স্টাফ রিপোর্টার: বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের টানা অবরোধে দেশজুড়ে চলমান নাশকতা রোধে ৱ্যাব-পুলিশ-বিজিবির সর্বোচ্চ প্রস্তুতির মাঝেই ঢাকা ও দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আরো ২৩টি যানবাহনে পেট্রোলবোমা মেরে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে দু ট্রাকচালকসহ ৬ জন দগ্ধ হন। এছাড়া নানা তাণ্ডবে ১০ জন পরিবহন যাত্রীসহ অর্ধশতাধিক নিরীহ ব্যক্তি আহত হয়েছেন। চাঁদপুরে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় এবং ঝালকাঠিতে এক যুবলীগ নেতার বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। ১৪ জানুয়ারি রাজধানীর বঙ্গবাজার এলাকায় ককটেলের আঘাতে আহত কলেজ শিক্ষার্থী সানজিদ হাসান অভি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় (২৪) মারা গেছেন। এ নিয়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের হরতাল-অবরোধের ১৭ দিনে রাজনৈতিক সহিংসতায় ৩০ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১১ জন পরিবহন শ্রমিক। এ সময় সাড়ে ৬ শতাধিক যানবাহনে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। ভাঙচুর করা হয়েছে অন্তত ৩ হাজার যানবাহন।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রদলের ডাকা ৪৮ ঘণ্টা ধর্মঘটের শেষ দিনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কার্যালয়ের সামনে হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। কোতোয়ালি থানার ওসি আবুল হাসান জানান, বেলা ২টায় উপাচার্যের কার্যালয় ভবনের প্রধান ফটকের সামনে একটি বোমার বিস্ফোরণ হয়। তবে এতে কেউ হতাহত হননি। কারা হাতবোমা ফাটিয়েছে পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে বলে জানান তিনি। জধানীর পশ্চিম রামপুরায় সুপার শপ স্বপ্নের আউটলেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা তাদের একটি কাভার্ডভ্যানে অগি্নসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় এ নাশকতার ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, একদল দুর্বৃত্ত হঠাত এসে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ওই কাভার্ডভ্যানে আগুন ধরিয়ে দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। তবে আগুন ভয়ঙ্করভাবে ছড়িয়ে পড়ার আগেই স্থানীয়রা তা নিভিয়ে ফেলে। রামপুরা থানার অপারেশন অফিসার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোস্তাফিজুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। পরিবহন সংশ্লিষ্টদের দাবি, ৱ্যাব-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সর্বোচ্চ তৎপরতা এবং প্রশাসনিক নানা উদ্যোগের পরও চলমান সহিংসতা বন্ধে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। প্রতিদিনই ৪০-৫০টি গাড়ি পুড়ছে। দুর্বৃত্তদের হামলা-ভাঙচুরের শিকার হচ্ছে শতাধিক যানবাহন। এতে পরিবহন মালিকরা রাস্তায় গাড়ি নামানোর সাহস হারিয়ে ফেলেছে। যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় যাত্রীরাও আতঙ্কিত। ফলে সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের নেতারা চলমান সহিংস পরিস্থিতির উত্তরণের নির্ধারিত সময় বেঁধে দিলেও যোগাযোগ ব্যবস্থা ক্রমেই ভেঙে পড়ছে।
বৃহস্পতিবার দিনদুপুরে সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে গানপাউডার ছিটিয়ে দুটি বাসে আগুন দিয়েছে যাত্রীবেশী দুর্বৃত্তরা। এছাড়া একটি লেগুনা (হিউম্যান হলার) ও একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায়ও আগুন দেয় তারা। সকাল সাড়ে ৯টায় সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কের হিলালপুর ও শ্রীরামপুর এলাকায় এ ঘটনা দুটি ঘটে। স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, সকাল ৯টায় সিলেট কদমতলী টার্মিনাল থেকে একটি বাস (সিলেট-ব-১১-০০৪৩) জকিগঞ্জের উদ্দেশে ছাড়ে। বাসটি দক্ষিণ সুরমার মোগলাবাজার থানাধীন শ্রীরামপুর এলাকায় যাওয়ার পর যাত্রীবেশী কয়েকজন দুর্বৃত্ত চালকের মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে গাড়ি থামাতে বলে। পরে তারা গাড়ি থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে গানপাউডার ছিটিয়ে বাসটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে তারা মোটরসাইকেলযোগে পালিয়ে যায়।
সকাল সাড়ে ৯টায় গোলাপগঞ্জের হিলালপুরে একই কায়দায় গানপাউডার ছিটিয়ে আরো একটি বাসে (সিলেট ব ১১-০০১৩) আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। বাসটি গোলাপগঞ্জ থেকে সিলেট আসছিলো। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন চেষ্টা চালিয়ে বাস দুটির আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে এর আগেই বাস দুটি পুড়ে যায়। প্রায় একই সময় দক্ষিণ সুরমার শ্রীরামপুর এলাকায় আরো একটি লেগুনা ও একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় অগি্নসংযোগের ঘটনা ঘটে।
দিনাজপুরে কাহারোল ও ঘোড়াঘাট উপজেলায় দুটি মাল বোঝাই ট্রাকে পেট্রোলবোমা ছুড়ে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে দগ্ধ হয়েছে দু চালকসহ ৪ জন। বুধবার দিবাগত রাতে কাহারোল উপজেলার গড়েয়া ভাদগাঁ ব্রিজে এ ঘটনা ঘটে। পেট্রলবোমায় গুরুতর দগ্ধরা হলেন ট্রাকচালক রফিকুল ইসলাম (৪৫), ট্রাক শ্রমিক আবদুল মালেক ও যাত্রী চৌধুরী (২৭)। তাদের ৩ জনকেই দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অবস্থার অবনতি হলে পরে রাতেই তাদের রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। আহত ট্রাকচালক রফিকুল ও যাত্রী চৌধুরীর মুখ, পেটসহ সব শরীর ঝলসে যাওয়ায় তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।