স্টাফ রিপোর্টার: ওয়েস্ট জোন পাউয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) আওতাধীন ২১ জেলায় সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে ১০০ কোটি টাকার বিদ্যুত বিল বকেয়া রয়েছে। এরমধ্যে খুলনা ও বরিশাল সিটি করপোরেশনের কাছে ২৪ কোটি ৮ লাখ টাকা এবং ৩৪টি পৌরসভার কাছে বিদ্যুত বিল বকেয়া রয়েছে ৩১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। তবে গত বছর থেকে খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) কর্তৃপক্ষ কিস্তি করে বকেয়া বিদ্যুত বিল পরিশোধের উদ্যোগ নিলেও বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) এমন কোনো উদ্যোগ নেই। স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠান হওয়ার কারণে ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে আইনগত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র দাবি করেছে।
খুলনা ও বরিশাল বিভাগ এবং বৃহত্তর ফরিদপুরের ২১ জেলা নিয়ে গঠিত ওয়েস্ট জোন পাউয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো)। সূত্রমতে, কোম্পানির আওতাধীন সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর নিকট বর্তমানে মূল বকেয়া বিদ্যুত বিলের পরিমাণ ৯৬ কোটি ৫ লাখ ৫১ হাজার টাকা। এর সাথে সারচার্জ যুক্ত হলে বকেয়া বিদ্যুত বিলের পরিমাণ ১০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। তবে মোট বকেয়া বিদ্যুত বিলের সিংহভাগই হচ্ছে দুটি সিটি করপোরেশন ও ৩৪টি পৌরসভার কাছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি বিদ্যুত বিল বকেয়া রয়েছে বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) কাছে। এ সিটি কর্পোরেশনে মোট বকেয়া রয়েছে ১৩ কোটি ৯৭ লাখ টাকার ওপরে। এছাড়াও রয়েছে সারচার্জ।
বকেয়া বিদ্যুত বিলের তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি)। তবে বেশ কয়েক বছর ধরে কেসিসি থেকে বিদ্যুত বিল দেয়া না হলেও গত বছর থেকে প্রতি মাসে ২৫ লাখ টাকা হারে কিস্তি করে বিদ্যুত বিল পরিশোধ করা হচ্ছে। এতে কেসিসির বর্তমান বিদ্যুত বিলের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০ কোটি ১১ লাখ ১০ হাজার টাকা। অপরদিকে, খুলনা, যশোর, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, বরিশাল ও পটুয়াখালী সার্কেলের ৩৪টি পৌরসভার কাছে মোট বকেয়া বিদ্যুত বিলের পরিমাণ ৩১ কোটি ৮৬ লাখ ৬৪ হাজার টাকা।
ওজোপাডিকো সূত্র জানায়, স্থানীয় সরকার ও পল্লি উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে ৫৬ কোটি ৯৬ লাখ ২২ হাজার টাকা, পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে ১১ কোটি ৫৯ লাখ ৮৬ হাজার টাকা, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে ৬ কোটি ৩৮ লাখ ৩৭ হাজার টাকা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানের কাছে ৫ কোটি ২০ লাখ ৬৮ হাজার টাকা, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানের কাছে ২ কোটি ৫১ লাখ ৭৯ হাজার টাকা, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানের কাছে ২ কোটি ১৬ লাখ ৫৯ হাজার টাকা, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানের কাছে ১ কোটি ৭৯ লাখ ৭ হাজার টাকা, শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানের কাছে ১ কোটি ৬৯ লাখ ৩১ হাজার টাকা, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানের কাছে ১ কোটি ৫১ লাখ ৫৪ হাজার টাকা, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানের কাছে ১ কোটি ৩১ লাখ ৩০ হাজার টাকা, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানের কাছে ৭৪ লাখ ৭৪ হাজার, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানের কাছে ৬০ লাখ ৪৭ হাজার টাকা, কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানের কাছে ৪৫ লাখ ৪ হাজার টাকা, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানের কাছে ৪৪ লাখ ১৮ হাজার টাকা, সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানের কাছে ৪০ লাখ ৭৮ হাজার, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানের কাছে ৩৫ লাখ ২৯ হাজার টাকা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানের কাছে ৩২ লাখ ৯১ হাজার টাকা, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানের কাছে ৩১ লাখ ৩৬ হাজার টাকা, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানের কাছে ২৮ লাখ ৩৩ হাজার টাকা, মত্স্য ও পশু সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানের কাছে ২৮ লাখ ৬ হাজার টাকা, ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানের কাছে ২৫ লাখ ৯১ হাজার টাকা, তথ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানের কাছে ১৯ লাখ ৬৪ হাজার টাকা, খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানের কাছে ১৩ লাখ ৪৫ হাজার টাকা এবং সংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে ১১ লাখ ৫১ হাজার টাকা বিদ্যুত্ বিল বকেয়া রয়েছে।
সূত্র জানায়, বিদ্যুত বিল পরিশোধের বিষয়টি ক্রমান্বয়ে সহজ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ব্যাংকের পাশাপাশি মোবাইলফোনের মাধ্যমেও বিল পরিশোধের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। যার ফলে ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে মোবাইলফোনের মাধ্যমে বিল আদায় শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ওজোপাডিকোর ৪৮টি বিতরণ বিভাগের মধ্যে ৪০টিই এর আওতায় আনা হয়েছে।
ওজোপাডিকোর নির্বাহী পরিচালক (অর্থ) রতন কুমার দেবনাথ বলেন, প্রতি তিন মাস অন্তর বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে ওজোপাডিকো থেকে প্রতিবেদন পাঠানো হয়। ওই প্রতিবেদনের মাধ্যমে সরকারি, বে-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বকেয়া বিদ্যুত বিলের চিত্র তুলে ধরা হয়। সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বর মাসে এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবরে প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে।