দর্শনায় অনির্বাণ থিয়েটারের ৭ দিনব্যাপি একুশে মেলার উদ্বোধন

একুশ বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তির প্রেরণায় সমজ্জ্ব

 

হারুন রাজু/হানিফ মণ্ড: প্রতিবছরের মতো এ বছরো একুশের মেলার আয়োজন করেছে অনির্বাণ থিয়েটার। ‘একুশ বহিবো মনে-সকল শুভক্ষণে’ এ প্রতিবাদ্যকে বুকে ধারণ করে মহান একুশের ৭ দিনব্যাপি মেলা ও নাট্যোৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। দর্শনা কলেজ মাঠে ৭ দিনের এ মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে গতকাল রোববার সন্ধ্যা ৭টায়। উপস্থিত অতিথি ও স্থানীয় শিল্পীদের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠানের শুভসূচনা করা হলেও ঢাকের বাজনা উদ্বোধনী আয়োজনের বাড়তি আনন্দ ছড়িয়ে দেয়। যাদের অবদানে আজকের এ স্বাধীনতা, জাতীর সেই শ্রেষ্ঠসন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আলোচনাপর্ব শুরু হয়। অনির্বাণ থিয়েটারের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হকের সভাপতিত্বে আলোচনা করেন বীর যুদ্ধকালীন কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত আলী, আব্দুস সবুর, রুস্তম আলী, আব্দুর রহমান, মহাসীন আলী, জাহাঙ্গীর আলম, বদরুল আলম ফিট্রু, কথাশিল্পী আবুল কাশেম, আশরাফ আলী প্রমুখ। অনির্বাণ থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক, ওয়েভ ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক আনোয়ার হোসেনের প্রাণবন্ত উপস্থাপনায় আলোচনা পর্বে বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন, একুশের ইতিহাস রক্ত আর সন্তান হারা দুঃখিনী মায়ের অশ্রু দিয়ে লেখা ইতিহাস। ১৯৫২’র ভাষা আন্দোলনে যাদের রক্তে লাল হয়েছিলো বাংলা মাটি, আমরা তাদের ভুলবোনা কোনো দিন। রাজপথের সেই রক্তের দাগ হয়তো মুছে গেছে, কিন্তু যতোদিন থাকবে এ পৃথিবী বিদ্যমান, ততোদিন বাঙালি জাতির অন্তর থেকে মুছবে না সে শোকের ক্ষত। যে ভাষার জন্য এতো ত্যাগ, সেই মায়ের ভাষা আজ বিকৃত হচ্ছে নানাভাবে। তাই আসুন একুশের মহিমায় মহিমান্নিত হয়ে বাংলা ভাষার মহত্মকে অক্ষুণ্ণ রাখি। বীর মুক্তিযোদ্ধা আলোচনা পর্বের শেষেই ৪টি বিষয়ে মনমুগ্ধকর ডিসপ্লে পরিবেশন করা হয়েছে। ডিসপ্লে পরিবেশন করা হয় বিশ্বকবি রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের বসন্ত বরণের গান ‘আহা আজি এ বসন্তে’ বিদ্রোহী কবি কাজি নজরুল ইসলামের বিদ্রোহী কবিতা ‘কারার ওই লৌহ কপাট, ভেঙে ফেলো কররে লোপাট’ গ্রামবাংলার মানুষের প্রাণের শিল্পী আব্দুল আলীমের কালজয়ী গান ‘সর্বনাশা পদ্মা নদী’ এবং মরমি কবি বাউল সম্রাট ফকির লালনের বিখ্যাত গান ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’ গানের মধ্যদিয়ে। ডিসপ্লেতে অংশ নেয় প্রায় অর্ধশত শিশু শিল্পী। এর আগে সকালে শিশুদের বর্ণলিখন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সবশেষে পরিবেশিত হয় অনির্বাণ থিয়ের্টারের পরিবেশনায় নাটক ‘জিষ্ণুযারা’। এবারের একুশে মেলার ৭ দিনব্যাপি আয়োজনের মধ্যে রয়েছে- প্রতিদিন সন্ধ্যায় আলোচনাপর্ব, সঙ্গীত, নাটক ও আবৃত্তিসহ নানা অনুষ্ঠান। মেলার শোভাবর্ধনে সাহিত্যিক আবু সুফিয়ানের তথ্য সমৃদ্ধ একটি মনোরম স্টোর। মেলার অন্যান্য আয়োজনের মধ্যে স্টল, নাগরদোলা, মিনি চিড়িয়াখানাসহ বিনোদনের নানা দিক। এবারের একুশে মেলার মিডিয়া পার্টনার হিসেবে রয়েছে দৈনিক মাথাভাঙ্গা ও কালের কণ্ঠ।