দামুড়হুদার উজিরপুরে বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ প্রকল্প ও সেচ ব্যবস্থা অচল

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার উজিরপুর গ্রামে নিয়ম বহির্ভূতভাবে বিদ্যুত সংযোগ দেয়ায় গোটা গ্রামের বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ প্রকল্প ও দু হাজার বিঘা জমির সেচ ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়েছে। গ্রামবাসীরা এজন্য বিদ্যুত বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে দায়ী করেছে।

দামুড়হুদা ইউপি সদস্য আব্দুল খালেকসহ গ্রামবাসীদের অভিযোগ, উজিরপুর গ্রামে ১০০ কেভি পাউয়ার ট্রান্সফর্মার রয়েছে। ওই ট্রান্সফর্মারের আওতায় চারটি গভীর নলকূপ দীর্ঘদিন ধরে গ্রামটিতে সেচ অব্যাহত রাখার পাশাপাশি গ্রামবাসীর জন্য বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ প্রকল্প চালানো হয়ে থাকে। কিন্তু কেভির পাউয়ার না বাড়িয়েই পাঁচটি ২০ হর্সপাউয়ারের নলকূপে সংযোগ দেয়া হয়েছে। বাঁশের খুঁটিতে সংযোগ তার টানানো হয়েছে। নতুন নলকূপগুলো চালু করার পর পুরোনো গভীর নলকূপ ও পানি সরবরাহ পাম্প গত চারদিন ধরে বন্ধ হয়ে পড়েছে। গ্রামে পানির জন্য হাহাকার দেখা দিয়েছে।

গতকাল শনিবার বিকেলে দামুড়হুদার উজিরপুর গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, গ্রামবাসীরা পানির জন্য হাহাকার করছে। তারা ৩৫টি সাব লাইনের কোথাও গিয়ে পানি পাচ্ছে না। গ্রামে বিশুদ্ধ খাবার পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এই গ্রামে ৫৯০টি পরিবার শোধনাগারের পানিপান করে থাকে। এর বাইরে আরো শতাধিক পরিবার রয়েছে। তারাও ওই পানি সংগ্রহ করে পানিপান করে থাকে। উজিরপুর এলাকাটি শতকরা ৯০ ভাগ আর্সেনিক আক্রান্ত গ্রাম। ওই গ্রামে ৫ শতাধিক টিউবওয়েল রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৭টি টিউবওয়েল আর্সেনিকমুক্ত বলে শনাক্ত করা হয়েছে। আর্সেনিক কবলিত এই গ্রামটিতে আর্সেনিকমুক্ত পানির জন্য ২০০৪ সালে ইউনিসেফ’র সহযোগিতায় প্রায় ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে পানি শোধনাগার নির্মাণ করা হয়। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে প্রকল্পটি চালু হলেও মাঝে মাঝে সমস্যা সৃষ্টি হয়।

এদিকে উজিরপুরের ইয়ার আলী ছয় মাস আগে, তাইজেল হক ও ইকার উদ্দিন এক মাস আগে ও এনামুল হক দু বছর আগে বিদ্যুত সংযোগ নেন। এছাড়া, উজিরপুর গ্রামে আরো চারটি বিএডিসির সহযোগিতায় ডিপটিউবওয়েল এবং ২০টির মতো শ্যালো ডিপটিউবওয়েলের সাহায্যে জমিতে সেচের ব্যবস্থা করে থাকে গ্রামবাসীরা। এর মধ্যে ইয়ার আলী একটি বিদ্যুত সংযোগ নিয়ে মাঠে তিনটি ডিপটিউবওয়েলের সেচের ব্যবস্থা করেছেন। গ্রামবাসীরা এই সংযোগকে অবৈধ বলে দাবি করেছেন। একইভাবে এনামুল হক কয়েকটি পুকুর ও মাঠে সেচ কাজে পানি ব্যবহার করে থাকেন। বর্তমানে বোরো ধানচাষের ভরা মরসুম চলছে। এসময়ে মাঠে সেচকাজে পানি না পাওয়ায় কৃষকরা ধান আবাদে ক্ষতি সম্মুখিন হয়ে পড়েছেন।

পানি শোধনাগারের অপারেটর মো. খোকন জানান, গত ১৪ জানুয়ারি থেকে বিদ্যুত সমস্যার সৃষ্টি হওয়ায় পানি সরবরাহ করতে পারছেন না। এতে গ্রামের ৫৯০টি পরিবার বিশুদ্ধ খাবার পানি না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

উজিরপুর নিরাপদ পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, বিদ্যুত বিভাগের কর্মকর্তারা ট্রান্সফর্মার লাগানোর কথা বলে গ্রামের মানুষদের কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিলেও বিদ্যুত পোলে দীর্ঘদিনেও ট্রান্সফর্মার বসেনি। এর ফলে পানি শোধনাগারটির গ্রাহকরা যেমন পানি পাচ্ছে না তেমনি মাঠে চাষের জন্য বিদ্যুত না পাওয়ায় কৃষকরা ধান আবাদ করতে পারছেন না। ফলে গ্রামবাসীরা উভয় সঙ্কটে পড়েছেন। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

গ্রামবাসীদের দাবি অবিলম্বে নিয়মের বাইরে দেয়া সংযোগ বিচ্ছিন্নের পাশাপাশি কেভি বাড়াতে হবে। অন্যথায় তারা আন্দোলনের কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে। চুয়াডাঙ্গা ওয়েস্টজোন পাউয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসান আলী জানান, সঞ্চালন লাইনে ৩৩ হাজার কেভি বিদ্যুত সরবরাহের কথা থাকলেও বর্তমানে ২৬ হাজার কেভি বিদ্যুত সরবরাহ হচ্ছে। এর ফলে বিদ্যুত ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটছে। এছাড়া গ্রামবাসীদের অভিযোগ খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Leave a comment