অপপ্রচার রুখে ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে তুলুন

স্টাফ রিপোর্টার: সব ধরনের অপপ্রচার রুখে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে তোলার জন্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারক ও কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বর্তমানে নানা ধরনের অপপ্রচার চালিয়ে দেশের ভাবমূর্তি নষ্টের অপচেষ্টা চলছে। এটা মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ। আমরা জানি এটা মোকাবেলা করতে পারব। তিনি এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে সাহস নিয়ে কাজ করার জন্যে কর্মকর্তাদের বলেন। তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে গিয়ে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে দেয়া বক্তৃতায় এ কথা বলেন। সকাল সাড়ে ১০টায় গিয়ে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী গত বছরের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে বলেন, বিএনপির ওই সময়ের সহিংসতার লক্ষ্য ছিলো নির্বাচন বানচাল করা। কারণ, তারা নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো।

তিনি বলেন, দীর্ঘ সময় মার্শল ল এবং সামরিক স্বৈরশাসকরা দেশ পরিচালনা করেছে। সামরিক স্বৈরশাসকদের মতোই কী আমরা অসাংবিধানিক পথে আবার ক্ষমতা বদল হতে দিতে পারি? আমরা এটা আবারও হতে দিতে পারি না। পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হকের নেতৃত্বে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে উপস্থাপনা দিয়েছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর ছবি উপহার দেয়া হয়। একটি ভিডিও উপস্থাপনাও দেয়া হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জনবল স্বল্পতা বিশেষ করে ২০১০টি নতুন পদ সৃষ্টি করে লোকবল নিয়োগের তার পূর্বের সিদ্ধান্ত যে বাস্তবায়ন হয়নি সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তারা বলেন, এখন পর্যন্ত মাত্র ২৫টি পদ সৃষ্টি সম্ভব হয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ২০ তলা ভবন করাসহ একগুচ্ছ প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীকে দেয়া হয়। তিনি ফরেন সার্ভিস একাডেমীর ১০ বিঘা জমিতে নতুন কিছু করার পরামর্শ দেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এখানে এসে অনেক কিছু জানলাম। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দূতাবাসগুলোকে আরও সক্রিয় থাকতে হবে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশ পুরস্কৃত হয়, বাংলাদেশের মানুষ আন্তর্জাতিকভাবে সম্মানিত হয়। আর বিএনপি-জামায়াত জোট যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না তারা ক্ষমতায় থাকলে বাংলাদেশ হয় তিরস্কৃত। তাদের কাছে আজ বাংলাদেশ জিম্মি। এ অবস্থায় বাংলাদেশ থাকবে না। এটাই আমরা চাই।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের যে বর্তমান অবস্থা, কিছু কিছু ঘটনা, অপপ্রচার, হয়তো সাময়িকভাবে একটা কালো মেঘের মতো এসেছে। বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থার কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের সবসময়ই মোকাবেলা করতে হয়। দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ যে পারদর্শী সেটা প্রমাণিত হয়েছে। ঠিক সেভাবে মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ সাময়িক, এটা আমরা মোকাবেলা করতে পারবো। এখান থেকেও বাংলাদেশ বেরিয়ে আসবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে, সেটুকু আমি আপনাদের বলতে পারি।

এ লক্ষ্যে সতর্কতার সাথে কাজ চালিয়ে যেতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ঠিক সেভাবে পররাষ্ট্র কার্যক্রমটা… এদিকেও দৃষ্টি দিতে হবে যে, কেউ যেন অহেতুক প্যানিক সৃষ্টি না করে, ভুল বোঝাবুঝি না করে, সেদিকে একটু দেখতে হবে। আমরা গণতন্ত্র এনেছি। গণতান্ত্রিক ধারা বজায় রেখেই এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, না হলে দেশ উন্নত হবে না।

