স্টাফ রিপোর্টার: বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোটের টানা অবরোধ ও হরতালে নাশকতা মোকাবেলায় মাঠে নেমেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। অবরোধের শুরু থেকেই রাজধানীর মোড়ে মোড়ে অবস্থান নিতে দেখা গিয়েছিলো দলটির নেতাকর্মীদের। এরপর জ্বালাও-পোড়াও বেড়ে গেলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হঠাত করেই উধাও হয়ে যায়। তবে বুধবার থেকে নতুন উদ্যমে তারা মাঠে নেমেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্ররা মাঠে সক্রিয় ছিলো। হরতাল ও অবরোধবিরোধী মিছিল-সমাবেশ ও অবস্থান নিয়ে রাজপথে সতর্ক অবস্থায় থাকতে দেখা গেছে তাদের। একই সাথে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কোথাও সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটি গঠন হয়েছে, কোথাও গঠনের প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পথে।
সহিংসতা দমনে প্রধানমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পুরস্কার ঘোষণা, ১৪ দলের নেতৃত্বে সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটি, ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে যৌথবাহিনীর অভিযানে সন্ত্রাসী, বোমাবাজ ও বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মী গ্রেফতার, পেট্রোলবোমার ব্যবহার কমে আসা এবং নাশকতার বিরুদ্ধে জনমত তৈরি হওয়ায় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা হয়েছে। তারা বিপুল উদ্যমে পুনরায় রাজপথে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। সরকারি দলের সংসদ সদস্যদের সক্রিয় হয়ে ওঠাও এ উদ্দীপনা সঞ্চারের অন্যতম কারণ। দলটির একাধিক নেতাকর্মীর সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ গতরাতে বলেন, সম্প্রতি যেভাবে পেট্রোলবোমা মেরে হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা তাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা করা যেকোনো সচেতন নাগরিকের দায়িত্ব। আমরা সেটাই করছি। দলের নেতাকর্মীরা মাঠে রয়েছেন। তারা বিভিন্নভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতা করছেন। তিনি আরও জানান, ইতোমধ্যে জোরালো প্রতিরোধ সৃষ্টি করায় ৮০ ভাগ নাশকতা বন্ধ হয়ে গেছে। আশা করছি, বাকিটুকু অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর অবধি যুব সমাবেশের আয়োজন করে ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণ। সংগঠনের সভাপতি ইসমাঈল চৌধুরী সম্রাটের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী। অবরোধ-হরতালের নামে সারা দেশে বিএনপি-জামায়াত জোটের অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ হত্যার প্রতিবাদে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা ছাড়াও ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ড ও মহল্লার কয়েক হাজার নেতাকর্মী এতে উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশে নেতাকর্মীদের লোহার রড নিয়ে মাঠে নামার নির্দেশ দেন যুবলীগের ওমর ফারুক চৌধুরী। তিনি বলেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া পেট্রোলবোমা দিয়ে মানুষ হত্যা করছেন। আগে আমরা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লাঠি মিছিল করতাম। এখন আর শুধু লাঠি নয়, প্রস্তুত থাকুন, লোহার রড নিয়ে মাঠে নামতে হবে। মানুষ হত্যা বন্ধ না করলে খালেদা জিয়ার কার্যালয় ঘেরাও করা হবে। ওমর ফারুক চৌধুরী আরও বলেন, বিএনপি নেত্রীকে আর সন্ত্রাস করতে দেয়া হবে না। সন্ত্রাস প্রতিরোধে যুবলীগের নেতৃত্বে দেশব্যাপি পাড়া-মহল্লায় যুব ব্রিগেড কমিটি গঠন করা হবে বলে জানান তিনি।
যুবলীগের সমাবেশ চলার সময় গুলিস্তান এলাকায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন জাতীয় শ্রমিক লীগ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, আওয়ামী ওলামা লীগ হরতালবিরোধী খণ্ড খণ্ড মিছিল বের করে শহীদ নূর হোসেন স্কোয়ার, মতিঝিল এবং পল্টন এলাকা প্রদক্ষিণ করে।
রাজধানীর ফার্মগেট এলাকার আনন্দ সিনেমা হলের সামনে হরতালবিরোধী সমাবেশ করে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগ। রাজধানীর ১৩টি স্থানে যুবলীগ উত্তরের নেতাকর্মীদের অবস্থান ছিলো বলে জানান সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন। তিনি বলেন, মিরপুর-১ নম্বর, ১০ নম্বর গোলচত্বর, উত্তরার রাজলক্ষ্মী মোড়, শ্যামলী, খিলক্ষেত, গুলশান-২ নম্বর এলাকায় যুবলীগের নেতাকর্মীরা হরতালবিরোধী অবস্থান নেয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই অর্ধশতাধিক মোটরসাইকেলে ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোড, ধানমণ্ডি, মোহাম্মদপুর, তেজগাঁও এলাকায় মহড়া দিতে দেখা গেছে। মহানগর উত্তরের অন্তর্গত ২৮টি পয়েন্টে গতকাল সতর্ক অবস্থানে ছিলো ছাত্রলীগ। এছাড়া বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই রাজধানীর মোড়ে মোড়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের অবস্থান চোখে পড়ে। দুপুরে মতিঝিল বলাকা চত্বরের সামনে সমাবেশ করে জাতীয় শ্রমিক লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ। এ সমাবেশে আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, শ্রমবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক আযম খসরু, নগর নেতা শাসছুল আলম বকুল প্রমুখ বক্তৃতা করেন। সমাবেশে অবরোধকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি ব্যক্ত করা হয়।
অবরোধ তুলে নিতে খালেদা জিয়াকে আলটিমেটাম: অবরোধ তুলে নিতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আলটিমেটাম দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থক কয়েকটি সংগঠন। গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগ, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগ, ঢাকা জেলা হিউম্যান হলার সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন, ঢাকা জেলা ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন, গার্মেন্ট শ্রমিক ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কয়েক’শ কর্মী বিএনপি চেয়ারপরাসনের গুলশান কার্যালয় ঘেরাওয়ের উদ্দেশে রওনা হয়। অবশ্য গুলশান-২ নম্বর গোলচত্বরে পুলিশ তাদের আটকে দেয়।
এছাড়া ঢাকার বাইরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের নেতাকর্মীরা আগের চেয়ে সক্রিয় হয়েছেন। গত বুধবার থেকে তাদের নতুন চেহারায় দেখা যাচ্ছে। বৃহস্পতিবারও অবরোধ-হরতালবিরোধী জোরালো অবস্থানে ছিলেন ক্ষমতাসীন দল ও তাদের মিত্ররা।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগ শহরে মানববন্ধন করে তাদের উপস্থিতি বজায় রাখে। বন্দরনগরী চট্টগ্রামের প্রতিটি ওয়ার্ডে সক্রিয় ছিলো ছাত্রলীগ। তারা লাঠি মিছিল করেছে। বগুড়া শহরেও অবরোধ ও হরতালবিরোধী মিছিল-সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনগুলো। যশোরে মাঠ দখল রাখার চেষ্টায় সক্রিয় স্থানীয় আওয়ামী লীগ বৃহস্পতিবার সভা-সমাবেশ করেছে। সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দলীয় কার্যালয়ে সভা করেছে। সেখান থেকে নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়।