক্ষেত্রে কোনো ছাড় না দেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম। তিনি গতকাল সাংবাদিকদের বলেছেন ফৌজদারি অপরাধে অপরাধী কোনো ব্যক্তি আদালতের অনুমতি বা জামিন ছাড়া নির্বাচনে অংশ নিতে চাইলে তার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। আইন অমান্য করে কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। এর আগে ১৪ দল শরিক জাসদ সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুও বলেছেন, নির্বাচনের জন্য কাউকে আইনি ছাড় দেয়া হবে না।
মনোনয়নপত্র সংগ্রহকারী আবদুল আউয়াল মিন্টু ও আবদুস সালাম তাদের বিরুদ্ধে করা বিভিন্ন মামলায় জামিনে রয়েছেন। সেলিম ভূইয়া নাশকতার মামলায় কারাবন্দী। পিন্টু পিলখানায় হত্যাকাণ্ডের মামলায় দণ্ড নিয়ে কারাভোগ করছেন। এছাড়া ঢাকা এবং চট্টগ্রামে কাউন্সিলর হতে ইচ্ছুক অনেকের নামেই রয়েছে একাধিক মামলা।
এদিকে বিএনপি শেষ পর্যন্ত যদি নির্বাচনে আসার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দেয় এবং এখন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেও যদি শেষ মুহূর্তে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেয়, তাহলে এর সুযোগ নেয়ার লক্ষ্যে আগাম প্রস্তুতি হিসেবে ঢাকা ও চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের বাইরেও কয়েকজন মেয়র পদে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। তাদের ধারণা, বিএনপিসহ ২০ দল যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে না থাকে তাহলে ২০ দল সমর্থক ও সরকারবিরোধী ভোট তাদের ঘরে যেতে পারে।
উল্লেখ্য, ঢাকা উত্তরে এরই মধ্যে মেয়র পদে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন নাগরিক ঐক্যের কারাবন্দী আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিকল্পধারার যুগ্ম-মহাসচিব মাহী বি. চৌধুরী এবং সাবেক সংসদ সদস্য ও চলচ্চিত্রাভিনেত্রী সারাহ বেগম কবরী (কবরী সারোয়ার)। আর ঢাকা দক্ষিণে মেয়র পদে লড়াইয়ের জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য এবং বর্তমানে দলটির সাথে দূরত্বে থাকা গোলাম মাওলা রনি।