শিক্ষা থেকে বঞ্চিত শিশুরা জানে না স্কুলে না যাওয়ার ক্ষতির দিকটা

তাছির আহমেদ: গাছের ঝরা পাতা কুড়িয়ে বস্তাবন্দি করে বাড়ি এনে খড়ির অভাব পূরণ করছে শিশুরা। তবে ইচ্ছায় নয় অনিচ্ছায়। দামুড়হুদার শিশির মাঠের এক আমবাগানে গতকাল দুপুরে দশমীর ৩ শিশুকে এভাবে খড়ি কুড়োতে দেখা গেছে। এদের প্রত্যেকের বয়স ১০ থেকে ১২ বছর হবে। স্কুল সহপাঠীদের সাথে বইখাতা নিয়ে যে সময়টি হই হুল্লোড় করে খেলাধুলা করবে, সে সময়টি এদের কাটে টাকা উপার্জনের ঘানি টেনে টেনে। লেখাপড়া বন্ধ করে পরের দোকানে কাজ করে, সে দিনহাজিরার টাকাটিও তুলে দিতে হয় তাদের অভিভাবকের হাতে। লেখাপড়া না শিখিয়ে যে ভুল এদের পিতা-মাতা করছে, সে ভুলের মাশুল ভবিষ্যতে এ শিশুরা কিভাবে পূরণ করবে!

গতকাল শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি হওয়ায় সকালের ভাত খেয়ে প্রত্যেকে ৫টি করে বস্তা আর ১টি করে ঝাটা হাতে নিয়ে এরা বাড়ি থেকে বেরিয়েছে গাছের ঝরা পাতা কুড়োতে। দামুড়হুদার শিশির মাঠের এক আমবাগানে গতকাল দুপুরে কথা হয় এদের সাথে। এদের সকলেরই বাড়ি দামুড়হুদার দশমী গ্রামে। দারিদ্র্যের ছাপ এদের চোখে-মুখে। বাধ্য হয়ে লেখাপড়া না শিখে পরের দোকানে এরা দিনহাজিরায় কাজ করে। তাতে দিন আয় হয় ৬০-৭০ টাকা। সন্ধ্যার আগে বাড়ি এসে এ টাকা তুলে দিতে হয় তাদের মা-বাবার কাছে।

দামুড়হুদা দশমীর ভ্যানচালক আনোয়ার হোসেন ওরফে আনুর ছেলে আব্দুল হাকিম (১২) বলে, ক্লাস টু পাস করে থ্রিতে উঠেলাম। এ অবস্থায় তার বাবা লেখাপড়া বন্ধ করে দিয়ে কাঠমিস্ত্রির দোকানে তাকে হেলপারি করতে লাগিয়ে দেয়। এ হেলপারির কাজে দোকানি তার দিন হিসেবে ৫০ টাকা হাতে দেয়। একই পাড়ার শুকুর আলীর ছেলে সাঈদী (১৩) বলে, আমি থ্রি পাস। আমিও কাঠমিস্ত্রির হেলপারি করে দিন ৬০ টাকা পায়। একই পাড়ার দিনমুজুর রফিকুলের ছেলে সারজেল (১১) বলে, আমি ক্লাস টুতে পড়ি। পরের দোকানে কাজ করি না, স্কুলে যাই আর সকাল-সন্ধ্যা বাড়িতে পড়ি।

সকল ভয়ভীতি কাটিয়ে এরা জানায়, তাদের সংসারে খড়ি কেনার দায় থেকে বাঁচতে তারা এ কাজ করে। খড়ি কুড়ানোর কাজ না করলে তাদের মা বকে আবার স্কুলে না গেলে স্যার বকে। স্কুলে যাওয়ার অদম্য ইচ্ছা প্রকাশ করে অবুঝ শিশুরা আরো জানায়, খড়ি কুড়িয়ে বাড়ি ফিরতে ফিরতে দুপুর গড়িয়ে সেই বিকেল হয়ে যায়। শিক্ষা থেকে বঞ্চিত এ অবুঝরা এখনও জানে না শিশুদের স্কুলে না যাওয়ার ক্ষতির দিকটা।