প্রধানমন্ত্রী গত ৬ বছরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরে বলেন, মানুষ পুড়িয়ে মারাটা যেন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার একমাত্র লক্ষ্য। তিনি বাংলাদেশের মানুষদের বোধহয় রাখতেই চান না। পাকিস্তানি বাহিনী যখন ২৫ মার্চ রাত থেকে গণহত্যা শুরু করে তখন তাদের ঠিক এ চরিত্রটাই ছিলো। একই কায়দায় এ হত্যাযজ্ঞ তারা চালাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ল্যান্ড বাউন্ডারি সেটাও আমরা একটা জায়গায় চলে এসেছি। এটা তাদের (ভারতের) পার্লামেন্টে আছে। আমরা আশা করছি সেটা তারা করে দেবেন। তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে যে আলোচনা, সেটাও প্রায় সমাধানের পর্যায়ে আছে। আমরা আশা করছি এসব সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। অর্থনীতি সম্প্রসারণে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা বিশেষ করে বিদেশে মিশনে কর্মরতদের দেশের ভাবমূর্তি তুলে ধরা এবং প্রবাসীদের প্রতি সংবেদনশীল ও দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী তাদের বিদেশে দেশের বিরুদ্ধে দুষ্ট চক্রের অপপ্রচারের ব্যাপারে সতর্ক থাকা এবং সংশ্লিষ্ট দেশের সাথে ব্যবসা বৃদ্ধি, বাণিজ্যের নতুন সুযোগ খুঁজে বের করা এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্টের পাশাপাশি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক জোরদারের প্রয়াস চালানোর আহ্বান জানান। তিনি কাজের গতিশীলতার লক্ষ্যে প্রত্যেক মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময়ের জন্য তার মন্ত্রণালয়গুলো পরিদর্শন কর্মসূচির অংশ হিসেবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে আসেন।

শেখ হাসিনা বলেন, কূটনীতি হচ্ছে টিম ওয়ার্ক। তা শুধু অন্য দেশের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্কের মধ্যেই আবদ্ধ নয়। বরং এ দায়িত্ব ব্যবসা-বাণিজ্যের খাতে সম্পর্কের উন্নয়ন এবং দেশের রফতানি ও অর্থনীতির সমৃদ্ধির জন্য বিনিয়োগ পর্যন্ত সম্প্রসারিত। ৮০ থেকে ৯০ লাখ বাংলাদেশি, যাদের পাঠানো রেমিটেন্সে দেশের অর্থনীতি সতেজ হচ্ছে, তাদের অবদান মনে রাখতে কূটনীতিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থনীতিতে প্রবাসীদের অবদান অবহেলিত হওয়া উচিত নয়।

তিনি বলেন, কূটনীতিকদের প্রবাসীদের সমস্যার কথা ধৈর্য সহকারে শুনতে হবে এবং তার সমাধান করতে হবে। প্রবাসীদের সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকাগুলো পরিদর্শন করতে হবে। অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বক্তৃতা করেন। এ সময় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিব মো. শহিদুল হক এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

যথাযথ অভিবাসন কাগজপত্রের অভাবে প্রবাসীরা যেন কোনোরকম সমস্যায় না পড়েন এজন্য মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) প্রক্রিয়া দ্রুত করতে কর্মকর্তাদের আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, পাসপোর্টধারীদের যাচাইয়ের সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সহায়তার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের টিম পাঠানোর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার জনশক্তি রফতানির জন্য স্বচ্ছ ব্যবস্থা প্রবর্তনের পদক্ষেপ নিয়েছে। স্মার্ট কার্ড চালু করা হয়েছে। যা একজন ব্যক্তি সম্পর্কে সব তথ্যের জোগান দেবে। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। মিথ্যা তথ্য দিয়ে কেউ যেন বিদেশে যেতে না পারে সে পদক্ষেপও নেয়া হয়েছে। এখন প্রবাসীদের প্রয়োজন দূতাবাসে কর্মরতদের পক্ষ থেকে ভালো ব্যবহার।