ঘটনাস্থল ও আশপাশের ছবি তুললো এফবিআই

স্টাফ রিপোর্টার: লেখক ও মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের তদন্তে প্রযুক্তি ও কৌশলগত সহায়তা দিতে চান সফররত ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) প্রতিনিধিরা। গতকাল শুক্রবার হত্যাকাণ্ডের স্থান পরিদর্শন শেষে এফবিআই সদস্যরা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি) এ কথা জানান। এদিন দুপুরে চার সদস্যের প্রতিনিধি দলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলন চত্বরের উল্টো দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসংলগ্ন ফুটপাতে দাঁড়িয়ে ঘটনাস্থলের স্কেচ তৈরি করেন তারা। প্রায় এক ঘণ্টা অবস্থানকালে এফবিআই সদস্যরা ঘটনাস্থল ছাড়াও বাংলা একাডেমীর বইমেলা থেকে যে পথ ধরে অভিজিৎ ও তার স্ত্রী ঘটনাস্থলে এসেছিলেন সে পথের স্থির ও ভিডিও চিত্রধারণ করেন। পরে ঘটনাস্থলের একটি স্কেচ ম্যাপও তৈরি করেন। এ সময় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তাদের সাথে ছিলেন।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকরা এফবিআই সদস্যদের সাথে কথা বলতে চাইলে তারা সাড়া দেননি। পরে প্রতিনিধি দলের সাথে থাকা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপকমিশনার কৃষ্ণপদ রায় সাংবাদিকদের বলেন, এফবিআই প্রতিনিধি দলটি মূলত টেকিনিক্যাল সহযোগিতা দিতে চাইছে। বৃহস্পতিবার সকালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রতিনিধি দলটি ঢাকায় আসার পর থেকেই গোয়েন্দা পুলিশের পক্ষ থেকে কয়েক দফা তদন্ত প্রক্রিয়া ও অগ্রগতি সম্পর্কে তাদের ধারণা দেয়া হয়েছে।

এদিকে অভিজিৎ রায় হত্যার ঘটনায় নতুন করে আর কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তবে সন্দেহভাজন আরও কয়েকজনকে গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন কৃষ্ণপদ রায়। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক অভিজিৎ রায় হত্যা ঘটনা তদন্তে বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকায় আসে এফবিআইর এ প্রতিনিধি দল। ওই দিন ঢাকায় নেমেই তারা মামলার তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ ডিবির সাথে প্রায় ৩ ঘণ্টা বৈঠক করে। এর আগে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের তদন্তে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে ডিবি। এফবিআই সদস্যরা গোয়েন্দা পুলিশের ওই তদন্ত কমিটির কাছ থেকে খুনের বর্ণনা, আলামত উদ্ধার ও গ্রেফতারসহ সন্দেহভাজনদের ব্যাপারে একটি ধারণা নেন। শুক্রবার সকালে আবারও মিন্টো রোডে গোয়েন্দা কার্যালয়ে এসে সংক্ষিপ্ত বৈঠক শেষে এফবিআই সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান। তারা প্রথমে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ করেন। সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থানের পর যান বাংলা একাডেমীতে। ২৬ ফেব্রুয়ারি ঘটনার রাতে অভিজিৎ রায় ও তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা বাংলা একাডেমী থেকে যে পথ ধরে (সম্ভাব্য) ঘটনাস্থলে পৌঁছান এফবিআই সদস্যরাও সে পথ ধরে ঘটনাস্থলে আসেন। প্রায় এক ঘণ্টা অবস্থানের পর এফবিআই সদস্যরা আবার মিন্টো রোডের গোয়েন্দা কার্যালয়ে যান।

কৃষ্ণপদ রায় বলেন, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও এফবিআই পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে এ হত্যার তদন্ত কাজ শুরু করেছে। এ ঘটনায় আর কাউকে গ্রেফতার বা আটক করা যায়নি জানিয়ে তিনি জানান, কয়েকজন সন্দেহভাজনকে খোঁজা হচ্ছে। তদন্তে উল্লেখযোগ্য সফলতা এলে তাৎক্ষণিকভাবে তা গণমাধ্যমকে জানানো হবে।

২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে বইমেলা থেকে বের হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় অভিজিৎ রায় ও তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাকে কুপিয়ে আহত করে দুর্বৃত্তরা। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান অভিজিৎ। এ ঘটনায় গুরুতর আহত বন্যাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই হাসপাতাল থেকেই ঢাকার যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের তত্ত্বাবধানে ৩ মার্চ উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যান বন্যা।

এদিকে হত্যাকাণ্ডের দু ঘণ্টার মধ্যে আনসার বাংলা-৭ নামে একটি সংগঠন টুইটারে হত্যার দায় স্বীকার করে। নিহত অভিজিতের বাবা অধ্যাপক অজয় রায় ২৭ ফেব্রুয়ারি শাহবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। ওই মামলায় তিনি কারও নাম উল্লেখ না করলেও সাংবাদিকদের বলেন, ধর্মীয় উগ্রবাদীরাই অভিজিৎকে হত্যা করেছে। এরই মধ্যে অভিজিৎ হত্যার ঘটনায় সন্দেহভাজন শফিউর রহমান ফারাবীকে গ্রেফতার করে ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। ফারাবী এর আগে ২০১৩ সালে ব্লগার রাজীব হত্যাকাণ্ডের পর ফেসবুকে উসকানিমূলক স্ট্যাটাস দিয়ে গ্রেফতার হয়েছিলেন।

অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে ২৭ ফেব্রুয়ারি ওয়াশিংটনে এক প্রেসব্রিফিঙে তদন্তে সহযোগিতা করার আগ্রহের কথা জানায় যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সহায়তা নেয়ার বিষয়ে সম্মতি জানানোর পরিপ্রেক্ষিতে চার সদস্যের এফবিআই প্রতিনিধি দলটি ঢাকায় আসে।

এদিকে অভিজিৎ রায় হত্যার বিচারের দাবিতে গতকাল শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছেন বুয়েটের সাবেক শিক্ষার্থীরা। প্রসঙ্গত, এবারের একুশে বইমেলায় নিজের বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় এসেছিলেন অভিজিৎ-রাফিদা দম্পতি। অভিজিৎ পেশায় প্রকৌশলী। তার স্ত্রী বন্যা চিকিৎসক। ধর্মবিষয়ক ও বিজ্ঞানভিত্তিক লেখালেখির কারণে উগ্রবাদীরা অভিজিৎকে বেশ কিছুদিন ধরেই হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিলো।