স্টাফ রিপোর্টর: ভোক্তাদের বিরোধিতার মুখে ফের বাড়ছে বিদ্যুতের মূল্য। ১ ফেব্রুয়ারি থেকে বিদ্যুতের নতুন মূল্য কার্যকর হচ্ছে। গতকাল কাওরান বাজারে টিসিবি অডিটরিয়ামে এ সংক্রান্ত গণশুনানি শুরু হয়েছে। এতে পাইকারি বিদ্যুতের দাম ১৮ দশমিক ১২ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। প্রস্তাব অনুযায়ী গড়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের মূল্য বাড়বে ৮৫ পয়সা। প্রস্তাবের বিপরীতে বাংলাদেশ অ্যানার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) পাইকারি বিদ্যুতের দাম গড়ে ৫ দশমিক ১৬ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে। এর আগে গত বছর মার্চে খুচরা বিদ্যুতের মূল্য ৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিলো। গতকাল মঙ্গলবার সকালে পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ওপর গণশুনানি হয়। শুনানির শুরুতে পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের ওপর যুক্তি উপস্থাপন করেন পিডিবি’র প্রধান প্রকৌশলী (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মিজানুর রহমান।
তেলভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্রে সরকারের ভর্তুকি কমানোর বিষয়টি দাম বাড়ানোর পেছনে যুক্তি হিসেবে দেখানো হয়। পিডিবির পক্ষ থেকে বলা হয়, ২০১৪ অর্থবছরে বিদ্যুৎ উৎপাদনে তাদের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ৩১ শতাংশ। বর্তমানে তাদের প্রতি ইউনিট বিদ্যুত উৎপাদন ও বিতরণে খরচ পড়ছে ৬ দশমিক ৫৪ টাকা। আর পাইকারি বিদ্যুৎ বিক্রি করা হচ্ছে ৪ দশমিক ৬৭ টাকায়। বিতরণ কোম্পানিগুলোর কাছে বিক্রির ক্ষেত্রে পাইকারি মূল্য গড়ে ১৮ দশমিক ১২ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করে। বিতরণ সংস্থাগুলোর কাছে গড়ে ৫ দশমিক ৫২ টাকায় প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রি করতে চায় পিডিবি। পিডিবির প্রস্তাবনার ওপর বিইআরসির কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি তাদের মূল্যায়ন প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, সবকিছু বিবেচনা করে পিডিবি পাইকারি বিদ্যুতের মূল্য ৫ দশমিক ১৬ শতাংশ বাড়াতে পারে। এতে পাইকারি বিদ্যুতের নতুন মূল্য হবে ৪ দশমিক ৮৯ টাকা প্রতি ইউনিট। গণশুনানির প্রশ্নোত্তরপর্বে অংশ নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক, ব্যবসায়ী ও ভোক্তা সংগঠন পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন। কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম অভিযোগ করেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য ৭০ শতাংশ কমে গেছে। এখন সময় এসেছে বিদ্যুতের মূল্য কমানোর। পিডিবি’র প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়। গতবছর একই অজুহাতে তারা বিদ্যুতের মূল্য বাড়িয়েছিল। বিদ্যুৎ খাতে অনেক বেসরকারি কোম্পানিকে অনৈতিক সুযোগ সুবিধা দেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। বিদ্যুতের দাম বাড়লে শ্রমিক শ্রেণী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে উল্লেখ করে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, বিদ্যুতের সঙ্গে দৈনন্দিন জীবনের অর্থনীতি সংশ্লিষ্ট। নিম্নবিত্তরা সরাসরি বিদ্যুতের বাড়তি দাম পরিশোধ না করলেও তাদের জীবনধারণের খরচ বেড়ে যাবে। বিদ্যুৎ খাতে অনিয়মের বিষয়টি স্বীকার করে বিইআরসি চেয়ারম্যান এ আর খান বলেন, এ খাতে কিছু দুর্নীতি ও অপচয় আছে। প্রশাসনিক তদন্তের মাধ্যমে অনিয়ম চিহ্নিত করা হবে। ভোক্তাদের পক্ষে শুনানিতে আরও অংশ নেন তৈরী পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সেক্রেটারি কাজী শামসুল আলম, ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের এমপি ইয়াসীন আলী প্রধান প্রমুখ। বিইআরসি’র সদস্যদের মধ্যে ড. সেলিম মাহমুদ, ইঞ্জিনিয়ার মো. দেলোয়ার হোসেন, রহমান মুরশেদ ও মো. মাকসুদুল হক। এছাড়া, পিডিবি চেয়ারম্যান মো. আজিজুল ইসলাম এসময় উপস্থিত ছিলেন।
গণশুনানি শেষে বিইআরসি’র সদস্য ড. সেলিম মাহমুদ সাংবাদিকদের জানান, বিদ্যুতের নতুন মূল্যহার ১লা ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। তিনি বলেন, প্রায় দুই বছর পর পিডিবি পাইকারি বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। তাদের প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি হয়েছে। এরপর খুচরা বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানোর প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি হবে। ২৫শে জানুয়ারির মধ্যে গণশুনানি শেষ হবে। ১০ই ফেব্রুয়ারির মধ্যে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে কমিশন আদেশ দেবে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্য হ্রাসের পরেও কেন বিদ্যুতের মূল্য বাড়ছে- সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিপিসি হয়তো বা একটা কৌশল নিয়েছে যে সামনে তেলের দাম বাড়ালেও তারা আর বাড়াবে না। ভারসাম্য রক্ষার জন্য তারা এটা করছে। আমরা সবার সঙ্গে কথা বলবো। এমনভাবে নতুন মূল্য নির্ধারণ হবে যেন তা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়।
এদিকে গণশুনানি চলাকালে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে টিসিবি ভবনের সামনে বিক্ষোভ ও গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা। মোর্চার অন্তর্ভুক্ত বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন ও গণসংহতি আন্দোলন এ কর্মসূচিতে অংশ নেয়। এসময় বাম মোর্চার নেতারা বলেন, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কোন যৌক্তিকতা নেই। গণশুনানির প্রক্রিয়াও অবৈধ।