স্টাফ রিপোর্টার: বিশ্ব মুসলিমের সুদৃঢ় ঐক্য, শান্তি-সমৃদ্ধি ও উন্নতি, ভ্রাতৃত্ববোধ, সংহতি ও কল্যাণ এবং বাংলাদেশের উত্তরোত্তর সুখ-শান্তি ও অগ্রগতির জন্য পরম করুণাময় মহান আল্লাহর দরবারে অশেষ অনুগ্রহ কামনা করে আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে ৫০তম বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব গতকাল রোববার শেষ হলো। বিশেষ তাত্পর্যপূর্ণ এ আখেরি মোনাজাতে আত্মশুদ্ধি ও নিজ নিজ গুনাহ্ মাফের পাশাপাশি দুনিয়ার সব বালা মুসিবত থেকে হেফাজত করার জন্য দু হাত তুলে মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিনের অশেষ অনুগ্রহ কামনা করা হয়। ধনি-গরিব ভেদাভেদ ভুলে একই কাতারে শামিল হয়ে সবাই অশ্রুসিক্ত নয়নে সর্বশক্তিমান আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণে ব্যাকুল হয়ে পড়েন। এ সময় আমিন! আমিন!! ধ্বনিতে আকাশ-বাতাস মুখরিত করে মহামহিম দয়াময় আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি লাভের আশায় লাখ লাখ মুসল্লি আকুতি জানান।
গতকাল সকাল ১১-২২ মিনিটে শুরু হয়ে ১১-৫৪ মিনিট পর্যন্ত ৩২ মিনিট স্থায়ী আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন তাবলিগ জামাতের মারকাজের শুরা সদস্য ভারতের হযরত মওলানা মুহাম্মদ সা’দ। রীতি অনুযায়ী আখেরি মোনাজাতের পূর্বে সমাপনী বয়ানও করেন তিনি। সারা দুনিয়ার মুসলমানদের হজের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম এ মহাসম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে আখেরি মোনাজাতে বিশ্বের কয়েক হাজার মুসল্লিসহ প্রায় ৩০ লাখ মানুষ অংশ নিয়েছেন বলে আয়োজকরা মনে করছেন। আখেরি মোনাজাতে ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেলসহ রাজনৈতিক দলের নেতৃবর্গ শরিক হন।
টানা অবরোধ, বৃষ্টি ও প্রচণ্ড শীত উপেক্ষা করে গতকাল মোনাজাতে অংশ নিতে মানুষের স্রোত ছিলো ইজতেমামুখি। শনিবার কয়েক দফা বৃষ্টির পর ইজতেমা ময়দান ও আশপাশের এলাকায় বৃষ্টির পানি জমে কর্দমাক্ত হলেও কোনো মুসল্লি ময়দান ছেড়ে যাননি। গতকাল রোববার সকাল থেকে ইজতেমা ময়দান এলাকায় ও টঙ্গীতে ঘন কুয়াশা পড়তে দেখা যায়। বেলা ২টা পর্যন্ত সূর্যের আলো দেখা যায়নি। কুয়াশা ও শীত উপেক্ষা করে আখেরি মোনাজাতে শরিক হতে গাজীপুরের বিভিন্ন উপজেলা এবং আশপাশের জেলা থেকে বিপুলসংখ্যক মুসল্লি ইজতেমা ময়দানে আসতে থাকেন। ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে মুসল্লির সংখ্যা প্রথম পর্বের চেয়ে অনেক কম ছিলো বলে ইজতেমা সংশ্লিষ্ট অনেকের ধারণা। কেবল মোনাজাতে অংশ না নিয়ে দীনের প্রতি সময় লাগানোর জন্য সকল মুসলমানের প্রতি আহ্বান জানান মুরুব্বিরা।
মোনাজাতে বলা হয়- হে আল্লাহ! তুমি আমাদের ওপর রাজি হয়ে যাও, আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যাও। বেশি বেশি ভালো কাজের তওফিক দাও। এই ইজতেমাকে কবুল করো। এখানে যারা যেভাবে শ্রম দিয়েছেন, বিভিন্নভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন, তাদের প্রত্যেককে উত্তম প্রতিদান দাও। নবীর পথে আমাদের চলার তওফিক দাও। আমাদের দীনদারি নসিব করো, গোমরাহি থেকে বাঁচাও। সমগ্র মানবজাতির ওপর রহমত নাজিল করো। ইজতেমায় যারা অংশ নিলো, যারা খেদমত করলো, যারা দীনের দাওয়াত নিয়ে জামাতে বের হলো সবাইকে কবুল করো। পথের সব বাধা তুমি দূর করে দাও। ইজতেমাকে হেদায়েতের উসিলা বানাও।
ইজতেমাকে কেন্দ্র করে সবার জীবনকে আলোকিত করো। বিশ্বকে কোরআনের আলোয় আলোকিত করো। নবীর সুন্নত জিন্দা করে দাও। ইসলামের খেদমতকারী সকল প্রতিষ্ঠান, মাদরাসা, মসজিদ ও মারকাজসমূহকে হেফাজত করো। তাদের প্রয়োজন মেটানোর ব্যবস্থা করে দাও। ইসলাম ও মুসলমানদের হেফাজত করো। যারা ইসলাম ও মুসলমানকে শত্রুভাবে তাদের মনে ইসলামের জন্য ভালোবাসা পয়দা করে দাও। ধর্মের নামে কোনো অধর্মের ছায়া যেন আমাদের গ্রাস করতে না পারে, তা থেকে রক্ষা করো। যাবতীয় সন্ত্রাস থেকে বিশ্বকে রক্ষা করো। সবল যেন দুর্বলের ওপর অত্যাচার করতে না পারে সেই ব্যবস্থা করে দাও। আমাদের জন্য দীনের দাওয়াতকে সহজ করে দাও। সবার মাঝে দীনের সঠিক জ্ঞান ও বুঝ দান করো। আমাদের মনে শুদ্ধতা দান করো, নিয়তে একনিষ্ঠতা ও কাজে অটলতা দান করো। ইজতেমা থেকে ট্রেনযোগে ফেরার সময় ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে দু মসুল্লির মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও বেশ কয়েকজন মসু্ল্লিসহ পুলিশের এক কনস্টেবল মারা গেছেন।