শেষ পর্যন্ত এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার সময়সূচিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অবরোধের পাশাপাশি হরতাল আহ্বান করায় এ ঘটনা ঘটলো। ৫ জানুয়ারির পর থেকে দেশে লাগাতার অবরোধের পাশাপাশি হরতাল কর্মসূচি থাকায় এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নির্ধারিত তারিখে অনুষ্ঠিত হবে কি-না- এ নিয়ে অভিভাবক ও পরীক্ষার্থীরা সংশয়ে ছিলেন। অবশেষে তাদের আশঙ্কাই সত্য হলো। এর ফলে আজ থেকে সারাদেশে একযোগে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। গতকালের নির্ধারিত পরীক্ষা শুক্রবার ও বাকি পরীক্ষা যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। উল্লেখ্য, এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় সর্বমোট ১৪ লাখ ৭৯ হাজার ২৬৬ জন শিক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে। পরীক্ষার্থীরা ৩ হাজার ১১৬টি কেন্দ্রে পরীক্ষা দেবে। অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা হরতাল-অবরোধের মধ্যে পরীক্ষা না চাইলেও পরীক্ষা পেছানোর পক্ষপাতিও তারা নন। ঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী পরীক্ষা শুরু ও শেষ হোক এটাই তাদের চাওয়া। এজন্য তারা পরীক্ষার পরিবেশ তৈরি করতে রাজনীতিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। অবশ্য নির্বিঘ্নে ও নিরাপদে পরীক্ষা অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে পুলিশ-ৱ্যাবের পাশাপাশি পর্যাপ্ত সংখ্যক বিজিবি মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে ব্যক্তি নয়, সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। এ ধরনের বক্তব্য হাস্যকরই বটে! ব্যক্তিগতভাবে কেউ সুরক্ষিত না থাকলে সার্বিক নিরাপত্তা-বলয় তার কী উপকারে আসবে- বোধগম্য নয়। দেশের শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিনিয়ত নানা সমস্যা ও প্রতিকূল অবস্থা অতিক্রম করছে। শিক্ষার্থীদের জন্য শান্তিপূর্ণ ও স্বস্তিদায়ক শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করার পরিবর্তে নানা উপায়ে তা বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে বর্তমানে স্কুল পর্যায়ের শিক্ষাব্যবস্থাও নির্বিঘ্ন রাখা যাচ্ছে না। গত বছরও রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে হরতাল আহ্বান করায় এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা পরিচালনায় বিঘ্ন ঘটেছে। মাঝখানে কিছুদিন রাজনৈতিক অঙ্গনে কিছুটা স্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করলেও এখন আবার চরম অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যদি কোনো সমঝোতা না হয়, তাহলে শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। এরকম অবস্থা যাতে তৈরি না হয়, সে ব্যাপারে সবার যত্নবান হওয়া উচিত। বস্তুত রাজনৈতিক কর্মসূচি দেশের অন্তত সাড়ে ৪ কোটি শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। বিরোধী দলের অবরোধ-হরতালের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে পরীক্ষার সময়সূচি লণ্ডভণ্ড হলে ফল প্রকাশ ও নতুন বছরের শিক্ষা কার্যক্রমও পিছিয়ে যাবে- তা বলাই বাহুল্য। এ নিয়ে ছাত্র-শিক্ষক ও অভিভাবকরা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হলেও এ দুশ্চিন্তা আমাদের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে স্পর্শ করছে না। জাতির ভবিষ্যত বিনষ্টকারী হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি থেকে তারা বেরিয়ে এসে সমস্যা সমাধানের বিকল্প কোনো পন্থা অন্বেষণ করছেন না। জাতি হিসেবে এটা আমাদের জন্য খুবই লজ্জা ও গ্লানির ব্যাপার। নতুন প্রজন্মকে ক্ষতি ও ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে চলতি এসএসসি তথা বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষাসহ শিক্ষাঙ্গনে বিরাজমান বিশৃঙ্খল অবস্থার দ্রুত অবসান ঘটানো উচিত।