চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রদল নেতা রাজীবসহ দুজন জীবননগরে গাড়ি ভাঙচুর মামলায় গ্রেফতার

মেহেরপুর ও ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু দুজন করে ৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ : অভিযোগ নাশকতার চেষ্টা

 

স্টাফ রিপোর্টার: জীবননগর থানা পুলিশ চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক তানভীর হোসেন রাজীব ও কর্মী তরিকুল ইসলাম বাবুকে গ্রেফতার করেছে। জীবননগরের অবরোধ চলাকালে গাড়ি ভাঙচুর মামলায় এদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে জীবননগর থানা পুলিশ। এছাড়া মেহেরপুরে দু বিএনপি কর্মী ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডুর দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার উথলী ইক্ষু ক্রয়কেন্দ্রের অদূরে দুটি ঢাকাগামী বাস, দুটি ট্রাক, একটি থ্রিহুইলার ও একটি অটোরিকশা ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। গতরাত সাড়ে ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। গতকাল শুক্রবার রাতে দর্শনা থেকে ছেড়ে যাওয়া ঢাকাগামী যাত্রীবাহী বাস সোনারতরী, এআর ট্রাভেল, দুটি ট্রাক, একটি থ্রিহুইলার ও একটি মিশুক ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। জীবননগর থানার ওসি হুমায়ূন কবির জানান, আমি ঘটনাটি শুনেছি। তবে ২০ দলীয় নেতাকর্মীরা এ ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মুহা. অহিদুল ইসলাম বিশ্বাস স্বাক্ষরিত এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার অন্যতম যুগ্মআহ্বায়ক তানভীর হোসেন রাজীব ও ছাত্রদলকর্মী তরিকুল ইসলাম বাবুকে পুলিশ মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় গ্রেফতার করেছে। এ গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানাচ্ছি। বিজ্ঞপ্তিতে তিনি বলেছেন, সারাদেশে কয়েক দিনে বর্তমান অবৈধ সরকারের পেটুয়া পুলিশ বাহিনী ২০ দলীয় জোটের বহু নেতাকর্মীকে হত্যা-গুমসহ হাজার হাজার নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করেছে। চুয়াডাঙ্গা ছাত্রদলের দুজনকে গ্রেফতার তারই অংশ। ছাত্রদলের নেতাকমীরা জেগে উঠেছে। ছাত্রদের গণআন্দোলনে রূপ নেয়ার ভয়ে ভীতু হয়ে বর্তমান এ সরকার ছাত্রদল নেতাদের ওপর দমন নিপীড়ন এবং মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করাচ্ছে। আমি এ গ্রেফতারের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। দেশের মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেয়ার জন্য ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য যে অবরোধ কর্মসূচি চলছে তা সর্বাত্মক পালনের অনুরোধ জানাচ্ছি।

এদিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক তানভীরের গ্রেফতারের প্রতিবাদ জানিয়ে যুক্ত বিবৃতি দিয়েছেন জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক শরিফ-উর-জামান সিজারসহ ১১ জন। বিবৃতিতে ছাত্রদলের গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানিয়ে বলা হয়েছে, এ ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজকে সাথে নিয়ে আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর করে তোলা হবে। অপরদিকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার অন্যতম যুগ্ম আহ্বায়ক তানভীর হোসেন রাজীব ও ছাত্রদলকর্মী তরিকুল ইসলাম বাবুকে গ্রেফতারের বিষয়ে জীবননগর থানা অফিসার ইনচার্জ হুমায়ূন কবিরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, গত বৃহস্পতিবার জীবননগরে অবরোধ চলাকালে তারা গাড়ি ভাঙচুর মামলা এজাহারভুক্ত আসামি। পুলিশ তাদেরকে গ্রেফতার করেছে।

মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, ২০ দলীয় জোটের লাগাতার অবরোধে নাশকতার আশঙ্কায় মেহেরপুর সদর উপজেলার দু বিএনপিকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃতরা হলেন- সদর উপজেলার আশরাফপুর গ্রামের রিফাত মণ্ডলের ছেলে লাল্টু হোসেন (২০) ও মোমিনপুর গ্রামের মৃত রফাতুল্লাহর ছেলে আব্দুল হান্নান (৬৫)। গত বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ পৃথক দুটি অভিযান চালিয়ে তাদের বাড়ি থেকে আটক করেন। সদর থানার ওসি আহসান হাবীব জানান, ২০ দলীয় জোটের ডাকা অনিদির্ষ্টকালের অবরোধের সময় নাশকতার আশঙ্কায় তাদের আটক করা হয়েছে। কার্যবিধির ১৫১ ধারায় আটক দেখিয়ে তাদের আদালতের মাধ্যমে মেহেরপুর জেলহাজতে প্রেরণ করা হবে।

হরিণাকুণ্ডু প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডুতে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা লাগাতার অবরোধের সমর্থনে গতকাল সন্ধ্যায় যুবদলকর্মীরা মিছিল করার উদ্দেশে আনিস অটোর সামনের সড়কে জড়ো হতে চেষ্টা করে। এ সময় ঘটনাস্থলে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মিছিল উদ্যত কর্মীরা দৌড়ে পালিয়ে গেলেও যুবদল নেতা হারুন এবং জামালকে পুলিশ গ্রেফতার করে বলে হরিণাকুণ্ডু থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই গুলফামুর রহমান জানান।

ইবি প্রতিনিধি জানিয়েছেন, অনির্দিষ্টকালের জন্য ডাকা অবরোধ সমর্থনে ২০ দলীয় জোটের বিক্ষোভ মিছিলে গুলি চালিয়েছে পুলিশ। অবরোধকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দিতে পুলিশ এক পর্যায়ে টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে। এতে দু শিবিরকর্মী গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ১০ জন ২০ দলীয় নেতাকর্মী আহত হয়েছে। গুলিবিদ্ধ শিবিরকর্মীরা হলেন- মুস্তাক আহমেদ ও মুস্তাফিজুর রহমান। গতকাল শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ও ক্যাম্পাস সংলগ্ন শেখপাড়া বাজারে এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুক্রবার সকালে ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে খুলনা-কুষ্টিয়া মহাসড়কে ও ক্যাম্পাস সংলগ্ন শেখপাড়া বাজারে অবরোধ সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। বিক্ষোভ মিছিলের একপর্যায়ে পুলিশ বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দিতে ফাঁকা গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এ সময় পুলিশের সাথে অবরোধকারীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। পরে পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করলে অবরোধকারীরা সেখান থেকে সটকে পড়ে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবির অবরোধ সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল বের করে।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবির সভাপতি মো. আসাদুল্লাহর নের্তত্বে মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক হয়ে খুলনা-কুষ্টিয়া মহাসড়কে এসে বিক্ষোভ শুরু করলে পুলিশ ফাকা গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এতে শিবিরকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পরে শিবিরকর্মীরা সংগঠিত হয়ে ক্যাম্পাস সংলগ্ন শেখপাড়া বাজারে বিক্ষোভ করে। এ সময় ছাত্রদলকর্মী ও স্থানীয় জামায়াত-বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা তাদের সাথে যোগ দেন। এ সময় অবরোধকারীদের সাথে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এ সময় অবরোধকারীরা মহাসড়কে টায়ারে অগ্নিসংযোগ করেন। পরে পুলিশ ফাঁকা গুলি, টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে অবরোধকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ ঘটনায় ২০ দলীয় জোটের অন্তত ১০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।

ইবি শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মো. আসাদুল্লাহ বলেন, পুলিশ ২০ দলীয় জোটের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিলে অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। এতে শিবিরের দু কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মহিবুল ইসলাম বলেন, খুলনা-কুষ্টিয়া মহাসড়কে যানচলাচল স্বাভাবিক করার জন্য অবরোধকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দিতে পুলিশ ৪ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ও ৫ রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছে।